‘অগ্নিকন্যা’ দীর্ঘ পড়াশুনা ও পরিশ্রমের ফসল : মোস্তফা কামাল
কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক মোস্তফা কামালের জন্মদিন ৩০ মে। তিনি ৯০টি গ্রন্থের রচয়িতা। সাংবাদিকতা পেশার ব্যস্ততার মধ্যে যাঁরা সৃষ্টিশীল কাজের ধারা বজায় রাখতে পেরেছেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মোস্তফা কামাল। প্রতিবছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তাঁর একাধিক বই প্রকাশিত হয়। তিনি ২৫ বছর ধরে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, সায়েন্স ফিকশন, টিভি নাটক এবং শিশু-কিশোর উপযোগী রচনার নিয়মিত লেখক। কলামিস্ট হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তাও রয়েছে তাঁর। ২০১৭ সালে বইমেলায় প্রকাশিত তাঁর ‘অগ্নিকন্যা’ একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। অন্যদিকে নানা ধরনের কিশোর উপন্যাস লিখে মোস্তফা কামাল ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছেন। এ ধরনের একটি গ্রন্থ ‘ডাকাতের কবলে ফটকুমামা’। মোস্তফা কামালের রঙ্গব্যঙ্গ সিরিজ বেশ জনপ্রিয়। প্রকাশিত হয়েছে ‘পাগলছাগল ও গাধাসমগ্র-৯’। আর সায়েন্স ফিকশন ‘বিমান রহস্য’ এবং ‘হাসির চার উপন্যাস’ সংকলনও দৃষ্টিনন্দন। এছাড়া কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছে ৬টি সায়েন্স ফিকশন ও ৫টি গোয়েন্দা উপন্যাসের সংকলন নিয়ে মোস্তফা কামালের আরো দুটি গ্রন্থ। মোস্তফা কামালের ‘জননী’ উপন্যাসটি ইতোমধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ২০১১ সালের তাঁর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস `জনক জননীর গল্প’ প্রকাশিত হয়। এসব গ্রন্থের আগেও তিনি ‘সিরিয়াস’ ধারার উপন্যাস রচনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। ‘বারুদ পোড়া সন্ধ্যা’(২০০৫), ‘হ্যালো কর্নেল’(২০১০) তার মধ্যে পাঠকের মনোযোগ আকৃষ্ট করেছে। এরপর তিনি লিখেছেন ‘জিনাত সুন্দরী ও মন্ত্রী কাহিনী’ (২০১২), ‘কবি ও একজন নর্তকী’(২০১৩) প্রভৃতি উপন্যাসের বাস্তবধর্মী কাহিনী। অন্যদিকে তাঁর সংকলনগ্রন্থ ‘সায়েন্স ফিকশন সমগ্র’, ‘চার জয়িতা’, ‘চার অপরূপা’ এবং গবেষণাগ্রন্থ ‘আসাদ থেকে গণঅভ্যুত্থান’(১৯৯৩) খ্যাতি অর্জন করেছে। মোস্তফা কামালের জীবন ও সাহিত্যকর্ম নিয়ে কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক মিল্টন বিশ্বাস সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন। সাক্ষাৎকারটি এখানে প্রকাশ করা হলো।
মিল্টন বিশ্বাস : ৯০টি গ্রন্থের রচয়িতা আপনি। এ বছর বইমেলায় কি কি বই এলো?
মোস্তফা কামাল : এবছর একুশে বইমেলায় আমার চারটি বই বেরিয়েছে। ইতিহাসভিত্তিক দীর্ঘ উপন্যাস ‘অগ্নিকন্যা’ প্রকাশ করেছে পার্ল পাবলিকেশন্স। অগ্নিকন্যা এর প্রতীকী নাম। এর সময়কাল ১৯৪৭ থেকে ৬৬। দেশভাগের জটিল অঙ্ক, কুটিল রাজনীতির প্যাচ, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র আর শোষিত পূর্ববাংলার বঞ্চিত হওয়ার নেপথ্য কাহিনী। প্রেমের উপন্যাস রূপবতী প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। কিশোর গোয়েন্দা উপন্যাস ‘প্রিন্স উইলিয়ামের আংটির খোঁজে’ প্রকাশ করেছে অনন্যা। রম্য বিষয়ক আরেকটি বই ‘কিছু হাসি কিছু রম্য’ প্রকাশ করেছে অনন্যা।
মিল্টন বিশ্বাস : অগ্নিকন্যা ইতোমধ্যেই বেশ সাড়া জাগিয়েছে। গ্রন্থটি রচনার পিছনের ইতিহাস বলবেন কি?
