সানাউল্লাহ সাগরের কয়েকটি কবিতা
মৃত্যু
মৃত্যু—সুন্দর, সাবলীল এবং মায়াময় এক শহরের নাম
যার প্রতিটি অঙ্গ কারুকার্য আর সত্য অলংকার;
—লেপ্টে আছে গন্তব্যহীন গন্তব্যের শরীরে!
আহা ফুরানোপ্রায় গর্ব আমার
তোমার মুখে করুণা সাঁতরায়
চোখ ভিজে যায় একাকিত্বের ওমে—
দুরবিনে জড়ানো সময় হেসে ওঠে বিন্দাস।
প্রবাহিত সবুজের মতো সুর করে ডেকে যায়
নিষেধ পাখনার আড়ালে;
ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে যায় নদীর কৃপণ বৈঠায়।
বিছানাবন্দি আকাশ—শখের সমুদ্র বিন্যাস
ভেসে যায় নরম ছায়ায়।
যতদূর ঘুম আমার—তারও দূরে অতিবাহিত হও তুমি;
কোহেকাফ তবু নিভে যায় নিজস্ব নিয়মে,
যন্ত্রণার অবুজ সংকেত নেচে ওঠে অন্তহীন গর্তের মুখে।
মৃত্যু, ও আমার স্বতন্ত্র প্রেমিকা
তোমার কিশোরী খোঁপায় ডুবে যাই আমি—
কবুতর মাসে বেঁচে ওঠার লোভে!
তুমি সন্দেহের ফাইল নিয়ে উধাও—
যেন সেইসব পুঁটি মাছের ক্ষুধা নিয়ে আমি এখনো
ফুটে যাচ্ছি বিলে, সাদা চুমুতে লিখিত হয়েছি চুপচাপ;
আবার ধানের মায়ায় ফিরেছি শীতের মসৃণ পিঠে।
মৃত্যু, মুখোমুখি হাসো—ছুঁয়ে দিই তোমার থিতানো অহম,
বিস্তৃত হই অসুখের দুর্লভ গ্রীবায়,
ডুবে বাঁচার সুখে হেসে উঠি আরেকবার।
****
সহসা চৈত্র
ঘরে ফিরে দেখেছি সেলাই মুছে গেছে সুঁইয়ের কামে,
নিজের নামে অস্থির অভ্যেস; পথ শুয়েছে ধুলোর খামে।
বহুদিন দেখা নাই আমাদের;
কোনোদিন শৈশব
ক্ষুধার্ত খোঁপার সিঁড়ি
হরতাল মাঠে মাঠে
ফুর্তির দেরাজে আড়ি
স্নান শেষে মুখোশ খসে যায় গর্তের !
গলি থেকে প্রবাহিত পথ—পকেটে; গভীর ঘুম তার,
নিজের কাছে কাঁটাতার প্রচুর—ফেরা হয় না আমার।
শর্তের ঢেকুর চোখে ছুটে যাচ্ছে রোদ্দুর
থরথর তবুও একা
বায়ান্ন সকাল নিয়ে
হেঁটে যায় মই
দুর্লভ জাহাজের কানে।
জানা যায় উঁকি হারানো কান্নারা জেগে আছে শস্যের চাতালে
ঘুমের বড়শিতে রক্তের দাগ; মুখোমুখি চাঁদ ছুটি যায় অকালে।
গাছের অভিধান এই নোলক লেপ্টানো দিনে
তলিয়েছে শহর—বিশ্বাস বাগান; নিষেধ অভিমানে।
ঠোঁটজুড়ে ঢেউ
মুখের ছায়ায় মুখ
কঠিন শ্রাবণ
ভেসে যাচ্ছে পৌষের প্রলেপ।
তবু আমি চুপচাপ—হেরে যাই, ফেরার লোভে ভিজে যাই সন্ধ্যায়
কান্নারা শান দেয় কালোর পাজামায়
সুঁইয়ের ঘ্রাণ নিয়ে সুতোরাও সাঁতরায়
শুধু ঘরপাখি—শোক জ্বেলে রাখি অসহ্য সাহস মন্দায়।
****
অসুখ
সহজ একটি মুখ
সরল—সবুজ সাঁতার
নিদ্রাতুর নীরবতায় কোকিল সমাজ
সব তোমার দেয়া আমার অহংকার;
সহস্র কান্নার ভাঁজে নিজেকে লেপ্টে রাখি
অন্ধের শোকে রোপণ করি নিজস্ব সন্ন্যাস,
তোমার সুখি বারান্দায় রঙিন চোখ উৎপাদিত হয়—
ছড়িয়ে যায় গর্তবাসী সমুদ্রে।
ছোঁয়াছুঁয়ির দূরত্বে বেজে ওঠে শখের দুরবিন—
উৎসব হাটে রটে যায় একান্ত সন্ধ্যা কোরাস
দ্রুতই হাত বদল হয় শীতের সকাল
দুপুর দলে পুড়ে যায় মোহের বাগান
আত্মপ্রেম ভুলে ডুবে যাই নিষিদ্ধ কবরে
নিজের কাছে নত হতে হতে
আবার তোমার কাছে সমর্পিত হই।
তোমার ঢেউ ফোটানো ভ্রু
সমস্ত সরল সিজদা অস্বীকার করে
অতি সাবধানে হেঁটে যায় ভবিষ্যৎ অহংকারে...
