ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

গোলাম রববানীর কবিতা

আয়নাঘর তুমি এমন কেন এবং অন্যান্য

সাহিত্য ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:৩৪ পিএম, ২১ আগস্ট ২০২৪

আয়নাঘর তুমি এমন কেন?

জুলাইয়ের এই ক্ষতের কুশীলব নিদারুণ নিষ্ঠুর
এজন্য বড় করুণা হয়; আমি কবো কার কাছে?
বড় দুঃখ লাগে কারো ঠোঁটের বেফাঁস কথার সুরে
জিহ্বা ছিঁড়ে না এখনো এজন্য আরও বড় দুঃখ লাগে
আমার কথা কবর হয়; স্বদেশ বুলেটবিদ্ধ লাশে
থরে থরে সাজানো চেতনা লাল-সবুজ পতাকা কাঁদে
এজন্য বড় দুঃখ লাগে, কলিজা ছিঁড়ে যন্ত্রণা করে
আমার যন্ত্রণা আমার লাশের নব্য ইতিহাস হাসে

সমস্ত বাঙালি হত্যা হলো; কান্নার বাঙালি কই পাবে
নির্বাক পাথর চাপায় ক্রোধের দেশচোখ খুলে
তাকিয়ে আছে লোকান্তরের শেষ ঠিকানার কোঠা থেকে
আমি পথের পাগল হবো, পথের ধুলোয় মিশে যাবো
কেউ কোথাও নেই, কেউ কোথাও নেই
পাগলের সুখ মনে মনে, মনের অজান্তে কবিতা লিখে যাবো
জ্ব্যান্ত কাব্য চলে না এখানে, মৃত কবিতায় বলে যাবো
কাপুরুষের মতো কফিনে পেরেক ঠোকাব আমি
চেতনার চৈতার বউ রঙিলা, বিবেক আবদ্ধ করে দিয়ে

গুপ্তচর বালুর গহীনে আইন তলিয়ে যাবে
সাগরের ভয়ংকর গুপ্তস্থলে সুশাসনের তরী ডুবিয়ে নেবে
চকচকে আলো ব্যামো মিলনায়তনে স্বপ্ন ও সত্যের সম্ভাষণ হবে
জনগণ পৃথিবী গ্রহের থেকে অন্য গ্রহে কোথাও হারাবে
দর্শক-শ্রোতারাও অসুরের শরণাপন্ন হবে
অ্যাসেম্বলি কোর্ট ধর্মাশ্রয়ী ধর্মশালা ঝরাপাতায় লুটাবে
হয়তোবা ঝরা ফুলের বাগানেও ফুল ফুটবে

প্রকাশ্য খবরাখবরের সূর্য আলোকিত হলে ইন্টারনেটের
বিচ্ছিন্ন কবর করে লুকানো আর মানেই হয় না
হিংস্র শিকারির বুলেট দিয়েই পাখিদের চিরতরে ঘরে
ফেরানোর এমন ষড়যন্ত্র রপ্ত করে স্বপ্নের আয়নাঘরে।

****

দর্শকশূন্য, সব জাদরেল খেলোয়াড়

আমার সমস্ত শুভাকাঙ্ক্ষীই ভেজাতে থাকে
তেল দিয়ে, ওপেকভুক্ত দেশের পরিশোধিত
অপরিশোধিত সব তেল নিয়ে।

অথবা পৃথিবীর বিখ্যাত স্বর্ণখনির সকল স্বর্ণের মতো
গল্প আসরে আমাকে দামি করে তোলে
চলতে ফিরতে উঠতে বসতে কানে আসে, মজা লাগে
কিন্তু অপবিজ্ঞানের ভাবার সময় নেই একেবারে।