মোস্তফা কামাল : বড় কাজের পরিকল্পনা লেখালেখির শুরু থেকেই ছিল। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম। নিজেকে তৈরি করতে নানাধরনের লেখালেখি করেছি। সেই সঙ্গে প্রচুর পড়াশুনাও করতে হয়েছে। আমি নানা বিষয়ে পড়ার আগ্রহ আমার। রাজনীতি এবং ইতিহাস আমাকে বেশি টানে। আমি দেখলাম, দেশভাগ এবং তার পরবর্তী পেক্ষাপটের ওপর ভালো কোনো উপন্যাস নেই। যা আছে তা অসম্পূর্ণ। একই ঘটনা ঘটেছিল ‘জননী’ উপন্যাসটি লিখতে গিয়ে। ম্যাক্সিম গোর্কী, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শওকত ওসমান ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকজন লেখকের মা উপন্যাস পড়েছি। সবশেষ আনিসুল হকের মা পড়ে দেখলাম, বাঙালি মধ্যবিত্তের মা; তাঁর যে সংগ্রাম তা উঠে আসেনি। মায়ের চরিত্র চিত্রণে কোথায় যেন খুঁত ছিল। আমি জননী লিখলাম। ব্যাপকভাবে উপন্যাসটি পাঠকমহল গ্রহণ করলেন। কিন্তু আমি আরো বড় কিছু করতে চেয়েছি। জননীকে ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছি। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, দেশভাগ থেকে শুরু করব। আমি বই সংগ্রহ করা শুরু করলাম। নিয়মিত পড়াশুনা করতে থাকলাম। নিজের ভেতরে তা আত্মস্থ করেছি। এক পর্যায়ে ভেতরের তাগিদ থেকেই লেখাশুরু করি। এই ভেতরের তাগিদটা অনুভব না করা পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করেছি।
মিল্টন বিশ্বাস : একুশে বইমেলায় আসার আগে অগ্নিকন্যা ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। গ্রন্থাকারে প্রকাশের জন্য তারপর কি কি পরিবর্তন এনেছেন আখ্যানে।
মোস্তফা কামাল : ঈদ সংখ্যায় অগ্নিকন্যার অংশবিশেষ প্রকাশিত হয়েছিল। সময়টা ছিল ১৯৬২ থেকে ৬৬। বই আকারে প্রকাশের সময় প্রথম বৃহত্তর কলেবরে উপন্যাসটি লেখা হয়। শুরু হয় দেশভাগের নানা জটিল ও কুটিল রাজনীতির মারপ্যাচ থেকে। শুরু থেকে এভাবেই চিন্তা করেছিলাম। বাঙালির জীবনে ৪৭ এর দেশভাগ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তার চেয়েও বড় ঘটনা ৭১ এর স্বাধীনতা। আমার ভাবনায় ছিল উপন্যাসটি হবে দেশভাগ থেকে স্বাধীনতা। শুরু করে দেখি, শেষ করা যাচ্ছে না। বড় হয়ে যাচ্ছে। এবারে এতোবড় একটা উপন্যাস পড়তে গিয়ে পাঠক বিরক্ত হতে পারেন। তাই ভাবলাম ছয়দফায় এসে শেষ করি। পরে বাকিটা শেষ করবো। এই তো!
মিল্টন বিশ্বাস : এটি একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। এর আগে কটি উপন্যাসে ইতিহাস এসেছে। সেগুলো থেকে এর পার্থক্য কি?
