আয়েশা সিদ্দিকার দুটি কবিতা
ছুটির দিনের গল্প
ধূসর আলোর বৃষ্টিমুখর একটি সকালে
একান্তে নিভৃতে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে
সারা সপ্তাহের জমে থাকা উল্লেখযোগ্য
ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনায়,
কথায় কথায় অভিমান কমে যায়।
চিনি ছাড়া কড়া লিকারের তেতো স্বাদের চায়ে
কেটে যায় ক্ষণিকের ক্লান্তি।
আর চোখের দিকে তাকিয়ে
একটু হাসলে রাগও মিটে যায়।
বৃষ্টি শেষে একটু একটু রোদেলা আবহাওয়ায়
কথারাও ফুরিয়ে এসেছে প্রায়।
তারপর! আমি ব্যস্ত হয়ে যাবো গাছগুলোর
আগাছা পরিষ্কার করতে বারান্দায়,
তারপর রান্নাবান্নায়।
আর তুমি, ব্যস্ত হয়ে যাবে তোমার ব্যক্তিগত বইঘরে।
বুকশেলফে পুরোনো বইগুলো পেছনে রেখে,
এ সপ্তাহে কেনা নতুন বইগুলো সামনে রাখতে।
প্রতি বৃহস্পতিবার অফিস থেকে ফেরার সময়
পাতা মেহেদি নিয়ে আসতে,
তোমার কখনোই ভুল হয় না।
পাতা মেহেদির সুগন্ধ আমার ভীষণ ভীষণ পছন্দ।
আর তুমি! আমার চুল নিয়ে বড্ড উদ্বিগ্ন,
সপ্তাহে একদিন যেন চুলে মেথি আর মেহেদি লাগাতেই হবে।
বিকেলে? তোমার ফ্রিজে রাখা চিনি ছাড়া
রাবড়ি পায়েস খুবই প্রিয়,
প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে
রাবড়ি বানাতে ভুল হয় না আমার।
একসাথে মধ্যাহ্নভোজ সেরে
পায়েসের আমেজ শেষ দুপুরে।
সন্ধ্যা নামার আগে আগে একত্রে দুজনে
জলের ধারে বসে গোধূলি দেখবো নির্জনে।
পুকুর পাড় হলেও অসুবিধা নেই।
****
সে ছিল
সে আমার বেসুরো স্বরের গান ছিল
আমার কবিতার প্রাণ ছিল
সকালের স্নিগ্ধ রোদ ছিল
সে আমার হাতের মেহেদির
লাল টুকটুকে রং ছিল
আর পূর্ণিমা রাতের জোছনা
অমাবস্যার রাতের বিষণ্ণতাও বটে।
সে ছিল শিশিরের ওপর সূর্যের আলোর মতো জ্বলজ্বলে
আর শিলাবৃষ্টির শিলার মতো টলটলে।
আচ্ছা, সে কি সেই শিলা ছুঁয়ে দেখেছিল কখনো?
সে কি নিজের মন ছুঁয়েছে কখনো?
চেষ্টা করেছিল কি কখনো আমার মন ছুঁতে?
আমার হৃদয়ের অব্যক্ত আর্তনাদ...
একদা আমি সেই শিলা ছুঁয়েছি,
স্নিগ্ধ শীতল, কিছুক্ষণেই মিলে যায়
ছুঁয়ে তাকে স্মরণ করেছি।
সে কিছুক্ষণেই মিলে না গেলেও
সে স্নিগ্ধ শীতল নিষ্পাপ সুন্দর।
এ আমার মনের বায়না।
সে ডায়েরির পাতার আক্ষেপ ছিল
আর নির্ঘুমতায় গভীর ভাবনা।
সবই আমার মনে তার অবস্থান ছিল
এ অবস্থান আকাশের বিশালতাকেও হার মানাবে
আসলে সে ছিল একটা ভয়ংকর ভ্রম
মরীচিকাও বলা চলে।
আমায় অন্ধকারে ডেকে নিয়ে যাওয়া আলোকিত ছায়া
আর আমার কল্পনার অক্লান্ত মায়া।
কবি: লোকপ্রশাসন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
এসইউ/এএসএম