ওপেকভুক্ত দেশের ভূগর্ভস্থ খনিজ জানে বেশি,
কতটুকু তেল আছে তার বুকে
আমি তেলের খনি না হয়েও জেনেছি, জেনে যাই,
কারা কারা কতটুকু ভিজিয়েছে আমাকে
জলকে জলের পানিতে ভেজাই,
তেল নিয়ে করি তেলেসমাতি কারবার
ওইসব নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই
তেল মেরে যদি কমানো যেত বৈশাখের তাপমাত্রার কাল
জবজবে তেলেই আমি ভিজে যেতাম সঙ্গে নিয়ে মহাকাল
তুমি শুধুই চেয়ে চেয়ে দেখতে সোনার বাংলার এই
চলমান পুতুল পুতুল খেলাঘর; এখানে কোনো দর্শক নেই
আমি তুমি আমরা সবাই জাদরেল খেলোয়াড়...

****

আজব খেলার নাম মানুষ

মানুষেরা খেলা করে, খেলা কখনো মানুষকে করে না
আশ্চর্য জগতের বাসিন্দা—মানু্ষকে নিয়ে খেলে;
পৃথিবীর জনপ্রিয় খেলা আজ
উল্লাস করে স্তম্ভিত হয়ে:
মাঝেমধ্যে তালি দেয়, গালি দেয়, ক্লান্ত হয়ে বসে থাকে
পুরস্কার নেয়, তিরস্কার দেয়,
প্রেম, ঘৃণায়, ভালোবাসায়...

খেলা শেষ হলে ঘরে ফেরে; ঘর ফেরে না খেলায়
এ জগতে মানুষকে নিয়ে খেলার অপর নাম—
কবর, শ্মশান আর সমাধি চিরন্তন সুখের ঠিকানা।

****

জীবিত ও মৃত

মরণ, মৃতকে মারো কেন? দাও না বাঁচতে!
জীবিত, জীবনকে বাঁচাও কেন?
দাও না মরতে!

নিরস্ত্র নিরীহ তাকে বুলেট ছোড়ে কেমন করে?
ওখানে ঈশ্বর থাকে শুধু চাক্ষুষ চোখটি মেলে...
বিচারকে, সঠিক বিচার দিতে, তুমি ক্ষ্যাপাটের মতো
ক্ষেপেছিলে কার হয়ে? বাংলার বৃক্ষ পাখি জানে।

বাঁচতে আর মরতে ছেঁড়ে দাও,
শুধু ঈশ্বরের হাতে। শুধু জন্ম ও মৃত্যুর মতো—
কারো নেই ধ্বংসের কোনো অধিকার

****

হৃদয়তৃষ্ণা চৈতালি বাঁকে

চারিদিকে অশান্তির ক্ষুরে ছুটে চলেছে সবাই
শান্তি লুকিয়ে অশান্তিরই খোঁজে—
পেছন ফেরে না কেউ আর।

অনবরত পদদলিত হয়, রক্তের বৃষ্টিতে ঘরদোর খুঁজে
পদ পদবির নতুন সন্ধানে—
সম্মান বিত্ত আর নামডাকের ঘোরতর অন্ধকারে
এখানে বরং ক্লান্ত হয়, ক্ষান্ত হয় না মোটেও

সড়কজমা মেঘের অথবা উঠোনে আষাঢ় থামা শ্রাবণ
অথবা শখের বশে পাশের বাঁধা পুকুর, ছাদে
অথবা খাল-বিলের, আমন-বোরোর ফসলের মাঠে
স্বচ্ছ আয়নার জলে, দেখে না মুখটি সে নিজের
নিজেকেই ভুলে গেছে—শান্তি খুঁজতে খুঁজতে;
আসল প্রশান্তি যেন ঘরে প্রকাশ্য ঝুলকালির মতো
তা আসে খুব গোপনে গোপনে নীরবে সযতনে

রক্তস্রোত উপহার দিয়ে নিষ্পাপ মাসুম সাজে
যেমন পিতার খুনি সাধু হলে, মুক্তি চাই জোড়া হাতে
বাবা ঘুমিয়ে থাকে কবরে—ঘোরে নবাবজাদা বাহিরে।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন