মেহেরুন্নেছার তিনটি কবিতা
লাল সবুজের পতাকা হয়ে
মেয়েটি হাঁটছে বাহারি চুড়ি পরে
আলতা রাঙা পায়ে
নূপুর নিক্বণের তালে তালে
রঙিন কাপড়ে রঙিন ফিতায়
একেবারে পথের দেবী হয়ে।
ছাতিম গাছটি ব্যাকুল হয়ে পড়ে,
বলে, ও মেয়ে তুমি কে গো?
চমকে ওঠে মেয়েটি!
চারদিকে তাকায়
কাউকে দেখতে না পেয়ে
কড়ই ভাজা
মুখে পুরে,
ডিমা শাক তুলতে
ছন্দ ছড়িয়ে ছুটতে থাকে।
ছাতিম এবারো বলে,
ও মেয়ে থামো!
ও মেয়ে থামো!
কিন্তু সে বেপরোয়া, বলে,
ওই যে আমার ওমুক ভাই
ওই তো ওমুক চাচা
সুতরাং নেই কোনো ভয়!
তারপর!
সেদিনের পরদিন
আধামিনিটের তরে
যেন পৃথিবীর সকল শিঞ্জন
থেমে গিয়েছিল! কারণ,
মেয়েটি পড়েছিল
রক্তমাখা কাপড়ে
ঠিক ছাতিমের সামনে
ভাঙা চুড়িগুলোর অদূরে
লাল সবুজের পতাকা হয়ে।
****
মৃতদের শহর
যখন সূর্য আরেক পৃথিবীতে
প্রান্তের ওপারে দিগন্তে
আঁধার নামে মাছরাঙা হয়ে,
টিংটিঙে শরীরে কৈলাস ভর করে
চিরকালীন মৃত্যুও ঝুলে থাকে সেখানে
লকলকে জিহ্বা নিয়ে,
অথচ আবারও জন্ম নেয় সে
ব্যাকুলতায়, সানন্দে
রূপকথার হাইড্রার মতন।
যেন এই মৃতদের শহরে
একমাত্র জীবিত সে
শুষ্ক মাটিতে
অবিরাম রক্ত ঢালে
অবলীলায়
বিরতি না দিয়ে
একটি স্বর্ণচাঁপা
পাবার আশে...
****
জলের পতঙ্গ
জলের সঙ্গে
কথা বলতে গিয়েছিলাম...
না না! জলের ভেতর যে বালিয়াড়ি
তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম
ভাবলাম, হেমন্তের পাতা তবে এটি
এই ভেবে বোকার মতন
স্পর্শ করতে গেলাম
অমনি জলপ্রপাত নেমে এলো
ভেসে গেলাম আমি
অতলে তলিয়ে গেলাম তাতে!
আমি জানলাম
এখানে জলের পতঙ্গরা
অমাবস্যার যাত্রী হয়
অথচ জোনাকি পোকার দল
কেবলই তাদের
হাতছাড়া হয়ে যায়...
এসইউ/জেআইএম