তামান্না জেসমিনের দুটি কবিতা
আসা-যাওয়া
সেই জগতে একটি নিরাপদ আশ্রয়ে আমার বসবাস ছিল।
যেখানে দুঃখ, কষ্ট, জড়া বলতে কিছু ছিল না; শুধু আদর, ঘুম আর ওম।
তারপর একটি অপরিচিত স্থানে এসে পড়লাম, শুনতে পেলাম নানারকম অচেনা-অজানা শব্দ
আর কী অদ্ভুত, অসহ্য আলো!
ভয়, ব্যাধি, রহস্যময়তা-বিস্মৃতি।
চোখ মেলতে পারছিলাম না।
আমার শরীর আর আগের মতন কারো সাথে অষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেই, বাঁধা নেই!
হালকা পালকের মতন অনুভব।
আমি প্রচণ্ড ভয়ে চিৎকার করে কাঁদলাম আর জানতে চাইলাম—এ আমি কোথায়, কোথায়?
কোনো একদিন আমি আবার ফিরে যাবো। একটি টিউবের মধ্যে থেকে এক ঘন শুক্রাণু আর ডিম্বাণুর সম্মিলিত প্রান্তরে
যেখানে অগণিত গ্যালাক্সি, কৃষ্ণগহ্বর,
অচেনা ডাইমেনশন, ইউনিভার্স—মাল্টিভার্স।
সীমাহীন অচেনা পথ, অগ্নিরথে অগ্রযাত্রা
বিরতিহীন জেগে থাকা, বিরতিহীন ঘুম
থেমে থাকা সময়ে
আসা-যাওয়ার পথের ধারে নিকষকৃষ্ণ অথবা তীক্ষ্ম আলোতে!
আবারো কোনো একদিন হয়তো ফিরে আসবো ভ্রূণ বেশে, প্রাণ পেলে
এখানে-ওখানে, জগতের অন্য কোথাও,
অন্য কোনো আবাসস্থলে।
****
প্রেম
প্রধান দরজায় প্রেম দাঁড়িয়ে থাকে চঞ্চলতায়।
ভেতরে থাকা মায়াঘর থেকে উঁকি দেয় চেতনা
এত ভালোবাসা! এত অনুভব! এত মুগ্ধতা!
তাঁর আসার আশায় সম্মোহিত উষ্ণ আবেগ
উচ্ছাসে-আনন্দে উদ্বেলিত মন, তারই আমন্ত্রণ
বিস্ময়ে-বিশ্বাসে নেশাতুর ঘ্রাণের অপেক্ষা
শরীর-পেরুনো অপরাহ্ণ, নিবিড় উন্মুখতা
প্রজাপতির বেপরোয়া খেলা, রঙিন আহ্বান
ভেসে যাওয়া সন্ধ্যায় এ কেমন আকুলতা!
প্রকৃতির সঙ্গমে শব্দময় জাগরণে কী ব্যাকুলতা
এত প্রেম! এত আলিঙ্গন! এত চুম্বন!
অন্তপ্রাণ; চৈত্রের খড়ায় উন্মাতাল বৃষ্টির ঘ্রাণ
হাজার বছরের ফসিল প্রাণ পেয়ে চোখ মেলে।
হৃৎপিণ্ডের পাথরে বাহারি ফুলের মাদকতা
আজন্ম অধীর অপেক্ষার আরাধনা শিহরিত।
প্রেম প্রবেশ করে তাল-লয়-ছন্দে হৃৎস্পন্দনে
পুড়ে পুড়ে ছাই হলেও তবু ঋণ শোধ হয় যদি
এই স্পর্শ! এই উত্তাপ! এই অধীর নিবিড়তা!
এসইউ/জেআইএম