স্লাভোয় জিজেক: উদাসী দার্শনিকের মনের কথা
পশ্চিম দেশে একটা টার্ম বেশ প্রচলিত আছে, পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল। আমাদের দেশেও ইদানিং এই শব্দের ব্যবহার বেড়েছে। ঠিক সুশীল সমাজ বা সিভিল সোসাইটির সদস্য বলতে যাদের আমরা বুঝাই পাবলিক ইনটেলেকচুয়াল তা নয়। আমাদের দেশের পাবলিক ইন্টেলেকচুয়ালরা যেমন মনের ভেতর কোনো না কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দেন, ওদের ক্ষেত্রে সেটা বিরল। একটা জ্ঞানভিত্তিক জীবনব্যবস্থা নিয়ে পশ্চিমারা এগোন, পড়ালেখা করেন এবং নিজেকে একাগ্র সাধনায় উৎসর্গ করেন। এ ক্ষেত্রে পলিটিক্যাল এগ্রেন্ডাইজমেন্ট থেকে ফিলোসফিক্যাল অ্যাটাচমেন্ট বেশি; যদিও পলিটিকো-ফিলোসফিক্যাল ইনভলবমেন্ট ওদের কোনো অংশে কম নয়। কারণ ওদের ভেতর ইডিওলজিক্যাল ইন্টিগ্রিটিটা প্রবল। আমাদের সুশীল সমাজ যেমন কিছু হালুয়া-রুটি পাওয়া-না পাওয়ার ওপর মত পাল্টান, ওদের মাঝে এই নিম্নস্তরের লোভ নেই। গত একশ বছরে সেজন্য একটা শক্তিশালী প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে ইউরোপে। আর এর ফলে নতুন নতুন চিন্তার দুয়ার খুলেছে সেখানে। মানুষ সেখানে একাধারে স্বাধীনভাবে মত রাখতে পারেন, আলোচনা করতে পারেন, পারেন লিখতে।
এরকম একজন স্বাধীন মানুষ স্লাভোয় জিজেক। আধুনিক যুগের কমিউনিস্ট, কালচারাল থিয়োরিস্ট, পোস্ট-স্ট্রাকচারাল প্রপাগানিস্ট; কিছুটা হলেও ইডিওসিংক্রেটিক। তথাকথিত শ্লীল-অশ্লীলের বিভাজন টপকিয়ে যথেষ্ট হিউমারে ভিজিয়ে তোলেন তাঁর নিজের বক্তব্য। বুঝিয়ে দেন ইডিওলজিক্যাল ফাংশানগুলো। আর এ ক্ষেত্রে তাঁর তুলনাহীন ব্যতিক্রমী অভিব্যক্তি নজর কেড়েছে উত্তর-আধুনিক চিন্তার সব বিশ্লেষকের। ব্রিটিশ দার্শনিক টেরি এগাল্টন তাঁকে কন্টিনেন্টাল ইউরোপের ‘মোস্ট ফরমিডিবলি ব্রিলিয়েন্ট’ হিসেবে মনে করেন। কেউ আবার তাঁকে খ্যাপাটে বা ভয়ংকর হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন। সম্ভবত চলতি সমাজ বাস্তবতা আর ঘটমান মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সামাজিক কাঠামোর বিরুদ্ধে জিজেকের মারমুখী অবস্থানের কারণে অনেকে নিন্দা করেন তাঁকে। তবে অলঙ্কার দিয়ে সাজিয়ে বক্তব্য উপস্থাপনের কারণে তিনি পশ্চিম দেশে অনেক জনপ্রিয়। জিজেককে উত্তর-আধুনিক বলা যাবে কি না তা নিয়ে বিরাট মতভিন্নতা আছে। জিল দুল্যুজ দারুণ একটা কথা বলেন, ‘জিজেক হচ্ছেন একজন উত্তর-আধুনিকতায় মোড়া ছদ্মবেশী আধুনিকতাবাদী।’ জিজেক লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কবেক ইনস্টিটিউট অব হিম্যানিটিসের আন্তর্জাতিক পরিচালক। এ ছাড়া তিনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেন।
