কেমন হলো এবারের ঈদসংখ্যা
প্রতি বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিভিন্ন পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল ও ছোট কাগজের উদ্যোগে ঈদসংখ্যা প্রকাশিত হয়। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত মানুষগুলো খুবই উচ্ছ্বসিত থাকেন এই আয়োজন ঘিরে। যারা নিয়মিত লেখালেখি করেন; তাদের টার্গেট থাকে অন্তত একটি লেখা কোনো না কোনো ঈদসংখ্যায় প্রকাশিত হোক। কারো কারো একাধিক লেখা ঈদসংখ্যায় প্রকাশিত হয়।
তবে মজার বিষয় হলো, ঈদসংখ্যার সূচিপত্র প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। অনেকটা রেষারেষির পর্যায়েও চলে যায় সেই আলোচনা। উৎসবকে কেন্দ্র করে যেখানে সৌহার্দ বিরাজ করার কথা, সেখানে বিভাজন তৈরি হতে সময় লাগে না। আয়োজকদের তুলোধুনো করেন কেউ কেউ। বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে সাম্প্রতিক যোগাযোগমাধ্যমে। যদিও এই দ্বন্দ্ব কখনোই সংঘাতে রূপ নেয় না।
এবার যারা ঈদসংখ্যায় লিখেছেন, তারা যেন বিপাকেই পড়েছেন। কারো কারো বক্তব্য শুনে মনে হয়, তারা অপরাধই করে ফেলেছেন। আয়োজকরাও চুপ করে হজম করে যাচ্ছেন বিষোদগার। একটি ঈদসংখ্যার আয়োজনে অনেক বিষয় জড়িত থাকে। অর্থনীতি, রাজনীতি, আদর্শ এবং বলয় প্রভৃতির সমন্বয়ে একটি ঈদসংখ্যা পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি অর্জনের জন্যও কাজটি করে থাকেন তারা। এরপর কত অনুরোধ-উপরোধ রক্ষা করতে হয়। লেখকদের লেখার চাপ সামলাতে হয়।
দিন শেষে এমনও হয়, পরিশ্রমের পরও পাঠকের বা বাদপড়া লেখকের তোপের মুখে পড়তে হয়। স্বস্তিতে থাকার যেন উপায় নেই। তারপরও ঈদসংখ্যা প্রকাশিত হয়ে আসছে। ভবিষ্যতেও হবে। আলোচনা-সমালোচনা আছে বলেই ঈদসংখ্যা এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বাদপড়াদের ক্ষোভ আর জড়িতদের উচ্ছ্বাসেই পূর্ণতা পায় ঈদসংখ্যা। সমালোচনার ঊর্ধ্বে গিয়ে কি কোনো কাজ সম্পন্ন হতে পারে? হয়তো পারে না।
এ প্রসঙ্গে কবি ও কথাশিল্পী রনি রেজা বলেন, ‘সব তো পড়া হয়নি। সম্ভবও না। অনেকগুলো ঈদসংখ্যা হয়েছে। প্রিন্টেড। এর বাইরে অনলাইন আয়োজন করেছে অনেকে। প্রতি বছরই সংখ্যা বাড়ছে। এটা ভালো দিক। আমি ৬টির মতো সংগ্রহ করেছি। একটু নজর বুলানোর বেশি সময় করতে পারিনি। না পড়ে তো মান নিয়ে কথা বলা যায় না। তবে আয়োজনকে সাধুবাদ জানাই। সূচি দেখে ভালো লেগেছে। পরিকল্পনার ছাপ বোঝা যায়। সব মিলে ঈদসংখ্যা ঈদের আনন্দের পূর্ণতা দেয় বলবো। বিশেষ করে লেখক-পাঠকদের জন্য।’
আরও পড়ুন
কবি ও শিশুসাহিত্যিক ফখরুল হাসান বলেন, ‘ঈদসংখ্যাগুলো বাণিজ্যিক। এখানে গুরুত্ব পায় বাণিজ্যিক লেখক। আবার সম্পাদক টু লেখক সম্পর্কও ঈদসংখ্যার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যতই গুরুত্বপূর্ণ লেখক হোন না কেন সম্পাদক যদি গুরুত্বপূর্ণ লেখক মনে না করেন, তাহলে আপনার কাছে তিনি লেখা চাইবেন না। যারা বিজ্ঞাপন দেন, তারা নিজেদের কথা চিন্তা করে দেন। তারা সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক নন। ঈদসংখ্যার আবেদন আছে বলেই প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ করে। এটা সত্যি, ঈদসংখ্যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। দেখতে হবে সমালোচনা কারা করছেন। আমরা যতই বলি আঙুর ফল টক। দিন শেষে সবাই আঙুর ফল খেতে চাই।’
বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক ইমরুল ইউসুফ বলেন, ‘ঈদের আগেই ঈদসংখ্যা হাতে পাওয়ার আনন্দই আলাদা। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি প্রকাশিত আলো ঝলমলে সম্পূর্ণ রঙিন পত্রিকা ‘শিশু’র ঈদসংখ্যা এবং আমাদের সময়ের ঈদসংখ্যায় অনেক লেখকের সঙ্গে আমার লেখাও লিপিবদ্ধ হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
কবি ও প্রাবন্ধিক মোহাম্মদ নূরুল হক বলেন, ‘ঈদসংখ্যার লেখক তালিকা এভাবে সাজানো হয়—মালিক বা প্রকাশকের বন্ধু বা আত্মীয়, ব্যবসায়িক পার্টনার, করপোরেট ব্যক্তিত্ব বা ব্যাংকার বা বিজ্ঞাপনদাতা, সেলেব্রিটি, জনপ্রিয় লেখক, আমলা লেখক, অধ্যাপক লেখক ও সিরিয়াস ধারার প্রবীণ লেখক। সুতরাং এসব সংখ্যায় লেখারও কিছু নেই, পড়ারও নেই।’
ঈদসংখ্যা বাড়ছে নাকি কমেছে, সেটি আপেক্ষিক বিষয়। সবাই যার যার সামর্থ অনুযায়ী প্রতি বছরই চেষ্টা করেন ঈদসংখ্যা প্রকাশ করতে। ভালো-মন্দের বিচার পাঠকের হাতেই থাকলো। তারপরও বাংলা সাহিত্য যদি সামান্যতম সমৃদ্ধ হয়, তবে ক্ষতি কী?
এসইউ/এএসএম