প্রিতময় সেনের অনুগল্প: কল্পনগরী
এখান থেকেই খানিকটা দূরে আছে এক নগরী। সেই নগরীর বিশেষ এক নাম আছে, কল্পনগরী। যার অভ্যন্তরে যেটা কল্পনা করা হয়; সেটাই বাস্তবে রূপ পায়। নগরীর এরিয়া যতটুকু আছে, সেই তুলনায় লোকসংখ্যা খুবই সামান্য।
এ নগরী আপনাআপনিই বিশেষ ক্ষমতা অর্জন করেনি। সে এক লম্বা কাহিনি। চলুন আমরা কয়েকশ বছর আগে ফিরে যাই।
নগরীর সব লোক ছিলেন কৃষক। তাদের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই করুণ। তাদের এত পরিশ্রম করে চাষ করা ফসল, বাইরের দেশের মানুষ নানা জিনিস দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যেত। কিন্তু শেষে তারা সহজ-সরল কৃষকদের বোকা বানিয়ে চলে যেত কিছুই না দিয়ে।
নগরী তখন বিভিন্ন ফুল-ফলে ভরা ছিল। অপরূপ দেখতে ছিল নগরীটি। তাই সবাই নগরীর নাম দিয়েছিল ‘রূপসী নগরী’।
আরও পড়ুন: বিয়ে নিয়ে বাছাবাছি
নগরীর বাচ্চাদের ভালো জামা ছিল না। পড়াশোনার ব্যবস্থা ছিল না। সবাই মিলে যার যার সৃষ্টিকর্তার শরণাপন্ন হন। একজন খুবই নিষ্ঠাভরে শুদ্ধ মনে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে থাকেন। তার কিছুদিন পর এক সাধকের সঙ্গে দেখা হয়। সাধক তার কাছ থেকে সব কষ্টের কথা শুনে একটা বর প্রদান করেন।
বরটি হলো ‘আজকের পর থেকে এই নগরীতে যে যা কল্পনা করবেন, সেটাই বাস্তবে রূপ পাবে। এরপর নগরীর লোকদের সব দুঃখ দূর হলো। সবাই তখন নগরীর নাম দিলো ‘কল্পনগরী’। এভাবেই সৃষ্টি হলো কল্পনগরী।
তবে মানুষজন নগরীকে তখন ভালো কাজে ব্যবহার করলেও এখন আর কেউ ভালো নন। সবার মধ্যে হিংসা জন্ম নিয়েছে। সবাই এখন রাজা হতে চান। সবাই বিত্তশালী হতে চান। সবার মধ্যে বিশাল এক প্রতিযোগিতা।
একদিন সেই নগরীর নগরপ্রধান হঠাৎ কল্পনা করতে লাগলেন, যদি তাদের নগরী থেকে এই কল্পনা করার বিশেষ ক্ষমতাটি চলে যায়; তবে কী হবে তাদের? কিছুক্ষণের মধ্যে সেটিই হলো।
আরও পড়ুন: আমার আর্জেন্টিনার জার্সি জয়!
এখন আর কল্পনগরীতে কল্পনা করে তা বাস্তবে পরিণত করা যায় না। পরিশ্রম, চেষ্টা, বুদ্ধি দিয়ে কাজ করে বাস্তবে রূপান্তর করতে হয়। এই নগরী এখন শান্তিপূর্ণ, বিশৃঙ্খলমুক্ত।
এসইউ/এএসএম