অনিন্দ্য নূরের কবিতা
চোরাবালির শহর এবং মায়া ঘুড়ি
চোরাবালির শহর
তোমার আমার এ কানামাছির শহরে—
এক টুকরো উষ্ণ প্রেম ফেরি করে
শহরের ক্লান্ত মানুষগুলো।
সীমাহীন মরীচিকার খেলা চলছে—জীবন ভেলায়!
দু’চোখে গহীন চোরাবালি—অবিশ্বাস ভরা প্রিয়জনের কণ্ঠস্বর।
বুক গলা আর গ্রীবা অবধি ভরে গেছে
একটি মৃত আর ক্ষুধার্ত শহরের গল্পে।
পাকস্থলিহীন মানুষগুলো কঙ্কালসার খাঁচায় বন্দি
প্রতিটি প্রভাতে ধবধবে সাদা শিউলি ফুলের মতো ঝরে
জীবনের সাদা ফুল—হাসপাতালের প্রতিটি করিডোরে।
নিস্তেজ পঞ্চ-ইন্দ্রীয় পরম ম্রিয়মানে স্থবির স্বপ্নের অবগাহনে।
ওপারে সৃষ্টিকর্তা—এপারে ভাইরাসের উর্বর বেলাভূমি
পাঁজরে অবশিষ্ট আছে শুধু বেঁচে থাকার একটি চিরকুট।
অন্ধকার ভরা নক্ষত্রগুলো এ শহরের
রাস্তায়, অলিতে গলিতে অদ্ভুত শিহরণ জাগায়—
আবাল-বৃদ্ধ, জনতা স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি—
অথচ; এর আগে এমনটি কেউ দেখেনি—
প্রিয় নিঃশ্বাস জ্বালাময়ী বেহালার করুণ তার
একটু স্পর্শ করলেই চিৎকার ওঠে জীবনের সাইরেন
যেন দেহ থেকে আত্মা ছুঁড়ে ফেলে দেয় অবলীলায়।
অতঃপর তোমার আমার আদিখ্যেতায় ‘এ শহর বড় অনিরাপদ’।
****
মায়া ঘুড়ি
অপ্সরী—তোমার শীতল আঁচলের নিচে
যত্নে লালিত হচ্ছে লাশের নীল ঝুড়ি!
ওষ্ঠাধরে দুর্দিনের প্রভাত চুম্বন করে গেছে
অনন্ত লাটাইয়ের মায়া সুতোর ঘুড়ি।
এক আকাশ আহ্বান কান্নায় চুপসে গেছে
পথশিশুটির কাঁপা কাঁপা ক্ষুধার্ত বুক,
ত্রস্ত, শত ব্যস্ত পাথরের মানুষগুলো
চার দেওয়ালের মুখোশ পরে আড়াল করেছে মুখ।
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ভগ্ন দেহে শিরা-উপশিরায়
মরে গেছে ছায়ার মতো গভীরে
দুঃস্বপ্নের পূর্ণিমা রাত কাটে এ ভয়ার্ত নগরীর
নোঙর ফেলে কোভিড মৃত্যুর উপাখ্যান তীরে।
নিঃশ্বাসের ভাঁজে ভাঁজে মৃত্যুর চিরকুটজুড়ে
ক্ষুধার্ত আর বেঁচে থাকা মানুষের তীব্র চিৎকার
আমার দেশজুড়ে রক্তের হিমগ্লোবিনজুড়ে
শপথ হোক জীবন সেবার অঙ্গীকার।
এসইউ/জেআইএম