বাবাকে নিবেদিত চারটি কবিতা
আব্বার পিঠ
বিছানা করে মশারি টানিয়ে রেখেছেন মা।
আমি এখন যেখানটায় শুয়ে আছি,
সেখানে এককালে আব্বা শুতেন।
তাঁর ডানদিকে আমি শুতাম।
বিদ্যুৎ না থাকলে সুপারির খোলে বাতাস করতেন,
মাথায় হাত বোলাতেন, পিঠ চুলকে দিতেন।
আমিও তো আব্বার পিঠ চুলকেছি কত!
এখন শতবার এপাশ-ওপাশ হলেও—
আবাদি জমির মতন আব্বার পিঠ আর খুঁজে পাই না!
****
তবুও আব্বা আছেন
আব্বা একসময় থাকবেন না—
যেমন থাকে না কেউই!
এটা ভেবে খুব ভয় পেতাম।
শীতের রাতের মতো অবশ হয়ে যেত দেহ।
আব্বা এখন আর নেই!
নাম ধরে ডাকেন না আর—
বছর দেখি পেরিয়ে গেল!
মায়ের চোখের দিকে তাকালেই আব্বার ছবি ভেসে ওঠে,
মায়ের মুখের কথায় আব্বার ঝকমকে স্মৃতি বেজে ওঠে।
আব্বা আমার না থেকেও—থাকার চেয়ে বেশি আছেন।
****
আব্বাকে আমি ও অন্যরা
আব্বাকে আমি বাদে সবাই খুব ভয় পেত।
গ্রামের উত্তর মাথার খেজুর গাছ থেকে—
দক্ষিণ মাথার আকাশ ছুঁই ছুঁই তালগাছও।
তাঁর মুখ গম্ভীর হলে, কেঁপে উঠতো বন—
সুপারির থোকা আর প্যাঁচাদের চোখ।
আব্বাকে আমিসহ সবাই খুব ভরসা করত।
গ্রামের উত্তর মাথার ঘাটে বাঁধা নৌকা থেকে—
দক্ষিণ মাথার পুকুরে অপেক্ষারত মাছরাঙাও।
তাঁর কাছে ছুটে আসতো সবাই—বাবাহারা শিশু,
নিরূপায় কৃষক আর রোগে ভোগা কাশেমের মা।
আব্বাকে আমিসহ সবাই খুব মান্য করত।
গ্রামের উত্তর মাথার মসজিদের দুয়ার থেকে—
দক্ষিণ মাথার বড় দোকানের এক কাপ চা।
তাঁর সামনে এসে সব নিশ্চুপ, সন্ধ্যার কাক—
মাদ্রাসার ছাত্র আর জমি নিয়ে ঝগড়া করা ভাই।
****
আব্বার বয়স
পিতা-পুত্রের বয়সের অঙ্ক মেলানোর আগেই—
আব্বা আমার মারা গেলেন!
এসইউ/এমএস