শঙ্খচিল : সমৃদ্ধ শহীদ কাদরী সংখ্যা
প্রকাশিত হলো শিল্প-সাহিত্যের পত্রিকা ‘শঙ্খচিল’-এর শহীদ কাদরী সংখ্যা। প্রায় শতাধিক কবি, লেখক ও শিল্পীর লেখায় সমৃদ্ধ সংখ্যাটি পাওয়া যাচ্ছে একুশে বইমেলার লিটলম্যাগ চত্বরে।
সংখ্যাটিকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে স্মৃতিমেঘ, জলছায়া, আড্ডা, নিবেদিত কবিতা, দীর্ঘ কবিতা, সনেট, অনুগল্প এমন কিছু বিষয়ে কাদরীর কবিজীবনকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিকৃতি বিভাগে রয়েছে কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, মাসুক হেলাল, নাজিব তারেক, সোহেল প্রাণন, রাজীব দত্ত, সোহেল আশরাফ ও আলমগীর জুয়েলের আঁকা শহীদ কাদরীর প্রতিকৃতি।
৬টি কবিতার অনুবাদ করেছেন ফরিদা মজিদ, শওকত হোসেন ও সায়ীদ আবুবকর। সংগীত বিভাগে কবীর সুমন লিখেছেন তাঁর বিখ্যাত গান ‘তোমাকে অভিবাদন, প্রিয়তমা’র পেছনের গল্প। এ বিভাগে আরো রয়েছে মুয়ীয মাহফুজ ও তাজুল ইমামের লেখা।
সাক্ষাৎকার বিভাগে রয়েছে আদনান সৈয়দের নেয়া শহীদ কাদরীকে নিয়ে মাহমুদুল হকের স্মৃতিচারণ। এছাড়া তমিজ উদ্দীন লোদী, শামস আল মমীন ও শিখা আহমেদের নেয়া শহীদ কাদরীর দীর্ঘ সাক্ষাৎকার। শিখা আহমেদের নেয়া সাক্ষাৎকারে শহীদ কাদরী বলেছেন- ‘আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ১৯৭৮-এ দেশ ছেড়ে চলে আসা। মাতৃভূমি ছাড়তে নেই, মাতৃভূমি ত্যাগ করা আত্মহত্যার শামিল’।
চিত্রকথা বিভাগে নাসির আলী মামুনের লেখায় উঠে এসেছে আটলান্টিকের পাড়ে সমুদ্রের বিশালতা আর স্বেচ্ছানির্বাসনের ক্ষুদ্রতা। রয়েছে বিভিন্ন সময়ে তোলা রফিক আজাদ, সৈয়দ শামসুল হক ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে শহীদ কাদরীর কিছু আলোকচিত্র।
আল মাহমুদ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন, ‘শহীদ কাদরী সাহেব সুখী হতে চেয়েছিলেন’। জার্মানি থেকে শঙ্খচিলের জন্য হাতে লিখে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত জানিয়েছেন শহীদ কাদরীর সাথে তাঁর প্রথম ও শেষ দেখার স্মৃতিকথা। কবিপত্নী নীরা কাদরী লিখেছেন, ‘আগের জন্মে এমন পূণ্য না করলে একজন মানুষ শহীদ কাদরীকে পাওয়া যায় বলে আমার মনে হয় না’। এছাড়া কবির দুই ভ্রাতুষ্পুত্রী সাদাফ কাদরী ও সিমন কাদরী শহীদ কাদরীকে নিয়ে লিখেছেন আনন্দ ও বেদনার গল্প।