স্লাভোয় জিজেক জন্মগ্রহণ করেন স্লোভেনিয়ায় ১৯৪৯ সালে। একটা মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। পূর্ব স্লোভেনিয়ার প্রেকমুরজে অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন তাঁর বাবা জজি জিজেক। একজন অর্থনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর বেশ খ্যাতি ছিল। মা ভেস্না ছিলেন জর্জিয়া অঞ্চলের মেয়ে। জিজেকের বাবা-মা দু’জনই ছিলেন নিরেশ্বরবাদী। জিজেকের পরিবার তাঁর তরুণ বয়সেই জুব্লিজানাতে স্থানান্তরিত হন। ভর্তি হন স্থানীয় বেজিরগার্ড হাই স্কুলে। প্রথম জীবনে জিজেক হতে চেয়েছিলেন একজন ফিল্ম মেকার। কিন্তু পরে গিয়ে তিনি দর্শনের প্রতি প্রবল আগ্রহ অনুভব করেন। ১৯৬৭ সালে যুগোস্লাভিয়াতে যখন মার্শাল টিটোর রাজত্বকাল; তখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পড়াশোনা শুরু করেন দর্শন ও সমাজবিজ্ঞানে। তিনি সে সময়ে ফরাসি কাঠামোবাদ থেকে শুরু করে জ্যাক দেরিদার বিনির্মাণবাদ–সবকিছু আয়ত্তে আনার চেষ্টা করেন। এ সময়ে জিজেক উচ্চমার্গীয় ফরাসি বুদ্ধিজীবীদের বিশেষ করে হাইডেগারপন্থি দার্শনিকদের সাথে যোগাযোগ বাড়িয়ে তোলেন। এদের মধ্যে টিন হ্রিবার, আইভো আরব্যানকিক প্রমুখরা ছিলেন। জিজেক বেশ কয়েকটা পত্রিকার সম্পাদনাও করেন। এ সময় যার মধ্যে ‘প্রাসিক্স’, ‘ট্রিবুনা’ এবং ‘প্রব্লেমি’ অন্যতম। ১৯৮০-র দশকের পুরোটায় জিজেক পড়াশোনা করেন জ্যাক লাকা, আলথুসার ও সিগম্যান্ড ফ্রয়েডের ওপর; সাথে সাথে এদের বিপুল লেখাও তিনি অনুবাদ করেন।
যা-ই হোক, প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার সমাজতান্ত্রিক আবহে তিনি বেড়ে ওঠেন। জুব্লিজানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে ১৯৭১ সালে স্নাতক হন, ১৯৭৫ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭০-এর দশকে তাঁর আগ্রহের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তিনি মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, মার্কস এবং জ্যাক লাকার সাইকো-এনালিটিক থিওরির প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকেন। ১৯৮১ সালে জার্মান আডিয়ালিজমের ওপর জিজেক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর চার বছর ১৯৮৫ পর্যন্ত জ্যাকুস এলিয়ান মিলারের তত্ত্বাবধানে আরেকটি অভিসন্দর্ভ রচনা করেন, হেগেল মার্কস ও কৃপকি নিয়ে জ্যাক লাকার অবস্থানের গভীর তত্ত্বের ওপর। এটা তাঁর দ্বিতীয় পিএইচডি। উল্লেখ্য, জিজেক ১৯৮০-র দশকে যুগোস্লাভিয়ার সেনাবাহিনীতে বেশকিছু দিন লিগ্যাল ডিউটি পালন করেন। বলতে গেলে ৮০-র দশক থেকেই তিনি সুধী মহলে নজর কাড়তে থাকেন তার রাজনৈতিক কলামের জন্য। ১৯৮৮ পর্যন্ত তিনি স্লোভেনিয়া কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক ও নাগরিক আন্দোলনের সাথে জিজেক ভীষণভাবে সম্পৃক্ত হন। স্লোভেনিয়ান লিবারাল ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন সদস্য হিসেবে ১৯৯০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ান। চারজনের সম্মিলিত প্রেসিডেন্ট পরিচালনের উদ্দেশ্যে এই ভোটে খুব অল্পের জন্য তিনি হেরে যান।
