পলিয়ার ওয়াহিদের আঞ্চলিক কবিতা
তিনজোড়া খুনসুটি
কিছু হলিই গরম জালোয় খই ফুটার মতোন
নানি নানারে কয়তো— ওরে অদৃষ্ট রে
নানা পানের বোঁটায় চুন নিয়ে
দাঁতে মাখাতি মাখাতি কতো— তেততেরি
দাদারে আমি দেহিনি এ জম্মে
দাদি গল্পে গল্পে কয়ছে—
তোর দাদা আমারে পায়জামা পড়ায় দিতো
আর আমি পায়জামা খুলেই দে দৌড়!
মা রেগে গেলে বাবাকে কয়—
তোমারে বিয়ে করে কিচ্ছুউ পালাম না!
বাবা ঘাড়ের উপর গামছা ঘুরোতি ঘুরোতি কচ্ছে—
তোরে বিয়ে করে ঘোড়ার ডিম কিচ্ছু অলো না।
এইসব ঠুনকো খুনসুটি শুনতি শুনতি—
আমরা কয় ভাই-বোন হাসতি হাসতি একে অন্যের গা’র উপর
ঢোল কলমির মতোন ঢুলে পড়ি!
****
ঢং
কলাম তো অতো ঢং করে নাতো
পালি আমারে নিয়ে পালাও
মরা ছাড়া আমার কোনো গতি নেই
যা করার শিগ্গিরি করো
আজ রাতেই ওরা বিয়ে কত্তি আশপে
তোমরা পুরুষরা না?
দূরে থাকলে শুদো পেম পেম করো
আর যেমনি সবকিছু ছাড়েখাড়ে আসি
ওমনি মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়
ভিতুর ডিম কোথাকার!
মনে রাকপা— পিরিত কত্তি হলি মুঙগুর
বুকে পাটায় এট্টু সস্তা সাহসও লাগে, বুজলে?
****
গুটি
চাড়া দিয়ে কাটা দুটো দাগ
ন্যাংটা ছেমড়াডার কচি তালু থেকে
মাটির মাদুরে ছড়িয়ে পড়ে চকরাবকরা মার্বেল
যেন গুটিগুলো এক একটা পৃথিবী
নিয়ে একা একা ঘোরে।
গুটিখেলা চলে
দান শেষ হলি
বুঝে নিতি হয় কীভাবে পৃথিবী আমাদের ঘোরায়!
যারা পারদর্শী তারা খেয়ে নেয় দান
বুঝা যায় না কোন গুটি যে কোন দিকে যায়!
তবু গুটি খেলা থামে না।
****
মলন
গরুগুলো গোল হয়ে ঘুরতেছে
মেইখুটি বরাবর
খুরের নিচে ফেলা হতেছে ধানের নাড়া
দবাতি দবাতি আলাদা হয় সোনা!
এভাবে সন্ধ্যে টানে আনে বেহান
এখন কলে ধান ঝাড়ে
গরুগুলো জাবর কাটতেছে
চাষের জমিগুলোন পানিতে থৈ থৈ কততেছে
কামলা মানুষগুলো রোদে বসে তেল মাখে
মাছি তাড়ায়
বেকার দেশ!
শহর কাজের খোঁজে ভনভন করে!
****
জন্মদিনে
মানশির জন্মদিনি কেক আর মোমবাতির আয়োজন দেখলি
আমার ইচ্ছে করে ঘোড়ার ডিম মোমবাতি হই না ক্যান?
এতো এতো বাতি!
তবু আঁধার কেন সাথী?
****
বাংলাদেশ
বাড়ি পাকা ইট আসতেছে
লোহা আর সিমেন্টের হাসাহাসি
বালুর গানবাজনা- মুখর উঠোন
বাবা কতেছে- ‘বিয়ে কততি হবেনে কিন্তুক!’
সেঁউড়িয়া গিলি খালি লালনের প্রেমিকারা
আমার মাথায় চাপে বসে
ভরাট নদীর পাশে পিপাষার বৃক্ষ বড় অতেছে
ক্যান জানি মহামানব হবার শিশুতোষ লোভে মরণ কাটতিছি
কাল রাততিরি একটা জাহাজে কনে যেন যাচ্ছি
একমাত্র আমিই
একা!
কিন্তু কেন ভয় কততেছে না
বাংলাদেশ তোমারে কত মানুষে ভালোবাসে
হাজারে হাজার প্রেমিক তোমার
কিন্তু চিরকাল তুমি শুধু একা একা!
পাদটীকা: যশোরের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা।
এসইউ/আরআইপি