জীবন তাপস তন্ময়ের গুচ্ছ কবিতা
সন্ন্যাসে থেকো না, বিন্যাসে এসো
আমি আর স্বপ্ন দেখি না। স্বপ্নই এখন আমাকে দেখে। এখন আর তোমার কাছে যাই না। তুমি থাকো না তোমার মাঝে। কী লাভ নিজেকে হারিয়ে দিয়ে দূর জোছনায়?
বিন্যাসে এসো, নিজের মাঝে। সন্ন্যাসে থেকো না। যতক্ষণ তুমি নিজের মাঝে থাকো; ততক্ষণ তুমি শুধু আমার। নিজের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালে, জানি আমাকেই দেখো। মেঘমল্লারে গীত হই আমি। তোমার রবীন্দ্রকণ্ঠে। গীতবিতানে চোখ রেখে তুমি আমারই স্বরলিপি খুঁজে ফের। ক্যানভাসে তুমি জলরং হাতে আমাকেই আঁকো জানি। অনিচ্ছা রোদে পিঠ দিয়ে। তোমার তুমিময়তা সব আমার গান গায়।
আমাকে না পেলে স্বপ্নহীন হয়ে যাবে তোমার চোখ। দিন-দিন পথহারা হয়ে যাবে তুমি। আমার বৃষ্টিমুখর জানালায় তুমি অনন্ত-অনাদি এক বেহালাবাদক। তোমার চোখের জল নিয়ে লিখে যাই ঝরাপাতার দিনলিপি!
****
ও জানালা, দুয়ার খুলে বেরিয়ে এসো
মুগ্ধ হতে গিয়ে আজ দগ্ধ হয়ে আছি। তোমার স্নিগ্ধতায় এত গোধূলি আলো, চোরাবালি ফাঁদ; প্রভাতফেরি গান আমার বেহাত হয়ে যায়।
ও জানালা, দুয়ার খুলে বেরিয়ে এসো এই নন্দিত নরক ভেঙে দিয়ে। জোছনা আর বৃষ্টির ঘ্রাণে ভুলে যাওয়ার রেওয়াজ করো জেগে থাকার স্বপ্ন থেকে পাওয়া জাগতিক ঘৃণার আঘ্রাণ, দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস। জীবনের সব ঋণ শোধ করে দিয়ে একদিন ঋষি হয়ে যাবো। চারুচোখের এই মানবজমিনে আমি এক রূপকথার চাষি।
কপালের ঘাম মুছে দেওয়ার হাত না থাকলেও, জেনে রেখো একদিন পৌঁছুবোই অসীম আকাশ উচ্চতায়। তোমাদের সব দীনতা দূর করে দিয়ে তারপর ছুটি নেবো।
****
আকাশে উড়ে যায় রাত
রাত উড়ে যায় আকাশের ডানায়। প্রতীতির হাতে নতুন প্রভাত ফুটবে। দুয়ার খুলে বেরিয়ে আসবে জানালা। অপেক্ষায় আছি।
তোমার মতন কালো মুখ ক’রে সামনে এসে হাজির হয় সকাল। অচেনা ভোর। মেঘবারান্দা জানে না, দুয়ার খোলা ভোর কবে আসবে এই আকাশলীন নীল উঠোনজুড়ে।
অপেক্ষা আমার সূর্যদীঘল লাল-সবুজ দীগন্তচারী পথ। অপেক্ষা এক মৃত্যুশীতল গহীনের ডাক।
এসইউ/এএসএম