বেলা অবেলা এবং অন্য কবিতা
গোলাম রববানী
বেলা অবেলা
এই বেলাতে না হয় থাক, পর বেলাতেই এসো
ভেঙেচুরে চুরমার করে না হয় দুঃখজলে ভেসো
একফোঁটা অশ্রু অনলে একটি দিয়াশলাই জ্বেলো
নিভে গেলে যাক হৃদয় প্রদীপ আঁধারের মনঘরো
এই বেলাতে না হয় থাক, পর বেলাতেই এসো
সময়ের সাক্ষী হয়ে সূর্যাস্ত সূর্যোদয়ের মতো
যদি সুখগুলো উড়ে যায় অনন্ত সময়ের কোণায়
গিট বেঁধে দিয়ে যাবো মহাসাগর তরঙ্গের ডগায়
এই বেলাতে না হয় থাক, পর বেলাতেই কেঁদো
একরাত্রি আর গৃহদাহ বুকে নিয়ে পৃথিবীতে হেঁটো
যদি সময়ের চোখ থাকে থাক বিশ্বাসের ভরাচাঁদ
অলগ্ন আলোতে দেবত্ব ওথেলো অমরত্ব বরবাদ
এই বেলাতে না হয় থাক, পর বেলাতেই হেসো
বেদনাকে বলেছি কেঁদো না, হেলাল হাফিজ চলো
দুঃখের সারিন্দা গাঁথি সাগর নোনাজল পানির মতো
হৃদয়ের ঋণে যদি পাথর হৃদয় গলে পড়ে কোনো
****
সৃষ্টির আলোয়
এই তীব্র তাপমাত্রার মধ্যেও কেউ কেউ আছে
ঠান্ডা ফ্রিজের মতন
সান্নিধ্যে গেলে মন জুড়িয়ে আসে
জগতের আর কোনো কিছুতেই টানে না হৃদয়
কেউ কেউ আছে এই বোশেখের ঘাম ঝরা ভরাদুপুর
পাহাড়ের কান্না-
সান্নিধ্যে গেলে বড় সাধ জাগে মনে
অনন্তকাল ধরে- ধরে রাখতে চাই জীবন
যেন মাউনা লোয়ায় বসে হাসে জীবনের সব গল্প
সুখ দুঃখ কান্না;
জীবনে জীবন হাতছানি দিয়ে ডাকে
অতীতকালের রকমারি জ্বলজ্বলে ধ্রুবতারা
নজর ফেরে না নজরানা দেয় মুক্তার জামিনদার
জলের জীবন জলচোখে উজান-ভাটি হয়ে থাকি
সৃষ্টির আলোয়; একবুক তরঙ্গ উল্লাস উৎসবে...
****
ভান
যখন আকাশের বুকে চাঁদ অথবা সূর্য ওঠে
তখন খোলা স্থানে গেলে চন্দ্র-সূর্য ও চোখ
একসঙ্গে সঙ্গমের চরম সুখ উপভোগ করে
হে গল্পের গল্প পৃথিবীরা আপনারা বুঝবেন কী করে!
পৃথিবীর গল্পরা তো ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বরের মধ্যে
লুকিয়ে লুকিয়ে চাঁদ-সূর্য দেখার সুউষ্ণ বাসনাতে
পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ জলাধারের মতো শুয়ে আছেন
এক-আধটু দাঁড়াতে গেলে হৃদয়ের গহীন অঞ্চলে
ভাঙনের বেগ এসে ভেঙেচুরে খানখান হয়
অথচ কী সুন্দর আপনারা বসে সুখের গল্প করেন
সুখী মানুষ নাটিকার মধ্যে পৃথিবী লুকিয়ে থাকে
দেখেন, বোঝেন, শোনেন, কী অবুঝ শিশু সন্তান!
আমরা আমাদের এই সমস্ত খুঁটিনাটি বুঝেশুনে
দেখুন না বোঝার কী এক ভয়ংকর ভান করছি;
এই রংচঙা পৃথিবীতে অনবরত ভান করে চলছি...
সুখে আছে যারা সুখে থাক তারা দুঃখের কী তাতে!
ভান করে যদি বান ডাকি মনে আবেগী মন সাগরে...
এসইউ/জেআইএম