****
ফিরে আসা
এই ভিজে যাওয়া ভুলে যাবো একদিন
কোনো ক্রমেই খুঁজে পাওয়া যাবে না সীমানা তার;
আমিও ভয়াবহ অন্ধকারে ডুবে যাবো
কান্নার পাশাপাশি বাড়ি ভাড়া নিয়ে নিবো ঠিক
গাছে গাছে লেপ্টে দেবো জীবন—
গোছানো বাগান থেকে হাসলো না কেউ
কেবল উঁকির প্রশ্নে ফুটেছিল যারা
তারাও ভুলে গেছে গৃহস্থ গ্রাম!
আমাদের লাঠিহীন মুখ আর বাকিতে নেয়া হাসি
পৌঁছে যাবে সকালের ঠিকানায়, তবু
লাল মিথ্যার গভীরে ফুটে থাকবে নকল গোলাপ।
কথা নেই কোনো; পেছনে চলে গেছে মায়া—
তবুও লিকলিকে বরষায় ফিরে আসি
বারবার সাঁতারে নামি ডুবে যাওয়ার লোভে...
****
ফেরার নকশা
জানি তোমার মন খারাপ হয়ে আছে
চোখের গ্রামে কুয়াশা লেপ্টে যাচ্ছে, বিস্তর;
ঘুরেফিরে জাগ্রতই থাকছো ছুতোয়
যেন ফিরে যেতে পারো কলিজার উনুনে।
কোনো অগ্রহায়ণ-পৌষে খুশবু ছড়িয়েছো তুমুল
মিঠে স্পর্শে ঢেউ তুলেছো নোনতা নদের নৌকায়
আরও কত বাহারি কিলবিল নেচেছে স্রোতে...
তুমি রটেছো নিজস্বীর ফাঁদে; অথচ অলস
কোলাহল ভেঙেছে তাথই, নিঃসঙ্গ প্লাবন।
আমি জানি তুমি ফুটছো কোহেকাফ; তরঙ্গের বয়ানে,
যতদূর নিমগ্ন ছাতারা উজ্জ্বল থাকে খুব।
কোথাও জমেনি অস্থির আলসেমি
তবু ঢেউ, ঊর্ধ্বগামী সরলতা ছড়িয়েছে দূর,
নাবালক ক্ষুধায় ঢেকে গেছে ঈশ্বর!
সেসব জ্বলছে নাটাই, ঘুড়ি ও পিঁপড়ার দৌড়
আগামীর পায়ে তুমি; ঘটেছো বিস্ময়।
আর যত কাছাকাছি দুপুর, রোদের কানাকানি
ফিরেছে অসুখে—তোমার অদ্ভুত নোক্তায়।
জানি তোমার মন খারাপ হয়ে আছে,
শিস বাজছে না ধানের সভায়
অবশিষ্ট ক্ষুধায় তোমার মুখচ্ছবি ছেপে যাচ্ছে হরদম;
এবং কাছাকাছি আর কোনো তুমি নেই!
এসইউ/এএসএম