স্বাধীনতা ও শেখ মুজিব
গাজী আজিজুর রহমান
বিদ্রোহী পশতু কবি খোশাল খাটক বলেছিলেন, ‘রক্তাক্ত হাতী ও আহত বাঘকে শৃঙ্খলিত করা যায় কিন্তু আমাকে নয়’। কথাটি যেন আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সিংহপুরুষ, সংগ্রামের বরপুত্র, ইতিহাসের অমর নায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে উৎসর্গিত। এই মহাযোদ্ধার তেইশ বছরের বিরামহীন সংগ্রাম, উপপ্লব, দ্রোহ, স্বাধীনতার স্পৃহা ও উদ্দীপনা এবং দুর্বিনীত সাহসের ওপর ভর করে সাত কোটি বাঙালি গড়ে তোলে এক দুর্জয় ঐক্য, ঝলসে ওঠে এক ইস্পাত কঠিন প্রত্যয়ে। ‘হয় স্বাধীনতা না হয় মৃত্যু’—এই সুনৃতির সংশিত পরিণাম যুদ্ধ এবং যুদ্ধ শেষের প্রাপ্য স্বাধীনতা—সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের রক্তের মতো সত্য।
হাজার বছরের বাঙালির ইতিহাসের বোধ হয় সবচেয়ে কালো অধ্যায় তেইশ বছরের ঔপনিবেশিক পাকিস্তান আমল। অথচ সেই কালো সূর্যের নিচেই হয়েছিল বাঙালির বহ্নি উৎসব, অর্থাৎ বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ ও বিজয় উৎসব। দু’শ বছরের ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে বাঙালি তেইশ বছর অবর্ণনীয় যাতনার শিকার হয় পাকিস্তানি নয়া উপনিবেশের। এই কালবলয়ে পূর্ববাংলার মানুষ, বিশেষত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা জেল-জুলুম, অত্যাচার-নিগ্রহ-নিপীড়নের শিকার হয় প্রতিনিয়ত। বাংলার নগর ও গ্রামে অধিকার ও বেঁচে থাকার প্রশ্নে কোনোভাবেই তারা মুক্ত ছিল না রক্তপাত ও মৃত্যুর থাবা থেকে। তারা যেন স্বদেশে ছিল পরবাসী, স্বগৃহে গৃহহারা। যেন তাদের হাত-পা মুখ ছিল বাঁধা, চলার পথে ছিল কাঁটা আর বিকাশ ছিল বন্ধ্যা।
এভাবে শত শৃঙ্খলা, প্রতিবন্ধে তৎকালে বাঙালির যাপিত জীবন ছিল শ্রীবৃদ্ধিহীন, সৃজনহীন, আনন্দহীন এক জড় জীবন। বাঙালিদের জীবনে কোনো সুখ-সমৃদ্ধি ছিল না, সুখবর ছিল না, আশার আলো ছিল না, ছিল না কোনো আত্মপরিচয়, যেন এক নরকে আছি—এমন এক অদ্ভুত দেশের বাসিন্দা ছিল বাঙালিরা। কেবল শাসন আর শোষণ, কেবল বঞ্চনা আর বঞ্চনাই, কেবল নিগ্রহ আর নির্দয়তায় দগ্ধ হওয়া। বাঙালির জীবনবৃত্তান্ত বলতে ছিল নিষ্ফল আর্তি, বৈষম্যের জাহান্নামে বাস আর হত অপমানে হত হওয়া। এই যখন বাঙালির রূঢ় বাস্তবতা, বাঙালির নিদারুণ নিয়তি তখন টেলিমেকাস বেশে, হারকিউলিস বেশে, ত্রাতার রূপকল্পে আবির্ভূত হলেন বাঙালির রাখাল রাজা, লোকপুরাণের নায়ক, সিন্দাবাদ—শেখ মুজিব।
বাঙালির এই চাঁদ সওদাগর বা ওডিসিয়ূস হাজার হাজার মাইল পথ পরিক্রম করে, সকল দুর্দৈবকে পদদলিত করে, হিস্ট্রি অব ট্রাজেডিকে পরাজিত করে গ্রিক বীর ইনিয়াসের মতো প্রতিষ্ঠা করলেন এক নতুন দেশ, নতুন ইতিহাস। এই অভীষ্টিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে বাঙালির মহাকাব্যের কবিকে লং মার্চ করতে হয়েছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, তেঁতুলিয়া থেকে সুন্দরবন। এই জার্নিতে তিনি বাংলার প্রতিটি মানুষকে সাথে নিয়েছেন, সঙ্গী করেছেন, বন্ধু ও ভাই হিসেবে সংগঠিত করেছেন বিসুভিয়াসের উষ্ণতায়। তাদের আশাহীন, ভাষাহীন, স্থবির জীবনে