এম এ রহমানের গুচ্ছ কবিতা
যত দূরে হেঁটে যাবে
তোমার দৃষ্টির দৃশ্যে বাদ পড়ে যায় কিছু ছবি
দৃশ্যমান সব কথা, লুকিয়ে রেখেছে সব সত্য
তোমার কানের জিহ্বা প্রসারিত করো—
চেখে দেখো অসুন্দর, তারও সুন্দর স্বাদ আছে
তারও অনেক স্থির ছবি-ছন্দময় চলচ্চিত্র
নিজেকে ইজেলে রেখে বোধের দরোজা এঁকে দেখো—
ঘরের ভেতর আলো আসে, রোদ্দুরের ঘ্রাণ আসে
নাচঘরে বাউল বাতাস নৃত্য করে
তখন সমস্ত দৃশ্য নিউরনে ঢেউ তোলে
ভেঙে ভেঙে পিক্সেলে পিক্সেলে—
হৃদয় বন্দরে জমা হয় সফেদ ফেনার সত্য
যত দূরে হেঁটে যাবে—অদৃশ্যের পর্দা খুলে যাবে
তখন প্রতিটি স্পর্শ কথা বলে
প্রতিটি দেখার ঠোঁটের ভাষারা বর্ণ পায়
অনুভূতির জিহ্বায় আলাদা রঙের স্বাদ
জেনে যাবে...
অদৃশ্য বলতে কিছু নেই,
যা আছে তা আমাদের গোঁড়ামি, মূর্খতা
আর কিছু সীমাবদ্ধতার অপূর্ণতা।
****
অন্ধকারে ভরপুর আলো
সভ্যতার রাজপথে যেতে যেতে থমকে দাঁড়াই
দেহ থেকে খসে পড়ে মানুষের নরম পোশাক
নিজের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখি কোথাও নেই আমি!
দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত-অশ্বত্থের নিচে বসে—
দেখি, বুদ্ধের জোছনা পুকুরের জলে নৃত্য করে
ঘুমন্ত মাছের চোখে যখন সাঁতার কাটে চাঁদ
মনে হলো অন্ধকারে নক্ষত্রেরা কথা বলে সব
যেতে যেতে মনে হলো কোথাও যাচ্ছি না আমি
সময়েরা চলে যায় দেহঘড়ির মুহূর্ত নিয়ে
দূরত্বরা হেঁটে যায়—ক্রমে দূরে—মানুষে মানুষে
অদ্ভুত সভ্যতা এক মাটির গন্ধকে গিলে ফেলে
তবুও বাঁচতে চাই—যতটুকু বেঁচে আছি ততটুকু
জানি, অন্ধকারে তবু ভরপুর আলো থাকে
বেদনাকে জমিয়ে দেখেছি সুস্বাদু তরল মদ
যেতে যেতে যেন বলে যাই, সত্যি-জীবন সুন্দর।
****
নিজের ভেতর শুয়ে
কিছু মৃত্যু ছুঁয়ে যায়, নিজের ভেতর শুয়ে—
জানালায় গলে পড়া রোদ—ফিকে মনে হয়
বাইরের দৃশ্যগুলো দ্রুত পাল্টে যায়
মহাকর্ষ-অভিকর্ষ ভুলে সমস্ত শূন্যতা—
ভেঙে পড়ে বুকের বা’পাশে
তোমরা যেখানে যেতে চাও, যাও...
ছায়াপথে হেঁটে যাও, নক্ষত্র গিলে খাও
দরোজায় টোকা দিয়ো না কালের নৌকা
নিজেকে রেখে কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে নেই
বরং সমুদ্রেই যাবো নিজেকে সঙ্গে নিয়ে
দরোজায় টোকা দিয়ো না কালের নৌকা
তোমরা যেখানে যেতে চাও, যাও...
ছায়াপথে বেঁচে থাকো হাজার বছর
নিজের ভেতর শুয়ে—মৃত্যুকে দেখতে চাই
নিজের কবর নিজেই দিতে চাই
তোমরা যেখানে যেতে চাও, যাও...
****
বেঁচে উঠি মৃত্যু নিয়ে
মাঝে মাঝে আচানক, কেন মনে হয়—মরে গেছি
মরে গিয়ে বেঁচে উঠি—মৃত্যুর ভেতর, প্রাণ নিয়ে
এ জীবন, বেঁচে থাকা—আজকাল শাস্তি মনে হয়
যেন অজস্র মৃত্যুকে কাঁধে নিয়ে মৃত্যুর দিকে যাই!
প্রতি জন্মের ভেতর গোলাপের গন্ধ লিখে রাখি
চোখ দুটো খুলে নিয়ে পায়ের শিয়রে রেখে হাঁটি
নরম দূর্বার বুকে হৃদয়কে রেখে মাটি হই
শিশিরের জলে মুখ রাখি হাসোজ্জ্বল প্রতি ভোরে
অথচ প্রতিটি জন্মে করুণ মৃত্যুর জয়গান
জীবনের প্রতি লুপে ভালোবাসা এক কারাগার
মায়ার করাতকলে কেটে ফেলে প্রতিটি জীবন
মানুষের হাতে হাতে দেখি বিচ্ছিন্ন আমির দেহ!
মাঝে মাঝে আচানক, কেন মনে হয়—মরে গেছি
যাপনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মানুষেরা বিচ্ছু-সাপ, অগ্নি
এ জীবন, বেঁচে থাকা—তবে কোন জনমের শাস্তি?
তবুও প্রিয় খাবার-ভালোবাসা, মানুষ হৃদয়!
এসইউ/এএসএম