এছাড়া কবির ৮টি কবিতা নিয়ে এঁকেছেন সামছুল আলম আজাদ, নির্ঝর নৈঃশব্দ্য, রাজীব দত্ত, পার্থপ্রতিম দাশ, ফারাহ নাজমুন, অঞ্জয় কুমার, মেহেরুন সুমি ও মারুফ আদনান। কবিকে চিঠি লিখেছেন- হাফিজুর রহমান, আজাদ আলাউদ্দীন ও তরুণ কবি শ্বেতা শতাব্দী এষ। এছাড়া শহীদ কাদরীকে নিয়ে সংখ্যা প্রকাশের মতামত জানিয়ে তাঁর মৃত্যুর তিন মাস পূর্বে শঙ্খচিল থেকে পাঠানো চিঠিটি প্রকাশ করা হয়েছে ফ্ল্যাপে।
নিবেদিত কবিতা লিখেছেন- ময়ুখ চৌধুরী, হাফিজ রশিদ খান, আবু মকসুদ, ভাগ্যধন বড়ুয়া, মুজিব ইরম, ওবায়েদ আকাশ, মহিউদ্দীন মোহাম্মদ, পিয়াস মজিদ, মুহিত হাসান, সামশুদ্দোহা মিলন, ঐশানী দত্ত, কুমার দীপ, হানযালা হান, রবিউল আলম নবী, শঙ্খচুড় ইমাম, মন্দিরা এষ, নুসরাত নুসিন, মৃন্ময় চক্রবর্তী ও দয়াময় বন্দ্যোপাধ্যায়।
মূল্যায়ন বিভাগে এসেছে কিছু গুরুত্ববহ লেখা। লিখেছেন- কায়সার হক, বায়তুল্লাহ্ কাদেরী, অনু হোসেন, আহমাদ মোস্তফা কামাল, কাজী মহম্মদ আশরাফ, মুহম্মদ ইমদাদ, আঁখি সিদ্দিকা, নিপা জাহান, সজল আহমেদ, কিশোর ঘোষ, পলিয়ার ওয়াহিদ ও মঈন মুনতাসীর। এছাড়া কবির কবিতা অবলম্বনে অনুগল্প লিখেছেন- মুম রহমান, আফসানা বেগম, আনিফ রুবেদ, তৈমুর খান ও ইলিয়াস বাবর। কবির গল্প শিরোনামে কুলদা রায় এর একটি লেখা রাখা হয়েছে এ বিভাগে।
ক্ষুদে সম্পাদকীয়তে মাহফুজ পাঠক ও ইকবাল মাহফুজ সম্পাদকদ্বয় লিখেছেন- ‘কবি রিফাত চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় শহীদ কাদরীর চলে যাওয়ার তিন মাস পূর্বে কাজ শুরু করলেও ভাবনাটা ছিল আরো পুরনো। তাঁকে এ ক্ষুদ্র আয়োজনে কতটা তুলে আনতে সক্ষম হয়েছি, তা নিয়ে আমরা সন্দীহান। তাঁর বর্ণাঢ্য সাহিত্য ও বোহেমিয়ান জীবন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দ্বিধান্বিত হয়েছি বারবার। কাজের ক্ষেত্রে একরকম ইচ্ছে করেই এই দ্বিধাকে আপন করে নিয়েছি। সংখ্যাটি যোগাড়যন্ত করার ক্ষেত্রে কবিপত্নী নীরা কাদরী, লেখক-বন্ধু আদনান সৈয়দ, শিল্পী রাজীব দত্ত ও কবির ভ্রাতুষ্পুত্রী সাদাফ কাদরী বিশেষ সহযোগিতা করেছেন’।
সংখ্যাটি গবেষণা সহযোগী হতে পারে। ৩৫২ পৃষ্ঠার (পেপারব্যাক) সংখ্যাটির মূল্য রাখা হয়েছে ১৫০ টাকা। বিপ্লব সরকারের আঁকা তরুণ শহীদ কাদরীর প্রতিকৃতি অবলম্বনে প্রচ্ছদ করেছেন সব্যসাচী হাজরা।
শঙ্খচিল (শহীদ কাদরী সংখ্যা)
সংখ্যা ৪। বর্ষ ৫। জানুয়ারি ২০১৭
সম্পাদক : মাহফুজ পাঠক ও ইকবাল মাহফুজ
প্রচ্ছদ ও নামলিপি : সব্যসাচী হাজরা
প্রচ্ছদে ব্যবহৃত প্রতিকৃতি : বিপ্লব সরকার
অলংকরণ : মোস্তাফিজ কারিগর, রাজীব দত্ত, আলমগীর জুয়েল
শিল্পসজ্জা : ফারুক মুহাম্মদ
এসইউ/আরআইপি