ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

আরফান হোসাইন রাফির পাঁচটি কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:২৯ পিএম, ২০ মার্চ ২০২৫

পরিচর্যা ইউনিট

এমন দিন কেন আসলো, অপর্ণা?
টগর চোখে বানিয়ে নিয়েছো বিষণ্নতার পুষ্করিণী।
এমন তো চাইনি কখনো, কোনোদিন—
ইদানীং চোখে মাখছো আঙ্গারের কালি।
মনে আছে তোমার?
সেবার আমরা একসাথে আঙুল পুড়িয়েছিলাম
কেরোসিনের ছোট ডিবে?
চোখ ফিরিয়ে দেখো,
দিয়াশলাইয়ের সেই কাঠিগুলোর কিছু অংশ
এখনো জীবন্ত!
বয়স কেবল একুশ পেরোলো,
কীসের অভাব তোমার?
বুকের ভেতর কোন বিয়োগের শোক!
চলো, মিটিয়ে দিই তোমার কেরোসিনের অভাব;
মাথা রাখো,
পেতে দিই আমার তরতাজা বুক।
এসব সর্বসাধারণের বিছানা ছেড়ে মাথা রাখো,
এটাই তোমার একমাত্র নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট।

*****

নিঃশ্বাসের কবরস্থান

লণ্ঠন জ্বালানো ঘুমন্ত স্টেশন পেরিয়ে
আমি জেনেছি—আমার ঠিকানা নেই।
জীবনের চাকচিক্য ভুলে থাকতে তাই
হয়ে উঠেছি অতি উন্নত অভিনেতা।
যাকে-তাকে দেখলেই এখন
দীর্ঘ হয় কপালের ভাঁজ
সময়ের তাগিদে
হাতের ঘড়ি দেখার সময় মেলে না,
তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সারাক্ষণ পলকহীন তাকিয়ে থাকে
পশ্চিমের দিকে—
অতঃপর
বেলা শেষে ক্লান্ত হলে মন,
দমফাটা প্রেমের মজমা থেকে পালিয়ে
আমি খুঁজে বেড়াই তারে—
যার বাহুডোরে খোঁড়া হয়েছে
আমার নিঃশ্বাসের কবরস্থান।

*****

এক বৃষ্টির বিকেলে

পরপর কয়েকটি বসন্ত চলে গেল
আমাদের বারান্দায় আসা হলো না
যত্নের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে শখের ফুলগাছ
একটি ফুলের নাম যদি দুঃখ হয়
হলুদ তাবুর সংসারে
আমি বর্ষা হতেও রাজি আছি
আমি মূলত দুঃখবাদী
প্রেমের সংলাপে আমি কাঁচের থালা
অথবা হেলাল হাফিজের দুঃখের শ্লোক
তোমাকে সুখী করতে আমি নিয়েছিলাম
একগুচ্ছ রোমান্টিক কবিতার সবক
ততদিনে বর্ষা চলে এলো
আমাদের আর বারান্দায় আসা হলো না
এক বৃষ্টির বিকেলে তুমি এসে
বারান্দার গ্রিলে
এলিয়ে দিয়ে সাফি জলের শরীর
আমার নাম ধরে ডাকলে
আমি এড়িয়ে যেতাম কী করে?

*****

ইলেকট্রনিক বগি

বুকের ওপর রেললাইন;
তুমি নির্ভয়ে
এগিয়ে নাও
ইলেকট্রনিক বগি—

*****

দাঁড়িয়ে থেকো

শহরের সোডিয়ামগুলোর বয়স বেড়েছে।
রাত গভীর হলেই ঝিমিয়ে পড়ে হলদে রঙের চোখগুলো।
সেই ফাঁকফোকরে
অপরিচিত লোক ঢুকে পড়ে মহল্লায়।
ঘেউ-ঘেউ শব্দ করে কুকুর ডাকে।
মসজিদের মাইকে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ ভাসার আগেই আবার হারিয়ে যায় অন্ধকারে।
এ ঘটনা আজকের নয়—
বেদনার বুকে শিউলি ঝরা রোজ রাতে।
হয়তো মানুষ নয়,
ভূত-পেত্নীর মতো হেঁটে যায় এক কঙ্কাল।
অনেকেরই ঘুম ভেঙে যায়,
কেউ কখনো ছায়াটুকু দেখেনি তার।
যার দেখার কথা—
বোধশক্তিহীন জম্বির মতো ঘুমিয়ে আছে সে!
তাই অবিশ্রান্ত চলতে থাকুক এসব ভৌতিক কাণ্ড।
কোনো ঘেউ-ঘেউ মধ্যরজনীতে
ঘুম ভেঙে গেলে বারান্দায় এসো।
ইতিবৃত্তের প্রাচীর ভেদ করে আমি হয়তো আসব না।
নিয়মিত কুকুর ডাকা মধ্যরাতে
চোরের মতো কেউ হেঁটে গেলে—
দাঁড়িয়ে থেকো।

এসইউ/জিকেএস

আরও পড়ুন