সঞ্চারিত করেছেন দেশপ্রেমের প্রবণ, সংগ্রামের স্ফুলিঙ্গ, স্বাধীনতার এষণা, মুক্তির মন্ত্র এবং জয় করার অভিলাষ। তাঁকে ঘিরে বৃত্তাবদ্ধ হয়েছে মানুষ, তৈরি করেছে ব্যুহ ও বর্ম, বিক্রম ও বজ্রনাদ। তিনি ভায়োলেন্সের ভায়োলিনের মতো বাঙালিকে শিখিয়েছিলেন জীবন জাগরের গান গাইতে, যুদ্ধ করে বাঁচার অর্ফিয়ুসের সংগীত তুলে দিয়েছিলেন তাদের কণ্ঠে। তা দিয়েই হয়েছিল শত্রু হনন, শত্রুর বিনাশ। তবেই না বাংলার স্বাধীনতা।
কোথায় রাজা শশাঙ্ক, কোথায় বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার অধিপতি সিরাজউদ্দৌলা, কোথায় বা হাজী শরীয়তুল্লা, তিতুমীর আর কোথায় হক-শ্যামার শাসন ও সংগ্রাম—কেউ এই রুগ্ন, বিপন্ন জনগোষ্ঠীর শিরায়-শোণিতে সঞ্চারে সক্ষম হয়নি বাঙালির চির মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। কিম্বা ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়নি তাদের গৌরবগাথা, মহত্ব বা ঐতিহ্য পুরাণকে। বাঙালির যে আশ্চর্য প্রাণশক্তি আছে, সংগ্রামী সংবেদন আছে, মেলবার মানসিকতা আছে, আছে সংগঠন তৈরির সংস্কৃতি—শেখ মুজিবই দিয়েছিলেন তার সূর্য চেতনার উত্তাপ। বাঙালি দরিদ্র হতে পারে কিন্তু হীনবল নয়। বাঙালি আকারে-প্রকারে ছোট হতে পারে কিন্তু জাঁ পল সার্ত্রের মতো রয়েছে তাঁর মাথা নত না করার দ্রোহিতা। বাঙালি শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়তে পারে কিন্তু জঙ্গম সংস্কৃতিতে তার রয়েছে কিংবদন্তিতুল্য অবদান। সে পেয়েছে আব্দুল হাকিম, তিতুমীর, ক্ষুদিরাম, সিধু কানু, মাস্টার দা, বিনয় বাদল দীনেশ, প্রীতিলতা, ইলা মিত্র, রোকেয়ার উজ্জ্বল উত্তরাধিকার। সুভাষ বসু, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত তার বিপ্লবী চেতনার আলোকস্তম্ভ। সুতরাং বাঙালির পক্ষে সব অসাধ্যই সাধন করা সম্ভব।
শেখ মুজিব নিকট ও সুদূরের ইতিহাস থেকে পাঠ নিয়েছিলেন বাঙালির ও বাংলার। পাঠ নিয়েছিলেন তাঁর ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতির। এক্ষেত্রে তাঁর আদর্শ ছিল—গান্ধী, সুভাষ বসু, শেরেবাংলা, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী ও রবীন্দ্র-নজরুল। তাঁর সরব চেতনায় ছিল আমেরিকার স্বাধীনতা আন্দোলন, ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, চৈনিক বিপ্লব ও ভারতবর্ষের অগ্নিযুগের অগ্নিপ্রভা। আর জাতীয়তাবাদী চেতনার আঁচটি তিনি নিয়েছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের দীপ্যতা থেকে। জর্জ ওয়াশিংটন, লেনিন, মাও সে তুং, গান্ধী, কামাল পাশা ছিলেন তাঁর সংগ্রাম ও স্বাধীনতা প্রেরণার উৎস ধারা। তিনি উপরোক্তদের কাছ থেকে আরও লাভ করেছিলেন উদার নৈতিকতা, মানবতা, অসাম্প্রদায়িকতা ও মানব প্রেমের পরম্পরা। সব মিলে কড়ি ও কোমলে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক অলোকসামান্য আলোকিত পুরুষ। দেবদারু বৃক্ষের ঋজুতা, নরম নদীর নিরবধিতে এবং কুসুমিত ইস্পাত দ্বৈরথে তিনি ছিলেন এক সাব্যসাচী ব্যক্তিত্ব।