জিজেকের ব্যক্তিগত জীবন খুব বেশি সরল নয়। তিনি চারবার বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হন। টিম এবং কস্টজা নামে দু’জন সন্তান আছে তার। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রেনেটা সেলেক ছিলেন স্লোভেনিয়ার নামকরা দার্শনিক ও লুব্লিজানার স্কুল অব সাইকোঅ্যানালিসিসের অন্যতম ফেলো। এনালিয়া হনি ছিলেন তাঁর তৃতীয় স্ত্রী। হনি আর্জেন্টাইন মডেল ও লাকা বিশেষজ্ঞ। চতুর্থ স্ত্রী স্লোভেনিয়ান দার্শনিক ও সাংবাদিক জেলা ক্রিকিক। বেশ কয়েকটা ভাষায় পারদর্শী জিজেক। এর মধ্যে ইংরেজি, ফ্রান্স, জার্মান এবং সার্ব-ক্রয়েশিয়ান অন্যতম। জিজেককে নিয়ে অনেক ডকুমেন্টারি বানানো হয়েছে, যার মধ্যে ২০০৫ সালে তাঁর দর্শনের ওপর এস্ট্র টেইলর, প্রতিবেশ ভারসাম্যের ওপর এগজামিন্ড লাইফ অন্যতম। ১৯৮০-র দশকে জিজেক স্লোভেনিয়ায় ফিরে এসে নামকরা সাপ্তাহিক ‘ম্লাডিনা’-তে লিখতে শুরু করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি প্রথম The Sublime Object of Ideology নামে ইংরেজিতে একটা বই লেখেন। এরপর থেকে তিনি পরিচিত হয়ে পড়েন এক ভিন্নধর্মী উত্তর-আধুনিক মননশীল ব্যক্তি হিসেবে। জিজেক এসময় যুগশ্লাভিয়ায় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সমর্থনে কর্মীদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ওঠেন। বেশ কিছু রাজনৈতিক দর্শনের থিওরি এই সমর্থনে কাজ করে যার মধ্যে হেগেলীয় ভাববাদ, ফরাসি কাঠামোবাদী মার্কসবাদ বিশেষ করে আলথুসারের মার্কসবাদী দর্শন এবং লাকার মনোসমীক্ষণ তত্ত্ব। এরপর তিনি ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন।
জিজেকের সামগ্রিক দার্শনিক ভাবনার ওপর একটা সরল আলেখ্য রচনা করা খুবই কঠিন। কারণ তিনি খুব বেশি সরল কিছু বলেননি। তাঁর রাজনৈতিক ও দার্শনিক ভাবনার কিছু অংশ আয়ত্ত করতে সম্ভবত বেশ কিছু আনুষাঙ্গিকতা দরকার। যার মধ্যে ফ্রয়েড, লাকা এবং অবশ্যই আলথুসার। এদের সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা লাগবে বৈ কি! ফ্রয়েড ছিলেন অস্ট্রীয় মনোচিকিৎসক ও মনোসমীক্ষণবাদী। তাঁকে মনোবীক্ষণের জনকও বলা হয়ে থাকে। স্বপ্নের ব্যাখ্যা, আত্মরক্ষণ প্রক্রিয়া, অবচেতন তথা মানব মনের গহীন অন্তঃপুরে যে অজানা অধ্যায় ঘুমিয়ে আছে, সে সম্পর্কে দারুণ বৈজ্ঞানিক অনুষঙ্গ রচনা করে তিনি জগৎখ্যাতি অর্জন করেন। ফ্রয়েড বলছেন, আমাদের মনের গোপন প্রকোষ্ঠে আছে একটা অবচেতন মনের স্তর। সেই স্তরের নানান ধাপে চলছে নানান ইচ্ছের কারসাজি। ইচ্ছের তো কোনো শেষ নেই। কত কিছু ইচ্ছে করে! উড়তে ইচ্ছে করে, কাউকে ছুঁতে ইচ্ছে করে, ফুল হতে ইচ্ছে করে, হতে ইচ্ছে করে পাখি ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ইচ্ছেগুলো কি সব