বিরহের তিনটি কবিতা
নিজেকে দুঃখী ভাবতে ভালো লাগে
কখনো কখনো কোনো কারণ ছাড়াই
নিজেকে দুঃখী ভাবতে ভালো লাগে।
ভীষণ ভিড়ের মধ্যেও নিজেকে একা করে ফেলি অনায়াসে।
একটা নদী
নদীর পাড়। সেখানে ধূসর ঘাসে বসে
সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে একাকিত্বের তালিম নিই
দূরে উড়ে যাওয়া পাখির মলিন পালক থেকে।
তারপর
চোখ বন্ধ করে শুধু তোমার কথা ভাবি।
যা হবে না কোনোদিন সেসব দৃশ্য আঁকি
বুকের আনাড়ি ভূমিতে।
ভাবতে ভালো লাগে—
তোমার উত্তাল বুকের কাছাকাছি
আমাকে আপন করে নেবে একদিন।
ঠিক তখনই
নদীভাঙনের শব্দে
আমার চৈতন্য ফিরে আসে স্বৈরাচারের বুলেটের বেগে।
আমি বুঝতে পারি
আমি মূলত দুঃখীই, আমি মূলত একাই।
****
কেউ নেই অপেক্ষায়
আমার জন্য কেউই অপেক্ষা করেনি কখনো।
একটা কচুরি ফুল
বড় গাছ বরাবর নদীতে ভাসতে দেখে
বাড়িতে এসেছিলাম মাকে বলবো বলে
ফিরে এসে দেখি, সেই কচুরি কোথাও নেই আর
আমার দৃষ্টির ব্যর্থ সীমানায়।
প্রাপ্তবয়স্ক সন্ধ্যায় একবার যে মেয়ে
কাগজের একশ টুকরায় লিখেছিল
‘ভালোবাসি তোমাকে, তোমাকেই!’
একদিন সেও চলে গেছে সহজ পথে।
আমার অপেক্ষায়, থাকেনি হায়!
আমার জন্য কেউই অপেক্ষা করেনি কখনো।
হাসপাতালের বিছানায় আব্বাকে খাবার পৌঁছে
ফিরছি যখন বাসায়, কিছুদূর যেতে না যেতেই
মায়ের ফোন—কী বলল, বুঝিনি কিছুই!
ফিরে গিয়ে দেখি, মা কাঁদছেন; আব্বা চলে গেছেন।
আমি আসা পর্যন্ত কেউই করলো না
আরেকটু অপেক্ষা।
****
একা হয়ে যাও
সবকিছু ছেড়ে দিয়ে বরং একা হয়ে যাও।
ভুলে যাও
কেউ একজন তোমাকে ভালোবাসতো কোনো এককালে।
তার ঘামে ভেজা ওড়নার মায়া ছিঁড়ে ফেলে
হাওয়ায় মিলিয়ে দাও চোখ বন্ধ করে।
সবকিছু ভুলে বরং নিঃসঙ্গ হও, নক্ষত্র ও আমার মতো।
জেনে রেখো
কেউই আসলে থাকে না আপন আজীবন।
চলতে চলতে নদীও বাঁক নেয়,
শাখা-উপশাখা কত কী হয়!
পাড় ভেঙে সবুজ ঘাসের নির্মম স্বপ্নভঙ্গ।
এসব কথা বরং ভুলেই যাও।
ভুলে যাও
কেউ একজন তোমার বিষণ্ণতার কালে
গালে চুমো খেতো সিনেমাটিক পন্থায়।
গালের সে দাগ মুছে ফেলো এখনই।
অতি সহজেই সে দাগ মুছে যাবে জানি
কিন্তু মনে লেগে থাকা স্মৃতির গাঢ় দাগ?
আসলে মানুষ চাইলেও
কোনোদিনই পারে না পুরোপুরি একা হতে।
জমজমাট নিঃসঙ্গতার আড়ালেও
সঙ্গ দেয় বিশেষ কেউ।
এসইউ/জেআইএম