মুহম্মদ আবু বকরের চারটি কবিতা

ধ্বংসস্তূপের
ধ্বংসস্তূপের, বিশেষত কংক্রিটের ভগ্নাবশেষের
একটা দৃশ্যগত সৌন্দর্য আছে
তাই আমরা পৃথিবীবাসী—
বারম্বার ফিলিস্তিনের গুঁড়িয়ে যাওয়া বাড়ির কাঠামো
আর মসজিদের গম্বুজগুলোর এস্থেটিক ভিজুয়াল-প্লেজিং ভিডিওগুলো দুচোখ ভরে দেখে
আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকি শহরের আরেকটা অংশ হামলায় ভেঙে পড়ার জন্য।
****
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
হাজার বছর ধরে
সমস্ত হাটবারকে এক মনে হয়। যে কোনো জায়গায় যাই দেখে আলু পেঁয়াজ জিলিপির তাগাড়ি কোলাহল আর ধুলোর গন্ধ নিয়ে সপ্তাহান্তে হাট বসেছে। আবহ সংগীতের মতো বাজারের কোনো কোণা থেকে মলম বিক্রেতার বক্সের চাপা শব্দ পাওয়া যায়... শরীফ কোম্পানির একটি মলম হাতে দিয়ে আমি আপনাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারি... মাত্র বিশ টাকা বিশ টাকা বিশ টাকা... ট্রেড মার্ক তারা দেখে খরিদ করবেন নচেৎ প্রতারিত হবেন।
মনে হয়, এই একই হাটটাকে আমি ছোটকাল থেকে দেখে আসছি। এই একই জিলিপিওয়ালা এই একই শামিয়ানার তলে বসে... এই একই চায়ের দোকানে ভিড়... এই একই পাগলা মলম চায়না প্লাস মলম এই একই শারমিন মলমের ক্যানভাস নিয়ে এই একই হাটটা যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বসে আসছে, এই একটা মাত্র হাটবারই আমাদের জন্মেরও আগে থেকে হাজার বছর ধরে স্থানে স্থানে সরকারি সচেতনতামূলক ভিডিও দেখানোর মত প্রদর্শিত হয়ে আসছে।
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
****
বিষ্ণুপুর ঘরানা
দীর্ঘ ঘোড়যাত্রার পর দেখা গেছে ভগ্ন প্রাসাদের প্রত্নতত্ত্ব। নৃত্যের মুদ্রা। মন্দিরের গায়ে ন বিদ্যা সঙ্গীতাৎ পরাঃ। বত্রিশজন শিষ্য বাহিত হয়ে চলছে বাহাদুর খাঁর পালকি। মল্লভূম নাকি শুণ্ডী। শোনা যায় শুণ্ডীর রাজা সংগীতের মস্ত সমঝদার। তার জন্য আছে দরবারি কানাড়া। আছে পাখোয়াজ তানপুরা আর দরবার জমে ওঠার আগে দীর্ঘ আলাপ। বিষ্ণুপুর। মনে পড়ে দুর্গেশনন্দিনী, মহম্মদ বিন কাসিমের ফাঁসির আদেশ বাতিলের চিঠি নিয়ে ছুটে চলেছে বার্তাবাহক। দূরে পড়ে আছে সুরকির লালচে গম্বুজ, মীড়ের খিলান। মধ্যযুগ। তার থেকে ভেসে আসছে সেতার সরোদ তবলা কণ্ঠের ভক্তি। আর তা শুনতে শুনতে ঘাড় হেলে আরও মিষ্টি মিষ্টি হয়ে আসে এক তুর্কী মেয়ে। নাম সেইয়েদা। আমাদের খামখেয়ালি হৃদয়ে তবু ভুলে যেতে পারি না সব বাঁধা, একটুখানি মুসলমানি লজ্জা আর একটুখানি বাঙালি আবেগ মিশে তৈরি হয় প্রেমের এক নতুন ঘরানা।
বিজ্ঞাপন
****
গ্রামগঞ্জের
গ্রামগঞ্জের হাট-বাজারে যারা সালসা আর বনাজি ওষুধ নিয়ে আসে, অথবা অষ্টধাতুর বাতের আংটি বেচতে আসে, তাদের কখনো আমরা কেউ চিনি না, তারা কোথায় কোন দূর থেকে যেন আসে। তারা কখনো আমাদের পরিচিত কারও আত্মীয় হয়ে যায় না। এই জগতে যেন তাদের জন্ম হয়নি। তারা কখন আসে আর কখন তাদের গাঁটরি গুছিয়ে চলে যায়; সেই সময়টুকু কখনো চোখে পড়ে না আমাদের।
মন চায় একদিন নাছোড়বান্দার মতো বসে থাকি: কখন সে তার শেকড়বাকড় ছালাপত্র গুছিয়ে রওনা দেয়, তার পেছন পেছন গিয়ে দেখবো সে কোথায় যায়! কেমন যেন মনে হয় কিছুদূর পেছন গিয়ে তাকে আর পাবো না, সে জাদুর মতো উধাও হয়ে যাবে। তারপর আবার হঠাৎ একদিন অন্য কোনো বাজারের বটতলায় তাকে দেখা যাবে। তার কোন অলীক, পরির জায়গা থেকে এসে সেই কোন আমলের রং জ্বলে যাওয়া ঢোলা কোটটা গায়ে লখিন্দরকে যে সাপে কেটে পরবর্তীতে তা গাছের শেকড় হয়ে গিয়েছিল; সেই লখিন্দরি-শেকড় দিয়ে তাবিজ বানিয়ে বিক্রি করছে।
বিজ্ঞাপন
এসইউ/জিকেএস
আরও পড়ুন
বিজ্ঞাপন