বাস্তবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ? না। নানা কারণে সেই ইচ্ছেগুলো ডানা মেলে না। সামাজিক বাস্তবতা, নৈতিকতা, আইনের খবরদারি এসব কারণে এর অধিকাংশই পূরণ হয় না। তবে পূরণ না হলে কী হবে! এসব ইচ্ছে কিন্তু একেবারে মারা যায় না। থেকে যায় মনের অন্তঃপুরে। মনের ত্রয়ী বিভাজন (ইড, ইগো, সুপার-ইগো) থেকে ফ্রয়েড বোঝাতে চেয়েছেন আমরা যে আমাদের অনেক গোপন আর রগরগে ইচ্ছে পূরণ করতে পারি না, তার অন্যতম কারণ সুপার-ইগো। বিবেক, নৈতিকতা, সমাজ, মূল্যবোধ ইত্যাদি বিবেচনা মাথায় রেখে চলি, এর বিশেষ কারণ কিন্তু মনের ওই সর্বোচ্চ ইচ্ছে। মনে রাখতে হবে সুপার-ইগো কিন্তু মনের অবচেতন স্তরের গহনবনে লুকিয়ে থাকে। একটা কথা কিন্তু তিনি ভীষণ পরিষ্কার বলেছেন, মানুষের বাকি জীবনের নীতি নির্ধারণে প্রাথমিক জীবনের মূল্যবোধ ও পারিপার্শ্বিক বাস্তবতা ওই অল্প বয়সেই নির্ধারণ হয়ে যায়। যা-ই হোক, ফ্রয়েড উনিশ শতক এবং বিশ শতকজুড়ে গোটা দুনিয়ায় মানব চিন্তায় একটা সাংঘাতিক প্রভাব ফেলেছেন।
লাকা সম্পর্কে একটু বলে রাখি, জ্যাকুস মারিয়া এমিলি লাকা বিশ শতকের অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন ফরাসি মনোসমীক্ষণবীদ। ১৯৩০-এর দশকে তিনি প্যারিসে মনোচিকিৎসক হিসেবে খুব নাম করেন। সিগম্যান্ড ফ্রয়েডের মনোদর্শনকে ফরাসি দেশে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা অনন্য। লাকার বিশেষত্ব হলো তিনি মানবমনের অবচেতনের গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ভাষার ওপর সমধিক গুরুত্ব দেন। তিনি ভাষার অধ্যয়নকে মনোবিশ্লেষণ তত্ত্বে প্রবর্তন করার চেষ্টা করেন। ঠিক যেমনটি আধুনিক ভাষাতত্ত্বে, দর্শন কিংবা কবিতায় ভাষা ব্যবহার নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়ে থাকে। লাকা দাবি করেন, মানুষের অবচেতনটা সাজানো থাকে অনেকটা ভাষার মতন। অর্থাৎ তিনি বোঝাতে চাইছেন, অবচেতনটা তৈরি হয় অবদমিত সংকেতের শৃঙ্খলের মাধ্যমে যা রূপক ও লক্ষণার রীতি অনুসারে একে অন্যের সাথে সংযুক্ত হয়। লাকার মতে, মানুষের মানসিকতা তিনটি ক্রম অনুসারে তৈরি করা হয়েছে; এই তিনটি আদেশ নিম্নরূপ: ‘কাল্পনিক আদেশ’, ‘প্রতীকী আদেশ’ এবং ‘বাস্তব আদেশ’। ‘কাল্পনিক আদেশ’ যা মানুষের মানসিক বিকাশ সম্পর্কে জন্মের সময় এবং বয়সের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে ঘটে।
ফরাসি দার্শনিক ও মার্কসবাদী বিশিষ্ট চিন্তাবিদ লুইস আলথুসার সম্ভবত সমকালে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে জিজেকের ওপর। আলথুসারের কথা হলো প্রতিটা মতাদর্শের একটা বাস্তব অস্তিত্ব আছে, কারণ এই মতাদর্শ প্রকাশিত হয়ে পড়ে কাজে, কর্মে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রাত্যহিক অনুশীলনের মাঝ দিয়ে। যে কোনো অনুষ্ঠান, প্রচলিত জীবন ব্যবস্থা, অথবা সংস্কৃতির নানা উপাদানের ভেতর