ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

সীমান্ত হেলালের একগুচ্ছ কবিতা

প্রকাশিত: ০৯:৩৬ এএম, ১২ অক্টোবর ২০১৬

ভূমিসংক্রান্ত এলিজি

‘চরের জমিন পরের ধন, বড়লোক হইতে কতক্ষণ’

এখন আর আগের মতো জমিন দেখি না!
গোল্লাছুট, বৌছি, দাড়িয়াবান্দা আর ওপেন্টিবায়োস্কোপের জন্য যতটুকু ছিলো... ভূমিদস্যু আর দখলবাজদের দখলে চলে গেছে। ডোবা নালা, ফসলি জমিন, খাল-বিল, বোহেমিয়ান মাছের উঠোন... যতদূর চোখ যেতো আকাশের সীমানা ব্যতীত আর কিছু নয়। সবটুকু...

এখন আর জমিন নয় ফ্ল্যাটের বাহারি ইটই চোখে দেখি সূর্যাস্তের লাল আভার মতোন।

বহুদিন আমি আল দেখি না!
একসময় ফসলি জমির কাচ কাটতে কাটতে অসত চাষীদের ফুসফুসের পরিধি বৃদ্ধি হত। কখনো সখনো কাচ কাটা নিয়ে হয়ে যেত রক্তারক্তি! তবু আইনের গ্যারাকলে টিকে যেতো অসহায় চাষীর সর্বস্ব সীমানা।

আর এখন আইন করেই আল সরিয়ে তুলে দিচ্ছে কংক্রিটের প্রাচীর।  

বহুদিন আমি আকাশ দেখি না!
ফুলস্টপ কিংবা দাড়ির মতোন সামনে একেকটি বৃহৎ দেয়াল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। আজকাল আমাদের ছেলেমেয়েরা ভুলে গেছে ঘুঁড়ি ওড়ানো কিংবা দেয়াল টপকানোর দুরন্ত কারসাজি।

মূলত বাধ্য হয়ে বন্ধ হচ্ছে জমিচাষ, খেলাধুলা, কসরত। দুরন্ত ঘোড়ার চোখে নেমে আসে অনাকাঙ্ক্ষিত বিশ্রাম।

****

জীবনের কোরিওগ্রাফি

প্রিয়তমা...
তোমাকে দেয়া কমিটমেন্ট রক্ষা করা আমার কাছে অতটাই ডিফিকাল্ট হয়ে পড়েছে; যতটা লজ্জাবতি পাতার গায়ে হাত বুলিয়ে জাগিয়ে তোলার মতো। সময়ের ক্যামোফ্লাজে আমি দিনদিন এতটাই নির্মোহ হয়ে পড়ছি যে, দায়িত্ববোধ কিংবা দায়বদ্ধতা হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের কানাগলিতে...!

মৃত্যুর পূর্বেই অজস্রবার হয়ে যাচ্ছে জীবনের পোস্টমর্টেম। কাটা আর সেলাই করা বিদীর্ণ বুকে একেকটি স্বপ্ন- গুমড়ে কাঁদে অচলায়তন কোন ইশতেহার নিয়ে। ফ্রাঙ্কের ডায়েরি ও টলস্টয়ের কবিতার ব্যবচ্ছেদে বারবার ফিরে আসে কোন উর্বসী ও আর্টিমেসের উপাখ্যান।

হয়ত তুমি কাঁদতে পারো... ধুঁকতে পারো স্পর্শহীনতার কোন অসুখ নিয়ে। আমারও যে হৃদয়জুড়ে দারুণ আকাঙ্ক্ষার হ্রদ বয়ে গেছে অসংখ্য কালো রাতে...

শবযাত্রার আদিগন্ত বিশ্বাস নিয়ে বহুবার গিয়েছিলাম ক্যাসিনোতে। কাটায় কাটায় ভাগ্যের ব্ল্যাকহোলে বদলে গেছে জীবনের কোরিওগ্রাফি। এখন আমার কাছে মনে হয় জীবন একটা শোকবাহী অ্যাম্বুলেন্স।

বাহ্যত নিজের দুঃখের খবর নাই, সাইরেনে সাইরেন দুঃখ বিলাই...  

****

জেলেজীবন

বিষণ্ন বিড়ালের চোখে আলো জ্বেলে মাছ শিকারে যাবো।

সিদ্ধান্ত নিয়েছি...

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, চমকানো বিজলী, পিচ্ছিল পথ...
সবকিছু পায়ে মাড়িয়ে রূপোলি চাঁদের আলোয় সোনালি মাছ শিকারে আসলাম। অলি-গলি, রাস্তা-ঘাট আর বিবর্তিত নগরীর কুকুরের চোখে জেগে আছে আমার ক্রন্দনরত সময়। শুনশান নিবিড়তায় হাঁটতে হাঁটতে মনে হয় আমার পূর্বপুরুষ প্রসিদ্ধ জেলে ছিলেন। আর সেই জেলেপল্লী থেকে ভেসে আসা বাতাসে মিশে আছে মাছের আদিম ঘ্রাণ।

সবুজ ধানের আল অথবা সন্ধ্যালাগা জেলেপল্লীতে ফেলে এসেছি আমার উন্মত্ত শৈশব। তবু বেহিসেবি জেলেদের মতো সখের বেসাতী নিয়ে কখনো সখনো মাছ শিকারে যাই। সন্ধ্যাবাতি কিংবা বর্ষাতীর স্মৃতি আজো চোখে লেগে আছে। ফেলে আসা দিনগুলো বড্ড বেশি বেখাপ্পা মনে হয় এই পৌঢ় জীবনে।

রুটি-রুজি, উদ্বাস্তু-বাসস্থান অথবা হিসেব-নিকেশের সুচিবায়ু জীবনে গতি নিয়ে আসে সোনালি ডানার দুরন্ত ঘোড়ার মতোন। আত্মার স্বপ্নীল ঘোড়ার পিঠে উড়তে উড়তে আমার গলদেশে নাটাইয়ের সুতোয় টান লাগে। দুমড়েমুচড়ে ফিরে আসি বালিঝড়ের এই ঠিকানায়।

তখন মনে হয়...
আমার পূর্বপুরুষের দাম্ভিক রক্তপ্রবাহকে- জীবন কি কখনো ক্ষমা করেছে...!

এসইউ/এবিএস

আরও পড়ুন