মোস্তফা কামাল : ২০০৫ সালে ‘বারুদপোড়া সন্ধ্যা’ অনন্যা থেকে প্রকাশিত হয়। এ উপন্যাসটি একটি ইতিহাসিক ও রাজনৈতিক উপন্যাস। সেখানেও বাংলাদেশের অতীতকাল উঠে এসেছে। পরে মুক্তিযুদ্ধের ওপর আমার একটি উপন্যাস আছে ‘জনক জননীর গল্প’। উপন্যাসটি ২০১০ সালে সময় প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়। বইটি দেশের সেরা ১০টি মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাসের তালিকায় ছিল। যাহোক, সেই উপন্যাসেও স্বাভাবিকভাবেই ইতিহাস এবং রাজনীতির প্রসঙ্গ এসেছে। এটাই কী স্বাভাবিক নয়! তাছাড়া এরশাদের আমল নিয়ে আমার আরেকটি উপন্যাস জিনাত সুন্দরী ও মন্ত্রী কাহিনী। এটিও সময় থেকে প্রকাশিত হয়। ওই ঘটনাও এখন ইতিহাস!
মিল্টন বিশ্বাস : অগ্নিকন্যা এসময়ে রচনা করে পাঠককে কি বার্তা দিচ্ছেন?
মোস্তফা কামাল : একজন লেখকের দায়বদ্ধতা থেকে কাজটি আমি করেছি। নতুন প্রজন্ম সঠিক ইতিহাস জানে না। স্বৈরশাসক আমলে অনেক ভুল ইতিহাস তাদের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। নতুন প্রজন্ম তাতে বিভ্রান্ত হয়েছে। আমরা যদি অতীতের দিকে তাকাই আমরা কি দেখি? বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবকে কখনো কখনো ‘চরিত্রহীন’, ‘লম্পট’ তথা ‘ভিলেন’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। যদিও তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছিলেন। ব্রিটিশদের প্ররোচনায় সিরাজুদৌলাহর কাছের মানুষগুলোই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠল। সেই ইতিহাস আমরা কয়জনে জানি!
দেশভাগের নানা জটিল পরিস্থিতি থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, ৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আমাদের স্বাধীনতা। সেই ইতিহাস নতুন প্রজন্মেরর কাছে তুলে ধরা। ইতিহাস পড়ে হয়তো একভাবে মানুষ জানে। গল্প উপন্যাস পড়ে জানলে তা পাঠকের মনে দাগ কাটে। আমার লেখা পড়ে নতুন প্রজন্মের পাঠকেরা যদি কিছুটা শোধরাতে পারে তাহলে আমার লেখা সার্থক হবে বলে মনে করি।
মিল্টন বিশ্বাস : আপনার প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস নিয়ে কিছু বলুন।
মোস্তফা কামাল : আমার লেখা প্রথম উপন্যাস পাপের উত্তরাধিকার। ব্রিটিশ আমলে জমিদারদের প্রতাপ ছিল ব্যাপক। তারা ছিল সমাজের নিয়ন্ত্রণ। তাদের কথায় সমাজ উঠতো বসতো। সেই অবস্থান দেশভাগের পর পরই পাল্টেছে। কিন্তু কিছু পরিবার জমিদারি ভাব এখনো ধরে রেখেছে। তেমনি এক জমিদারের উপপত্নীর ছেলে বড় হয়ে জানতে পারে যে, সে জমিদারের পাপের সন্তান। ছেলের জন্য মা পাগল হয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়। এক পর্যায়ে ছেলে জানতে পারে সেই পাগলীই তার মা।
মিল্টন বিশ্বাস : আপনি দীর্ঘদিন সাহিত্য চর্চায় নিবেদিত। এর ভেতর ব্যাপক জনপ্রিয় গ্রন্থ সম্পর্কে আলাদা অনুভূতি কাজ করে। সেসম্পর্কে কিছু বলুন।
মোস্তফা কামাল : আমার সব বই-ই জনপ্রিয়। তবে লেখক হিসেবে আমাকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে দিয়েছে জননী। উপন্যাসটি সর্বমহলে সমাদৃত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৯০ টি বই প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে জননী আলাদা একটা অবস্থান তৈরি করেছে। সবাই এখন আমাকে জননীখ্যাত লেখক বলেন। আমার ধারণা, এখন হয়তো অগ্নিকন্যার কথাও বলবেন। অগ্নিকন্যা পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া ফেলবে বলে মনে করি।
মিল্টন বিশ্বাস : পেশাগত দিক থেকে আপনি একজন সাংবাদিক। আপনার লেখক জীবন নির্মাণে সেই পেশার কোনো ভূমিকা আছে কি? অথবা লেখক হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে দেশ কাল রাজনীতি আপনাকে নাড়া দিয়েছে কীভাবে?
