গোলাম রববানীর সিরিজ কবিতা: বোধ
বোধ- ১৮
এখানে পলিথিনের পোড়া গন্ধে সুগন্ধি বেড়েছে
যেন দুশ্চিন্তা বরণে—মনে হয় ছিঁড়েছে পাঁজর
পঞ্চইন্দ্রিয়ের ঘ্রাণে; মাতোয়ারা বসন্ত নীরবে
কাকের মতো কোকিল, ভাগাড়েই শকুনের চোখ
কার প্রতি কার ঝোঁক! নেই শুধু মানুষে কমতি
জানি কিছু কিছু বাচ্চা ডাস্টবিনে ময়লা আনন্দে
হয়তো বলছি বাচ্চা এই, বাচ্চা মানুষের কথা
মানুষের সুসন্তান হয় জানি; বাচ্চা নয় মানি—
সে-তো হয় জন্তুদের—জানোয়ার বাচ্চা থেকে বাচ্চা
শিক্ষা খায় শুধু শিক্ষা, বমি করে দুর্নীতি কুশিক্ষা
সাইলেন্সারের মতো দেখো আজ বোধের পাইপ
থেকে শুধু নামে মাত্র; নিয়ন্ত্রণ কী অনিয়ন্ত্রণে?
বোধের শরীর জুড়ে—রকমারি হে পলিউশন
কন্ট্রোলের নামে রোল জারি করে মস্ত কট্রোলার!
মেহেরপুরের সেই আমবন বা কলাভবন
পরিপূর্ণ বোবা আজ—কথামালা বেশ উদয়াস্তে
পশুর বাচ্চারা নয় মানুষের সন্তানেরা কেন
বোঝে না, আরও ভালো হতো ভালো হলে বোধহয়।
একটি সত্যের জন্য স্বর্গভূমি নরকের কূলে
চোখবুঁজে চেয়ে আছে দেখে রূপনারানের কূলে।
****
বোধ- ১৯
আমজনতার সাথে আজ আর হয় না মোটেও
বাক্যবিনিময় মনখুলে—কীভাবে খুলবো প্রাণ?
তালাদেয়া বদ্ধ ঘরে, জং ধরে গেছে বেশ আগে
তখন জমিয়ে আড্ডা হতো কত—চোখে চোখ রেখে
মানুষের কারাগারে বন্দিজন জেলখানা কার?
তোমার আমার এই কথা শুনে মায়া নিরুত্তর!
নিরুদ্দেশ যাত্রা শেষে ফিরে আসি একান্ত প্রহরে
নেই যেন অধিকার লতাপাতা পোকামাকড়ের
কাকে ছেড়ে কারে বলি—ভালো ভালো, ভালো নেই যেন
আমার আমাকে নষ্টদের দলে দিয়েছি বিলিয়ে
ভালোদের দল ছিল কী কখনো জানা নেই তা-ও
নষ্টের ভালো কালোতে যাও মিশে ভালোও নষ্টের।
মুখের লাগাম আঁটো ও বজ্জাত পাঁজী দুষ্টছেলে
নইলে লকাপে যাবে, ভয় ছাড়—বিশ্বাসী সন্তান
কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না—স্মার্ট এই যুগে
ভাইরাল করে দাও—হয়ে যাও—মানব কল্যাণে।
ফিরে এসে জুড়ে যাবে যত সব আমজনতার
বাহবার পারবারে তুলে দেখো তোমাকে নাচাবে।
****
বোধ- ২০
পারলে তরল পদার্থের মতো বিভাজিত হও
খণ্ডিত কিংবা দ্বিখণ্ডিত হলেও জোড়া লেগে যাও
আগুনকে তো পদার্থ অথবা বস্তু বলা যায় না
আগুনের শক্তিকে বাড়িয়ে দিলে অনিয়মের শিখায়
শক্তিকে হাজার গুণে লেলিয়ে দিলে বিভীষণ,
কোষ আর কলা দিয়ে গড়া বিবেকের জাতীয় জীব
কঠিন তরল বায়বীয়+তুমি সব পদার্থের মিশ্রণ
আগুনের আয়ুকে তোমরা বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত
আগুন তো নীরব মানুষের মতো ভীষণ জেদি গোছের
বেশি জ্বালালে পরে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিশ্চিহ্ন করে
ছাইয়ের শরমের পরিবর্তে ফেসবুকের লজ্জিত মুখ
ভোরের সূর্যের মতো অথবা পূর্ণিমা চাঁদের মতো
আপন হারানোর চেয়েও বেদনার খনি আবিষ্কৃত হলো
এত আলোয় ভরা জীবন তবু অন্ধরাজে ভরে গেল
এসইউ/