ডিটারজেন্ট : শ্বাসরুদ্ধকর এক মিশন
বাংলা সাহিত্যে ফেলুদা, কাকাবাবু, মাসুদ রানা সিরিজ ব্যাপক জনপ্রিয় গোয়েন্দা কাহিনি। গোয়েন্দা কাহিনির একটা বিশেষ শ্রেণির পাঠক রয়েছে। উপন্যাসের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান তাদের ভালো লাগে। অনুসন্ধিৎসু মন খুঁজে বেড়ায় এমনই কিছু উপন্যাস। অ্যাডভাঞ্চারে আগ্রহী এমন পাঠকদের জন্য বিশেষ আবেদন তৈরি করার মতো একটি উপন্যাস ‘ডিটারজেন্ট’।
বলছি তরুণ নির্মাতা রেহমান রাহাতের `ডিটারজেন্ট` উপন্যাসের কথা। যেন প্রতিমুহূর্তে শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা। প্রকাশনা সংস্থা সাহিত্যদেশ থেকে প্রকাশিত গোয়েন্দা উপন্যাস এটি। রেহমান রাহাত এ সময়ের তরুণদের মধ্যে সম্ভাবনাময় লেখক। পাঠককে টেনে নিয়ে যায় তার উপন্যাসের বিভিন্ন ঘটনার গতিশীলতা।
রেহমান রাহাত একজন নির্মাতাও। স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণেও সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ডিটারজেন্ট পড়তে গিয়ে তারও আলামত লক্ষ্য করা যায়। চলচ্চিত্রের পাণ্ডুলিপির মতোই খণ্ড খণ্ড ঘটনার সমন্বয়ে পূর্ণাঙ্গ উপন্যাসটি আলোর মুখ দেখেছে। দৃশ্য ভাগ করার মতোই বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে ঘটনার পরম্পরা বিবৃত হয়েছে।
ডিটারজেন্টের মি. স্যাম, আকাশ, নাতাশা, রিম চরিত্রগুলো উজ্জ্বল প্রতিভার জ্বলন্ত উদাহরণ। উপন্যাসের ঘটনা সমসাময়িক। স্থান আমাদের আশেপাশের পরিচিত জায়গাগুলো। ঢাকা, গাজীপুর, সদরঘাট, হাতিরঝিল প্রভৃতি স্থানে ঘটে যায় ঘটনাগুলো। পাত্র-পাত্রী একেবারেই বর্তমান সময়ে উদ্ভুত সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট।
ডিটারজেন্ট একটি এজেন্সির নাম। বেসরকারি একটি এজেন্সি। তবে ভালোর জন্যই কাজ করেন তারা। সমাজের, মানুষের সর্বোপরি দেশের কল্যাণে কাজ করেন তারা। তাদের সঙ্গে বিরোধ মোসাদ, আইএসআইএস, পাকিস্তানি এজেন্সির।
মি. স্যাম এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র। তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কাজ করেন আকাশ। আকাশ একজন সংবাদকর্মী। ঘটনার পরম্পরায় যুক্ত হয় আরো অনেক চরিত্র। ঘটনার পর ঘটনা বাক নেয়, সমাধান খোঁজে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পাঠককেও টেনে নিয়ে যায় শেষ প্রান্তে। পাঠককে ধরে রাখার একটা মোহনীয় শক্তি রয়েছে রেহমান রাহাতের।
কাপড়ের ময়লা পরিষ্কারের জন্যে যেমন ডিটারজেন্ট প্রয়োজন, তেমনি সমাজের ময়লা পরিষ্কার করতে তৈরি হয় বিশেষ মিশনফোর্স; যার নাম দেয়া হয় ‘ডিটারজেন্ট’। এক মিশনে এই ফোর্সের সব এজেন্টরা মারা গেলেও বেঁচে থাকে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র স্যাম। এরপর শুরু হয় স্যামের নতুন যুদ্ধ। বছরের পর বছর সবার অগোচরে বেসরকারি গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করে স্যাম।
সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোসহ পাকিস্তান ইন্টেলিজেন্স ও মোসাদ খুঁজতে থাকে স্যামকে। সবার উদ্দেশ্য একটাই- স্যামকে আটকে ফেলা। এরই মধ্যে উত্থান হয় গল্পের প্রধান খলনায়কের। ষড়যন্ত্রের জালে আটকে যায় পরিবার, প্রেয়সী ও বন্ধু। দেশপ্রেম, ভালোবাসা, বন্ধুত্ব ও এসপিওনাজ জীবনের পূর্ণাঙ্গ স্বাদসহ প্রতিটা পাতায় রয়েছে স্নায়ুবিক টানটান উত্তেজনা।
চারু পিন্টুর নান্দনিক প্রচ্ছদে বইটির মূল্য রাখা হয়েছে মাত্র ১০০ টাকা। যা সহজেই সংগ্রহ করার মতো। মেকাপ-গেটাপ দারুণ নিঃসন্দেহে। তবে আরেকটু সচেতনতা রাহাতের শিল্পকর্মকে আরো ঝরঝরে করতে পারতো। কোনো কোনো বাক্য গঠনে আরেকটু যত্নবান হওয়া দরকার ছিলো। উপন্যাসের বানানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য। ঘটনার জটিল জায়গাগুলো পাঠকের জন্য বোধগম্য করে তোলা দরকার। ঘটনার ঘনঘটা যেন পাঠককে বিব্রত না করে। সেসব বিবেচনায় রেখে পরবর্তী গোয়েন্দা কাহিনির দিকে অগ্রসর হলে রেহমান রাহাত গোয়েন্দা উপন্যাসে আলোড়ন তুলবেন বলে আমার বিশ্বাস।
এসইউ/পিআর