মোস্তফা কামাল : আমি ছোটবেলা থেকেই ভাবতাম, আমি লেখালেখি করবো। আর পেশা হিসেবে বেছে নেবো, সাংবাদিকতা। যদিও কথাসাহিত্যিক শওকত আলী স্যারের কাছে পরামর্শ চেয়েছিলাম, লেখালেখি করতে হলে কোন পেশা বেছে নেয়া ভালো। উনি বলেছিলেন, শিক্ষকতা। কিন্তু আমার শিক্ষকতা পেশার চেয়ে সাংবাদিকতাই ভালো লাগতো। আমাকে বেশি টানতো। আমার ক্ষেত্রে আমি বলব, সাংবাদিকতা আমাকে লেখালেখির ক্ষেত্রে সাহায্যই করেছে।
আর দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালির ত্যাগ তিতিক্ষার বিষয়গুলো আমাকে নাড়া দেয়। মুক্তিযুদ্ধসহ ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে, এ বিষয়ে ভালো একটি গল্প উপন্যাস লিখতে পারলে যে প্রশান্তি পাই তা অন্য কোনো কাজে পাই না।
মিল্টন বিশ্বাস : গল্প-উপন্যাসের বিচিত্র ভাবনা আপনার লেখনিতে উঠে এসেছে। কখনও হাস্যরস, ব্যঙ্গ, কল্পবিজ্ঞান, সমাজ সংকট- নানা বৈচিত্র্য আছে আপনার লেখনিতে। লেখার সময় কোনো সংকটের মুখোমুখি হলে কীভাবে তা অতিক্রম করেন। সংকট বলতে লিখতে না পারা, কিংবা স্বৈরশাসকের কারণে সব কথা বলতে না পারার ব্যর্থতাকে বোঝাচ্ছি।
মোস্তফা কামাল : আমি সব সময়ই নিজেকে ভাঙি, আবার গড়ি। এক একই বিষয়ের ওপর লেখা ভালো লাগে না। লেখায় ভেরিয়েশন না থাকলে নিজের কাছেই খারাপ লাগে। নানা বিষয় নিয়ে ভাবি। বিষয় বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। যে কোনো সরকারের আমলেই কিছু প্রভাবশালী লোক থাকে। তারা ক্ষমতার দম্ভে ধরাকে সরাজ্ঞান করে। তাদের প্রতাপ অনেক সময় লেখালেখির প্রভাব পড়ে। তবে কলম বন্ধ করার শক্তি কারো নেই। আমি কখনোই অন্যায়ের কাছে নতিস্বীকার করিনি। বিদ্রুপাত্মক লেখা লিখতে গিয়ে আমাকে ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়তে হয়েছে। কিন্তু আমার কলম বন্ধ করতে পারেনি।
মিল্টন বিশ্বাস : আপনার দুঃখ-কষ্টের স্মৃতি সাহিত্য চর্চায় প্রভাব ফেলেছে কি? সেই বাস্তবতা নিয়ে লিখতে বসার অনুভূতি বলুন। কিংবা সুখের অনুভূতি?