দিয়ে এ মতাদর্শ প্রকাশিত হয়ে পড়ে। একজন মার্কসবাদী হিসেবে আলথুসার মনে করেন, ইডিওলজি বা মতাদর্শ আকাশ থেকে পাঠানো গায়েবি কিছু না। এই বস্তুজগতের সাথে আমাদের নিরন্তর মিথস্ক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যে বোধ গড়ে ওঠে সেটাই ইডিওলজি। যে তিনজনের একটা প্রাথমিক ধারণা আমরা এতক্ষণ পেলাম, সেটা বোধ করি জিজেক বোঝার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও কাজে আসবে।
জিজেকের দর্শন
জিজেককে পড়ার আগেই কয়েকটা কথা মনে রাখতে হবে, তিনি ভাবেন যে কোনো মতাদর্শ গঠিত হয় একধরনের গল্প দিয়ে, যা আমাদের রাজনৈতিক জীবনের একটা কাঠামো দাঁড় করায়। ফরাসি উত্তর-কাঠামোবাদী জ্যাক লাকা যেমনটি বলেছেন, মতাদর্শ এক একটা প্রতীকী আদেশের অন্তর্গত। জিজেক যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন মতাদর্শ বা ইডিওলজি প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় মানুষের অবচেতন মনের গোপন প্রকোষ্ঠে। আগেই বলেছি, জিজেকের ওপর হেগেলের প্রভাব সাংঘাতিক। তিনি তাঁর সমস্ত দার্শনিক আলোচনার মধ্যে কোনো না কোনোভাবে হেগেলের প্রসঙ্গ কিংবা তাঁর অনুস্মৃতি প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে মার্কস ও ফ্রয়েডকেও তিনি সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন, যেমন গুরুত্ব দিয়েছেন লাকার ওপর। ১৯৮৮ সালে তিনি তাঁর দ্বিতীয় পিএইচডি নিয়ে রচিত অভিসন্দর্ভের ওপর একটা বই লেখেন। বইটির নাম The Most Sublime of Hysterics: Hegel Passes। এর পরের বছর তিনি লেখেন তাঁর সর্বাধিক আলোচিত বই The Sublime Object of Ideology। মার্কসের মতো জিজেকের মতে, রাজনৈতিক জীবন গঠন করে এমন কল্পকাহিনি দ্বারা গঠিত হয় মতাদর্শ। জ্যাক লাকার পরিভাষায় মতাদর্শ প্রতীকী আদেশের অন্তর্গত। জিজেক যুক্তি দিয়ে দেখান এই কল্পকাহিনিগুলো প্রাথমিকভাবে একটি সচেতন স্তরের পরিবর্তে একটি অচেতন স্তরে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। তিনি একটি চমৎকার মানব মনের অনুষঙ্গ নিয়ে মানবহৃদয়ের গোপন প্রকোষ্ঠের কথা জানিয়েছেন। এর নাম তিনি দিয়েছেন ‘আননৌন নোন’।
আমেরিকান এক সময়কার ডিফেন্স সেক্রেটারি ডোনাল্ড রামসফেল্ডের বরাত দিয়ে বলছেন, রামসফেল্ড নাকি একটা বক্তৃতায় বলেছিলেন, “কিছু বিষয় আছে যা আমরা জানি যে আমরা জানি, কিছু বিষয় আছে আমরা জানি যে আমরা জানি না, আর কিছু বিষয় আছে আমরা জানি না যে আমরা জানি না।’’ জিজেক বলছেন, একটা বিষয় রামসফেল্ড বাদ দিয়েছেন, কিছু বিষয় আছে যে আমরা জানি না যে আমরা জানি। এটাই হচ্ছে আমার অজান্তে থেকে যাওয়া মনের গোপনে অবচেতন ঘরের খবর। আমরা যা করি, যা ভাবি, যা করতে চাই কিংবা যা করতে চাওয়া থেকে বিরত থাকি–সবই হচ্ছে ওই গোপনে ঘুমিয়ে থাকা মানব মনের কারসাজি। এটাই হচ্ছে ইডিওলজি। যেমন ধরুন একটা দেশের মানুষ কী ধরনের টয়লেট ব্যবহার করবে সেটা থেকেই বোঝা যায় তাঁর সংস্কৃতির মান। কেউ কনজারভেটিভ কি না কিংবা বিপ্লবী কি না অথবা ইউটিলিটারিয়ান কি না তা বোঝা যাবে তাদের টয়লেটের চেহারা দেখলে। জিজেক একটা অস্বস্তিকর উদাহরণ দিয়ে বোঝাচ্ছেন ব্যাপারটা। জার্মান দেশের টয়লেট, ফরাসি দেশের টয়লেট কিংবা অ্যাংলো-সেক্সন (বৃটিশ ও আমেরিকান) টয়লেট তিন ধরনের হয়ে থাকে। জার্মান দেশের টয়লেট তাদের কনজারভেটিভ মনের আকারে বানানো হয়। সেখানে পায়খানায় যাওয়ার পথটা থাকে কমোটে বসে থাকা মানুষটার সামনে। তিনি সেটা নিজের চোখে পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পারেন, ঠিক আছে নাকি কোনো সমস্যা আছে। অন্যদিকে ফরাসিরা বিপ্লবী। তাদের এই পথটা থাকে পেছনে। দেখাদেখির কোনো ধার তারা ধারে না। পড়বে তো পেছন দিক থেকে নেই! আবার অ্যাংলো-সেক্সন হচ্ছে এই দুই ধরনের এক অদ্ভুত সমন্বয়! কেমন? সেটা হচ্ছে পায়খানা সামনে ভাসতে থাকবে, স্বাধীনভাবে। কোন পথ দিয়ে সেটা নির্গমন হলো না হলো তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। মূলকথা হচ্ছে, স্বাধীন চলাচলের দৃশ্যের জন্য এরা প্রাগমেটিক আউটলুকে বিশ্বাসী। এটাকে অনেকে বলছেন, ইউটিলিটারিয়ান প্রাগমেটিজম। সেই একই কথা, এই টয়লেটগুলোর ডিজাইন নিয়ন্ত্রণ করছে তাদের মনের ভেতর অবস্থান নেওয়া অবচেতন ইডিওলজি বা মতাদর্শ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এটা আবার নতুন কী কথা? এসব কথা তো আমরা জানিই।
এ কথার গূঢ় রহস্য খুঁজতে আমি চোখ রাখলাম তাঁর The Sublime Object of Ideology বইটার ওপর। মানুষ যখন কোনো ইডিওলজি ব্যাখ্যা করে তখন তার মাথায় আসে একটা ‘বাদ’। যেমন মার্কসবাদ, উদারতাবাদ, সাম্যবাদ, জড়বাদ, ভাববাদ ইত্যাদি। জিজেক এই ইডিওলজি বিশ্লেষণ করতে মার্কসের অনুসারী হয়ে উঠেছেন। কিন্তু কীভাবে? মার্কস বলতে চেয়েছিলেন ইডিওলজি হচ্ছে একটা ধারাবাহিক ডিসকোর্স যা মানুষকে অনেক সময় কিছু মিথ্যা ধারণার দিকে ঠেলে দেয়। যখন মানুষ এই ইডিওলজি দিয়ে অভিষিক্ত হয়ে ওঠে তখন তাদের ভেতর এক ধরনের মিথ্যা চেতনা বা ফলস কনসাসনেস গড়ে ওঠে। আবার এই ইডিওলজি ছাড়া কিন্তু কোনো রাষ্ট্রকাঠামো বেশি দিন চলতে পারে না। কিন্তু সমস্যা হলো, এই ইডিওলজির আড়ালে রাষ্ট্র পরিচালনা বেশ পাকাপোক্ত করতে রাষ্ট্রের অধিবাসীরা বা রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিরা ভিন্ন পথের আশ্রয় নেয়। যেমন মধ্যযুগে ইউরোপে ধর্মই ছিল এই ইডিওলজির মূল ফাংশান। সার্ফদের বলা হতো, রাষ্ট্রনায়করা যা করবেন তা ওই ঈশ্বরের আদেশ মেনেই করবেন। এমন কিছু করবেন না, যাতে ঈশ্বরের সম্মতি নেই। কাজেই যারা এখানে শ্রমিক, কুলি, মজুর আর পতিত শ্রেণির মানুষ শুধু গায়ে খেটে মরছে; তারা ঈশ্বরের আদেশেই এসব করছে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে তাদের এই সামাজিক অবস্থা ঈশ্বরের আজানা!
