মায়েদের হার্বেরিয়াম এবং অন্য কবিতা
মায়েদের হার্বেরিয়াম
তোমার প্রতিটি রোমকূপের রন্ধ্রে রন্ধ্রে উৎকীর্ণ আছে
একটি দীর্ঘ প্রসবের
ব্রাহ্মী লিপি।
তোমার মহাকাশে, তোমার জঠরে
ডুবতে ডুবতে
আমি এবং আমরা
স্ফূরিত হই
অস্তিত্বহীনতা থেকে
অস্তিত্বের মহীরুহে।
সেই তুমি
হাজারো বটের ঝুরি নিয়ে
যেন বর্ণহীন, চিরন্তন বনসাই।
শিউরে উঠি!
শিউরে উঠি
এ কথা ভেবে যে
মৃত্যুর ঘনঘটায়
সহজাত কক্ষপথে একদিন
তুমি কীভাবে হলে
বিপুলা সর্বনাশী।
সেদিন জল আর রুধিরাক্ত ছিল
আমার বোধহীন কায়া,
যেন গর্ভফুলের কাব্য হয়ে উঠেছিলাম আমি,
আমার পৃষ্ঠতল স্পর্শ করেছিল
সূতিকাগারের জন্য বরাদ্দ
শুভ্র পুষ্পধারী শীতল
শীর্ণ পাটিখানি।
হিমশৈলীর হিম,
লুপ্ত করে নেয়, যে
পরিব্রাজকের ভাষা আর দেশ,
সেই হারানো দ্যোতনা
লেপ্টে থাকে, তোমার
তামাটে মুখের বলিরেখায়।
শিমুলের জ্যোৎস্নার মতো, তোমার
আঁচলে অবগাহন করে সে,
খুঁজে পায় হারানো ক্যানভাস।
মনে পড়ে?
মনে পড়ে কি মা?
চিরকাল তুমি আমায় বলতে,
তোকে মিশরীয় সভ্যতার
স্ফিংস হতে হবে না;
তুই আমার
আত্মরতিতে মগ্ন
স্বচ্ছ সরোবরের নীলাকাশ।
আমি নিশ্চিত,
এবং নিশ্চিত। যদি একদিন
এই নক্ষত্রের পতন হয়,
যদি একদিন
বৈশ্বিক উষ্ণতা পৃথিবীকে খুবলে খায়,
যদি একদিন
পৃথিবীর সর্বশেষ মানুষটির জন্য
একবিন্দু অম্লজান না থাকে,
তবে সেই মানুষটিও বেছে নেবে
তার মৃত মায়ের কোল,
আশ্রয় নেবে, এখানে,
কালশিটে প্রান্তরে
সব মায়ের হার্বেরিয়ামে।
****
পাপ
তরুণীটি বিষোদগার করছে
ওহে,
পাপ তোমাদের অন্তরে
আমার চুলে নয়।
সে ফুঁ দিয়ে বেলুনটি
ফোলাচ্ছে আর ফাটাচ্ছে।
সম্মুখের মানব জিজ্ঞেস করে,
পাগলের মতো এমন করছো কেন?
তরুণী চিৎকার করে ওঠে—
ওরে নরাধম, বেলুনে আমি
তোকে ঢুকাই আর ফাটাই
হতচ্ছাড়া দূর হ!
আমার স্বাধীনতার হন্তারক!
****
স্বাধীনতার বাগানবিলাস
রক্তজবার মহল ছেড়ে, একটি
ঝরাপাতা আলিঙ্গনের আতিশয্যে,
জঙ্গলের বন্দনায় মেতে উঠি।
অতঃপর
অগ্নিদেবতার চাতাল ছেড়ে
বিমুগ্ধ আমরা
হেঁটে চলি
সময়ের বুক ফুঁড়ে
অবাক ধনুক ছুঁড়ে ছু্ঁড়ে
পাতাল বিমুখতার পানে।
আমরা মানুষ খুঁজি
প্রতিনিয়ত
আরতিতে
আমাদের সঙ্গী করবো বলে।
যখন গোধূলি নামে
অন্ধকারের মহড়া দিতে
তখন আমাদের
এইসব অবলা আবেগ
আবিষ্টমন,
আমাদের
ধূসর পথের সবুজ পথিক
বানিয়ে রাখে।
তারপরেও আমরা একেকজন
এক ঝটকায়
অন্তরীক্ষের বজ্রপাত হতে
কিংবা মেশিনগানের নল হতে
বেঘোরে সহস্রধারায়
উত্তাপ নিতে থাকি।
আমাদের একজন
উপমার কপালে, সেদিন
একটা লাল টিপ পরিয়ে দেয়;
আরেকজন
চৈতালি চুমু আর আঁকিবুঁকিতে
পাগল হয়ে যায় শম্ভুনাথের ঠোঁটে।
আমরা এবং আমি
স্বাধীনতার রাজহংসী হবো বলে
স্বাধীনতার ভাস্কর হবো বলে
একটা বাউল গান ধরি
একটা পালা গান ধরি;
এমনকি
আমরা এবং আমি
অচেনা অদেখা
বৃক্ষের নিচে
যাত্রা দলের হিরন্ময় হয়ে যাই।
আমাদের সব অতীত
বর্তমানের বেদনায় মুহ্যমান
অথচ বর্তমান এক
ডুবন্ত অর্কিড,
কিন্তু হে আমার স্বাধীনতা
তুমি চির প্রজ্জ্বলিত
এবং অযুত অযুতবার
তুমি আমাদের
গোলাপরাঙা বাগানবিলাস।
এসইউ/এএসএম