মোস্তফা কামাল : শুধু নিজের নয়, সমাজের কিংবা দেশের অনেক দুঃখ কষ্ট বেদনা আমার লেখালেখিতে প্রভাব বিস্তার করেছে। আসলে সমাজের অনাচার অত্যাচারের ঘটনাগুলো আমার মাথায় চারদিক থেকে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। সেই চাপের কারণেই আমি হয়তো অনেক বেশি লিখতে পারি। সেই ঘটনাগুলো উঠে আসে আমার লেখনিতে। কখনো কলামে, আবার কখনো গল্প উপন্যাসে।
মিল্টন বিশ্বাস : আপনার সিরিয়াস উপন্যাস- এর বিষয়বস্তু কি কি? কেমন করে লিখলেন এসব কাহিনি।
মোস্তফা কামাল : আমার সিরিয়াস উপন্যাসের বিষয়বস্তু, মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজনীতি এবং জঙ্গিবাদের মতো ইস্যু। দেশের প্রগতিশীল রাজনীতি এবং মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির উত্থান বিষয়ে একটি উপন্যাস ‘বারুদপোড়া সন্ধ্যা। পাকিস্তান আফগানিস্তানে জঙ্গিবাদের উত্থান নিয়ে ‘হ্যালো কর্নেল’। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্নেল কিভাবে জঙ্গি উত্থানে সহায়তা করে তার অনুপুঙ্খ বিবরণ রয়েছে ওই উপন্যাসে। এরশাদের আমল নিয়ে লিখেছি ‘জিনাত সুন্দরী ও মন্ত্রীকাহিনী’। বাঙালি মধ্যবিত্তের মা, তার স্টাগল নিয়ে যে উপন্যাস লিখেছি তার নাম ‘জননী’। একইভাবে বাঙালি মধ্যবিত্তের এক অবলা নারীকে চিত্রায়ন করেছি যে উপন্যাসে সেটি হচ্ছে ‘পারমিতাকে শুধু বাঁচাতে চেয়েছি’। সবশেষে এবার বের হলো দেশভাগ ছয়দফা নিয়ে দীর্ঘ অবয়বে লেখা উপন্যাস অগ্নিকন্যা। এই উপন্যাসের মাধ্যমে আমি সময়কে ধরতে চেয়েছি। আমার ধারণা, আমি তাতে সফল হয়েছি।
মিল্টন বিশ্বাস : উপন্যাসের জন্য বিষয়ের বৈচিত্র্য খোঁজেন কি? বিষয় ও আঙ্গিক নিয়ে আপনার ভাবনার কথা বলুন।
মোস্তফা কামাল : নিশ্চয়ই বিষয় বৈচিত্র্য খুঁজি। আপনি দেখবেন, প্রতি বছরই আমি আলাদা বিষয় নিয়ে গল্প উপন্যাস লিখি। সায়েন্স ফিকশন, গোয়েন্দা উপন্যাস ও কিশোর উপন্যাস লিখি। হাসির এবং মজার বিষয় নিয়েও উপন্যাস লিখি। আবার সিরিয়াস কোনো বিষয় নিয়েও লিখি। ফলে আমি বলতে পারি, আমার লেখা একঘেয়ে কিংবা বৈচিত্র্যহীন এ কথা কেউ বলতে পারবেন না।
মিল্টন বিশ্বাস : সামাজিক-রাজনৈতিক উপন্যাস রচনায় আপনার কৃতিত্বের পরিচয় রয়েছে। ভালবাসারও। কোনটা ভাল লাগে?
মোস্তফা কামাল : সামাজিক, ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে উপন্যাস লিখতে বেশি ভালো লাগে। সময় যেমন বেশি লাগে। আবার বেশি মেধা খাটাতে হয়। বেশি বেশি পড়তে হয়। অগ্নিকন্যার প্রসঙ্গে আবারও বলি; এটি আমার দীর্ঘ দীর্ঘ পড়াশুনা ও পরিশ্রমের ফসল।
মিল্টন বিশ্বাস : সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে উপন্যাস লেখার পরিকল্পনা আছে কি? তাদের অধিকারের কথা যেহেতু আপনি কলামে তুলে ধরেন। কাহিনিতে রূপায়ণ করার পরিকল্পনা থাকলে বলুন।
মোস্তফা কামাল : অবশ্যই আছে। গত বছরই তো বের হলো, পারমিতাকে শুধু বাঁচাতে চেয়েছি। এটা তো এক অবলা নারীর গল্প। সত্য ঘটনা ও কল্পনার মিশেলে তৈরি হওয়া এক উপাখ্যান।
মিল্টন বিশ্বাস : সাহিত্য চর্চায় আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা বলুন?
মোস্তফা কামাল : আপাতত পরিকল্পনা অগ্নিকন্যা উপন্যাসটি শেষ করা। এর আরো দুটি খণ্ড হবে। তা শেষ করার পর নতুন কিছু নিয়ে ভাববো।
মিল্টন বিশ্বাস : এবারের বইমেলা নিয়ে কিছু বলুন।
মোস্তফা কামাল : প্রতিবার বইমেলা এলে আমার মন আনন্দে ভরা থাকে। এবার কোনো রকম সংকট নেই। রাজনৈতিক সংকটের কারণে অনেকবার বইমেলা হোঁচট খেয়েছে। এবার তার কোনো আশঙ্কা নেই। মেলা ভালো হবে; খুব ভালো হবে। এটাই প্রত্যাশা।
এইচআর/আরআইপি