মার্কস মনে করেন, এই তথাকথিত ধনতন্ত্রবাদ কিংবা উদারতাবাদ একই অবস্থার প্রকাশ। যেমন অধিকাংশ ইজরাইলি ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না। কিন্তু তাদের যখন বলা হয়, তারা কেন অধিকৃত ফিলিস্তিনে বাস করেন? তখন তারা উত্তর দেন, ঈশ্বর তাদের এই জায়গাটা দিয়েছে। কাজেই ঈশ্বরের আদেশ মেনেই তারা এখানে বসবাস শুরু করেছেন। কিন্তু এই ইডিওলজির আবার এক সময় সময়ের অপঘাতে মৃত্যু হয়। নতুন এক আইডিয়া এসে তাকে স্থানচ্যুত করে। এ যেন রবীন্দ্রনাথের কথায়, “হেথা হতে যাও পুরাতন,/ হেথায় নূতন খেলা আরম্ভ হয়েছে।/ আবার বাজিছে বাঁশি, আবার উঠিছে হাসি,/ বসন্তের বাতাস বয়েছে... ঢাকো তবে ঢাকো মুখ,/ নিয়ে যাও দুঃখ সুখ, চেয়ো না চেয়ো না ফিরে-/ হেথায় আলয় নাহি- অনন্তের পানে চাহি/ আঁধারে মিলাও ধীরে ধীরে।’’ এই পুরাতন ইডিওলজি তাই আঁধারে মিলে গেলে শুরু হয় আবার নতুনের খেলা। জিজেক মার্কসের এই আইডিয়ার সাথে যুক্ত করেছেন মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সংগঠনের বেশ কিছু অংশ। কাজেই তাঁর মতবাদকে বলা হয়ে থাকে “ইডিও-সাইকোলজিক্যাল” ডিস্পজিশন। অর্থাৎ ইডিওলজি শুধু একটা বায়বীয় ধারণা নয়, এর সাথে যুক্ত আছে মানুষের নির্জ্ঞান স্তরের লুকিয়ে থাকা গোপন চাওয়া।
একটা বিষয় আগেই লক্ষ্য করেছি জিজেক তাঁর ইডিওলজির ধারণা লাকার মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যার সাথে একীভূত করেছেন। এখানে একটা বিষয় লক্ষ্য করার মতো, লাকা মনে করেন আমরা এই বিশ্ব জগতের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করি ভাষার ভেতর দিয়ে, জগত যেভাবে প্রতিফলিত হয় সেভাবে জগতটা প্রকৃতপক্ষে যেমন তেমন করে জানতে পারি না। কাজেই এখানে একটা নিশ্চিতভাবে ফাঁকা থেকে যায়। ফাঁকাটা হচ্ছে জগতটা ঠিক যেমন আর আমি জগতকে যেমনটা দেখি। অধ্যাপক ডিনো ফ্রাংক ফেলুগা দারুণ একটা মন্তব্য করেছেন, “ইডিওলজি কোন সময় বাস্তব জগতকে প্রতিফলিত করে না, জগতের সাথে ব্যক্তির কাল্পনিক সম্পর্ক প্রতিফলন ঘটে ইডিওলজির মধ্য দিয়ে।’’ তবে আমরা কিন্তু প্রতিটা সময় ভাষার ওপর নির্ভরতার জন্য এই ইডিওলজির মধ্যেই বসবাস করছি, কাজেই বিভিন্ন ইডিওলজি হচ্ছে ভাষার ভেতর দিয়ে প্রকাশিত বাস্তব জগত সম্পর্কে বিভিন্ন বোধ। খুব সঙ্গত কারণেই, ইডিওলজি ভাষার হাত ধরে জগতকে বুঝতে সহযোগিতা করে। তাই ইডিওলজি কিন্তু আমাদের থেকে জগতকে লুকিয়ে রাখে না। এ সম্পর্কে জিজেকের একটা জোকস আছে। জোকসটা আমেরিকান কমেডি মুভি নিনটচকার (Ninotchka)। এক রেস্টুরেন্টে গিয়ে এক ভদ্রলোক চেয়ারে বসলেন। ওয়েটারকে বললেন, “ওয়েটার, আমাকে ক্রিম ছাড়া এক কাপ কফি দাও।’’ পাঁচ মিনিট পর ওয়েটার ফিরে এসে বলল, ‘‘দুঃখিত স্যার, আমাদের এখানে কোনো ক্রিম নেই। দুধ ছাড়া কি চলবে?”
