দুলাল সরকারের পাঁচটি কবিতা
দরিদ্র বালকের কতা
আমি সেই দরিদ্র বালক-বালিকার
কতা কই—ধানকাডা হেমন্ত চকের মইধ্যে
ইঁদুরের লুকিয়ে রাহা ধানছড়া খুঁজে খুঁজে
হবার কতা কই—শরীল সম্পর্কে আজো
সচেতন হয়নি সেই কিশোরীর স্বপ্নের
কতা কই—আত, পায় মাডি ভরা ইঁদুরের
চুরি করা ঢোকানো গর্তে আতের কতা
ধানভরা ধামার কতা—সাম্যবাদ
প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আত ও মেধার যৌথ
প্রয়োগের কতা কই—
****
বিমূর্ত সুন্দর
নিশ্বাস বন্ধ করে শুয়ে আছো—
বীণাটি তোমার পাশে, ঝুঁকে চিরকাল
নশ্বর দৃষ্টির বাহিরে পথের আবেগ চুষে
অবিকল—মৃত্যুর মতো, হাত দুটি
দুদিকে ছড়ানো; কী অতল অভিমানে
পৃথিবীর থেকে ফিরিয়ে চোখ
বিবর্ণ নক্ষত্রের দিকে অপলক
কী দেখছো অসীম আলোর ওপাড়ে
চৈতন্য সত্তার কাছে সমর্পিত
গন্তব্য কল্পনা—বিমূর্ত সুন্দর?
****
মুখ
মুখটা সরাও বন্ধুু, দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে, গলগলে মিথ্যার প্রশ্রয়ে পার্থক্য নেই নর্দমার সাথে, উগরে দিচ্ছে বিষ; অথচ মানুষ আজ মুক্তি চায় মিথ্যার চাষাবাদ থেকে, উৎস মুখ যে বিভ্রান্তি ছড়ায়, কথা প্রকাশের কূট কৌশল আর অতিকথন দোষে দূষিত আজ ওষধি মানুষ, সম্ভাবনাময় পবিত্র তুমি, অথচ মুখের কী অপব্যবহার দেখ! মুখ্য পায়ূপথ—ঝগড়ায় পঞ্চমুখ।
কী দেবে আর? গান ও চুম্বনের পবিত্র
অনুভূতির উৎসস্থল আজ ইহজাগতিকতার
নামে ছড়ায় বিষ, সস্তা ভাবালু দৃষ্টি
মানুষকে মূর্খ বানাতে যথেষ্ট; ছড়াতে
বিদ্বেষ, বিষ, ব্যবহৃত যে মুখ
অপব্যবহারে নষ্ট করোনা প্রকৃতির
মহৎ সৃষ্টি; ও মুখে লুকানো আজ বিষ, অথচ অভ্যস্ত ছিল গাইতে যে গান, একদিন বলতো যে ভালোবাসার মত মহৎ কবিতা, উচ্চারিত হতো প্রথম প্রণব নাদ—বলত যে সুন্দর, শুধু গানের জন্যই ছিল যে প্রস্তুত, অপমৃত্যু অপঘাত তার আজ—অথচ কী সুন্দর, সুডৌল ছিল ও মুখ!
****
মোরা ক’জন মুক্তিযোদ্ধা
আমরা ক’জন মুক্তিযোদ্ধা
রক্তবীজের বংশধর—
রণাঙ্গনে ছিলাম মোরা
উষ্ণ রক্তস্বর;
জীবন ছিল হাতের মুঠায়
যুদ্ধ জয়ের অঙ্গীকার—
ভাঙতে শেকল মায়ের পায়ের
যুদ্ধ জয়ে নিরন্তর;
প্রিয়ার কপোল ছুঁয়ে দিয়ে
স্বাধীন দেশের আঙিনার
রাঙিয়ে দিয়ে রক্ত আঁচল
মিলন মোগো প্রতিকার;
মুক্তদেশের মানুষ হবো
বাসবো ভালো সবাইরে
তা না হলে ব্যর্থ যে হয়
যুদ্ধে যাওয়া প্রতিজ্ঞার।
****
এমনই চেয়েছিলাম
এমনই চেয়েছিলাম মনে মনে ভাঁজ করা
ছিল যে নীল আলোকিত সৌম্য আকাশ
তা অবারিত হলো আজ; প্রস্ফুটিত নক্ষত্রেরা ফুটে মুছে দিলো রাত্রির কান্নার
আওয়াজ—হতদরিদ্র মানুষের মুক্তির
কথা ভেবে যে শপথ নিয়েছিলাম তা
প্রাপ্তির আশায় দুলে ওঠে আজ সবুজ ভোরে—স্তব্ধতা ভুলে নদীর ঠোঁটে
ঠোঁট রেখে ওর মতো হাঁটতে শুরু করেছিলাম সুদূরের পানে—ভেঙে পড়া শম্পার কাঁধে হাত রেখে বলেছিলাম এবার তোমার কোল আলো করে আসবে একজন কেউ, যার অপেক্ষায় ছিলে এতদিন তুমি, বন্ধ্যাত্ব ঘুঁচবে তোমার।
এসইউ/জেআইএম