উজ্জ্বল ব্যানার্জীর আঞ্চলিক কবিতা
মানুষ হতি নিহাপড়া নাগে না
তাবদ মানষি ছি ছি এত্তেছে
তাইজ্জব ব্যাপার!
বিচেলি কাটা ম্যাশিনি কছিমির এক হাত নেছে শুনেও
মানুষ আগোলে না,
এইবার বোঝো ব্যাবার কী জিনিস?
এট্টা মানষির সাতে ভ্যালো সম্পক্ক না।
হ্যাতো আছে তবু নেই নেই ভাব
এট্টা ফয়সা ফগেটতে বাইর এত্তি গেলি কইলজে ছিড়ে যায়।
এইবার বোঝো ঠেলা,
উগে বাড়ির ফাশের পইচোর কাছে শুনলাম
যে হাতখান কাইটে পইড়ে গেছে
ওইখান দিয়ে নাই সেদিনু মারে মাইরেছে হারামজাদা,
খ্যাড়া কবি গাইয়ে যে পালি বোল দেয় বাপমারে
তা মুহি আনা যায় না।
শুনিছি কছিম নাই বিএ ফেল!
হ্যাতো খানি নিহাপুড়া শিহে
এই যেদি হয় স্বভাব?
সেদিকতে তালের ছাবালই ভ্যালো!
দুই পা পড়া মারে যে পালি সেবা-যত্ন এত্তেছে
কোলে করে নিয়ে শ্যান এ্যারাচ্ছে
বাহ্যি- পিচ্ছাপ তো আছেই।
আসলে মানুষ হতি নিহাপড়া নাগে না
মানুষ হওয়া কম্মের ব্যাপার
কম্ম যেদি ভ্যালো হয়, ছাবাল মাইয়ে মানুষ হয়
আর কিচ্ছু নাগে না।
****
গুজব
আমাগে নুরালীর কতা শুনে সেদিন তাইজ্জব মাইরে গ্যালাম
কারেন্টের মতোন কনতে আইসে হত্তিক তলায় বইসে
সে যে কী গুল মাত্তি নাইগলো তা আর কওয়ার কতা না
মানষির মুহির কতা কাইড়ে নিয়ে জবাব দিয়া
ওর এট্টা খাইজলোত হইয়ে দাঁড়াইয়েছে
কতা কতি না চালিউ উপায় থাহে না, কতি হয়।
কতা কবানা বলে খামিজাতে পড়ে থাকলিউ বাঁচা নেই
কী আচানক ব্যাপার!
বাইচান যেদি কাশি নাইগে যায়
ও সেই নাইনিই আইগোবে।
সেদিন আইসেও টাটকা কতা কলে
পাল পাড়ার নগেনের বোর ক্যান্সার নাই
ঝিঙেদার কবিরাজের তদবির নিয়ে সাইরে গেছে
শুইনে আমি তো গাইছতে পড়িছি
কাইলও কলস কিনতি গিইলাম পাল পাড়ায়
দেইহে আলাম নগেনের বউ হাংসেলে শুয়ে কাতরাচ্ছে
এর মদ্দি হ্যাত বড় অসুখ সাইরে গেল কি এইরে?
ব্যাইনে বাজারেই নগেনের সাথে দেহা
জানালাম-
ও নগেনদা, বউদির অসুখ নাই ঝিঙেদার কবিরাজের তদবির নিয়ে সাইরে গেছে?
নগেনদা কলে, দাক্তার তো কবেই কইয়ে দেছে বড়জোর তিন মাস;
তা ফিরি তদবির আইনে দিলাম দেহা যাক কী হয়?
ও তালি সাইরে যায়নি
না, তয় তুমার বউদি খুব খুশি হইয়েছে আমার পরে
বুইজলে দাদা বিশ্বাস ছাড়া আর কিচ্ছু না
না হলি ওইহেনে অত নোক হয়?
তা তুমি যাইয়ে কী বুইজলে কওদিন এট্টু শুনি?
বুঝলাম-
নুগিগে নোগ সারুক আর না সারুক
ফহির আর বেশিদিন বাচপ্যান না।
****
ভয়
তহন দুপার নাইত
আমি আর আমাইগে ছোট কাহা কীত্তন শুনে ফিত্তিলাম
দুলাইতুলা শ্মশানতে
কাহা হেরি নিয়ে আগে আগে আমি তার ফাছে
মণ্ডলপাড়া, কামারপাড়া পার হইয়ে
হযরতগে কবরখানার ওইহেনে যেই আইছি
ওমনি উগে সাড়া গাছটা নইড়ে ওঠলে
কাহার তো অবস্তা খারাপ
কাপড় নষ্ট হয়ার জুগাড়
আমার কতা আর কি কব?
খালি হাত মানেই বুদ্দি সট।
দুই পা আইগোতিই গা ভওইরে... সে কী গোন্দো
কাহা কলে সেই সুমাই কইলাম কীত্তন ছাইড়ে যাইসনে
শ্যাষ হলি সোগগুলি একসাতে যাবানে-
পেত্নি খেইপে গেছে, এহন পাললি ঠ্যাহা।
বিপদ বুজেও সামনের দিক আইগোতি নাগলাম
আর মনে মনে ভাবতি নাগলাম-
নাত্তির বেলায় হাতে নাইট না থাকলি
সড়েলও পেত্নি সাইজে আসে!
পাদটীকা: যশোরের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা।
এসইউ/