এ গল্পে এটা বোঝা যাচ্ছে, ব্ল্যাক কফি কীভাবে অন্যের কাছে পরিবর্তিত হয়ে ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হতে পারে। এখানে ক্রিম ছাড়া কফি আর দুধ ছাড়া কফি মনে হচ্ছে যেন দুটো আলাদা। আদতে তারা এক। সেজন্য এটা পরিষ্কার আমাদের মনের অবচেতন স্তরে যে বোধ বাসা বাঁধে সেখান থেকে ইডিওলজি কাজ করে, যেমন ব্ল্যাক কফিকে একজন বলছে ক্রিম ছাড়া; অন্যজন দুধ ছাড়া। সূক্ষ্মভাবে বিচার করলে দেখা যাবে, গোটা পৃথিবী সম্পর্কে মানুষের ধারণাই এরকম, শুধু কফি না। তবে একটা বিষয় বাদ দিলে অসম্পূর্ণ থাকবে। জিজেক মনে করেন, আমরা প্রত্যকেই প্রচলিত মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হই, এমনকি যদি আমরা ভাবিও যে আমরা তা না। সেটা হচ্ছে, মুখে আমরা যতই অবজেক্টিভ বলি না কেন, ইডিওলজি সব সময় একটা সাবজেক্টটিভ বোধের প্রকাশ। এজন্যই রিচার্ড রোটি কিংবা টনি ব্লেয়ার মনে করেন, আমরা বর্তমানে একটা পোস্ট-ইডিওলজিক্যাল ফরমেট অতিক্রম করছি।
জিজেক অবশ্য ইডিওলজি নিয়ে আরেকটা ভিন্ন কথা বলেছেন। কেউ বিশ্বাস করুক বা না করুক মতাদর্শ বা ইডিওলজি নাকি কাজ করে! বিজ্ঞানী নিলস বোর নাকি তাঁর ঘরের সামনে একটা ঘোড়ার ক্ষুর ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। ইউরোপের লোকেদের এক সময় প্রবল বিশ্বাস ছিল, ঘরের সামনে যদি ঘোড়ার ক্ষুর ঝুলিয়ে রাখা হয়, তাহলে অশুভ আত্মা ঘরের ভেতর ঢুকতে পারে না! বোরকে যখন তাঁর বন্ধু জিজ্ঞেস করলো, কী ব্যাপার, তুমি না এসবে বিশ্বাস কর না। বোর নাকি উত্তর দিয়েছিলেন, আমি বিশ্বাস করি বা না করি আমাকে বলা হয়েছে এটাতে কাজ হয়। উত্তর-আধুনিক দার্শনিক হিসেবে খুবই সুনাম ছিল জুডিথ বাটলারের। জুডিথ ছিলেন আমেরিকান জেন্ডার থিয়োরিস্ট ও নামকরা ফেমিনিস্ট। একবার তাঁর সাথে জিজেকের বেশ ঝগড়া হয়। জিজেক অনেক বাজে কথা বলেন তাঁকে। পরে তিনি জুডিথকে ফোনে ক্ষমা চেয়ে নেন। জুডিথ উত্তরে বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে জিজেক। কোন সমস্যা নেই। এতে তেমন কিছু হয়নি। এই যে ‘তেমন কিছু না হওয়ার কথা’–এটাই আমরা বলে থাকি। এটাই ইডিওলজিক্যাল ফাংশান। যেমন আপনি বেশ টাকা পয়সার মানুষ। আপনার বন্ধুটা খানিকটা আর্থিকভাবে দুর্বল। রেস্ট্রুরেন্টে খাওয়া শেষে বিল দিতে গিয়ে আপনি টাকা বের করেছেন। বন্ধুটা বলে উঠল, থাক আমি দিচ্ছি। তখন আপনি বলে ওঠেন, না না আমিই দিব। আপনি নিজেই জানেন এটা একটা অভিনয়। এটা না করলে ঠিক ভদ্রতা হয়ে ওঠে না। এটাকেই অলিখিত ইডিওলজি হিসেবে জিজেক মনে করেন।
জিজেক মনে করছেন, মানুষ মনে করে আধিপত্যবাদী মতাদর্শগুলো অবশেষে তাদের কাছে এসেছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, তারা এতটাই ওই মতাদর্শগুলোর সাথে নিজেদের আবদ্ধ করে ফেলেছে যে মানুষ তাদের থেকে ওইগুলোকে আলাদাভাবে দেখেতে পায় না। তবে এটা ঠিক সমকালে অনেক দার্শনিক কিন্তু জিজেককে বড্ড অপছন্দের তালিকায় রেখেছেন। নোয়াম চমস্কি তাদের একজন। চমস্কির সাথে লাকার ঝগড়াঝাটি অনেকেরই জানা, যিনি লাকাকে একজন হাতুড়ে ডাক্তার হিসেবে তাচ্ছিল্য করেছেন।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে এটা বলতেই হবে, পাশ্চাত্যে জিজেকের অবস্থান অতুলনীয়। ইচ্ছাকৃত উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং হাস্যরসের সাথে গভীর বক্তব্য উপস্থাপনের যে কৌশল সেজন্য পাশ্চাত্যে তার বিশেষ ভক্তকূল গড়ে উঠেছে। এজন্য অনেকেই মনে করেন, বিশ ও একুশ শতকজুড়ে তার মতো বুদ্ধিজীবী এবং বহুমাত্রিক উপস্থাপক খুব বেশি দেখা যায় না।
এসইউ/এএসএম