ঝড়ের দিনে আম কুড়ানোর সুখ
মামুনূর রহমান হৃদয়
শিশুদের বইয়ে ‘মামার বাড়ি’ কবিতায় ‘ঝড়ের দিনে মামার দেশে, আম কুড়াতে সুখ’ কথাটি পড়লেই হারিয়ে যাই শৈশবে। মনে পড়ে ফেলে আসা অতীত। আসলেই দিনগুলো কত সুন্দর ছিল। বৈশাখ মাসে ঝড়ের দিনে আম কুড়ানোর স্মৃতি যেন মনের ভেতরের শত অভিমান ধুয়ে-মুছে দিতো।
ছোটবেলায় বৈশাখ মাসে গ্রামে গিয়েছি কতবার মনে নেই। তবে গ্রামে ঝড় এলেই আশেপাশের বড় বড় আম গাছ ও আম বাগানে ছোটদের উপস্থিতি থাকতোই। চলতো আম কুড়ানোর প্রতিযোগিতা। এছাড়াও রাতের আঁধারে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে টিনের চালে আম পড়ার শব্দ পেলেই সবাই মিলে সেই আম খোঁজা শুরু হতো।
সেই রঙিন স্মৃতি যেন চলে গেছে। কিন্তু ছোটদের দেখলে ইচ্ছে করে ফিরে যাই সেই দিনগুলোয়। তবে গ্রামে গেলে এখনো এই দৃশ্যের দেখা মেলে। কাঁচা আম কুড়িয়ে এনে সে আমের খোসা ছাড়িয়ে কুচিকুচি করে কেটে মরিচ ও লবণ মেখে খাওয়ার কী যে স্বাদ, একদম জিভে জল চলে আসে।
আরও পড়ুন: জাগো নিউজে বিয়ের গল্প লিখে বিজয়ী হলেন ১০ জন
২০০৯ সালের ঘটনা। বৈশাখ মাসে গরমের ছুটিতে মামা বাড়ি গিয়েছি। ওবায়েদ, ফরহাদ, মিরাজ ও আমি। চার মামাতো-ফুফাতো ভাই মিলে এপাড়া-ওপাড়ায় ঘোরাঘুরি। আর দুরন্তপনায় ব্যস্ত সময় কাটানো ছাড়া আর কাজ নেই। মোরগ ডাকা ভোরেই ঘুম ভেঙে যেত তখন।
ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই মাথায় ঘুরপাক খেতো আম বাগানে হানা দিতে হবে। কিন্তু ভয় কাজ করতো ঝড়ের সময় বাগানগুলোয় ভূত-প্রেত ঘুরে বেড়ায়। তা-ও মন মানতো না। চারজনই ছুটে যেতাম আর নির্ভয়ে আম কুড়াতাম। বাদ যেত না জামতলা, কাঁঠালতলা ও লিচুতলা।
আম-লিচুর মৌসুম শেষে রঙিন জামের প্রতিও ছিল নেশা। ছোট সবাই মিলে হই-হুল্লোড় করবো, এটাই ছিল আমাদের উদ্দেশ্য। না ছিল পড়াশোনার চাপ আর না ছিল পারিবারিক চিন্তার ছাপ। সবাই মিলে আনন্দ করবো, এতেই যেন মধুর তৃপ্তি।
আরও পড়ুন: কেউ এখন আর চিঠি দেয় না
এখনো গ্রামে গেলে ছোট শিশুদের দুরন্তপনা দেখে মনে পড়ে, পুরোনো সেই দিনের কথা। তবে সে কি ভোলা যায়! এখনো মনে হয়, ঝড়-বৃষ্টি এলেই দৌড়ে যাই আম গাছের নিচে। কুড়িয়ে আনি কাচা-পাকা রসালো আম।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী।
এসইউ/এমএস