একটি জাতি ও রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য কী, অহংকার কী, অনন্যতা কী, কিসে তার উন্নতি ও বিকাশ, কোন মত, পথ ও আদর্শে তার সমৃদ্ধি ও শ্রীবৃদ্ধি তা নির্ভর করে সেই জাতি কতটা স্বাধীন বা স্বাধীনতা ভোগ করে তার ওপর। কিন্তু যে জাতি মোটেই স্বাধীন নয় সে জাতির এসব বিচার বা মূল্যায়নের কোনো মাপকাঠি নেই। তাই সর্বাগ্রে প্রয়োজন একটি জাতির স্বাধীনতা। কেবল স্বাধীনতা থাকলেই একটি জাতির সৃজনের মাধ্যমে এসব উপচারের বিকাশ সম্ভব স্বমহিমায়। কিন্তু পাকিস্তানিদের ঔপনিবেশিক শাসনে-শোষণে চাপিয়ে দেওয়া সংস্কৃতির আগ্রাসনে আরাধ্য মহিমায় উদ্ভাসিত হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না পূর্ব বাংলার মানুষের। বরং দিনকে দিন কুঞ্চিত হয়ে আসছিল আবহমান বাঙালির ভাষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার ও জীবনবোধসমূহ। এভাবে যদি চলতে থাকে বাঙালির জীবনপ্রবাহ তাহলে অচিরেই যে বাঙালির বাঙালিত্ব থাকবে না, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-জীবনানন্দের বাংলা থাকবে না, থাকবে না তাদের জাতীয়তার আইডেনটিটি—এ সত্য নির্মমভাবে বুঝেছিলেন শেখ মুজিব। আর বুঝেছিলেন বলেই কারো জন্য প্রতীক্ষা না করে দ্রুত পাকিস্তানি উপনিবেশি শাসনকে উৎখাত করার মানসে বাঙালি জাতির মুক্তির সব পর্বত প্রমাণ দায়ভার তুলে নিলেন আপন স্কন্ধে।
কৈশোরে যে রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে স্বগ্রামে, অতঃপর কলকাতার শিক্ষা জীবনে, আরও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়, তারপর দলীয় রাজনীতির আবহে, সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন এক অসম যুদ্ধে। ফ্যাসিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ-আগ্রাসনবাদ-উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমে শুরু হয় তাঁর জেল ও নিগ্রহ জীবন। ততদিনে তিনি পরিণত হয়েছিলেন জননায়কে, জনতাই ছিল তাঁর শক্তির উৎস, কর্মের প্রেরণা। বাহান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে তার রাজনৈতিক জীবন জ্বলে ওঠে মধ্যাহ্ন সূর্যের মতো। একে একে আওয়ামী লীগের গুরত্বপূর্ণ পদে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন, তরুণ সাংসদ হয়ে, মন্ত্রিত্ব লাভ করে তিনি তাঁর সংগ্রামী রাজনৈতিক প্রতিভার স্বীকৃতি আদায় করে নেন। কিন্তু তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল বাঙালির মুক্তি, বাংলার স্বাধীনতা। সে লক্ষ্যে জেলের পর জেল, জুলুমের পর জুলুম সহ্য করে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গড়ে তোলেন দুর্দম্য গণআন্দোলন। গণমানুষের দাবি ছয় দফার (১৯৬৬) মাধ্যমে তিনি বাঙালিকে করেন একাট্টা। তিনি ম্যান্ডেট লাভ করেন স্বায়ত্তশাসনের পথ ধরে স্বাধীনতার। হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত জননায়ক। ষাটের দশকেই দেশ-বিদেশের কাছে প্রমাণে সক্ষম হন তিনিই হবেন বাঙালির মুক্তির মহানায়ক। যেমন বিশ শতকের প্রথম থেকেই জানা গিয়েছিল লেনিনই হবেন রুশ জনগণের মুক্তির মহানায়ক, চল্লিশের দশকে চীনের মাও সে তুং, ভারতের গান্ধী এবং ভিয়েতনামের হো-চি-মিন, তেমনি বাংলার লোকনায়কের অভিধা অর্জন করলেন শেখ মুজিব। শত পীড়নেও তাই স্বাধীন সোনার বাঙলার স্বপ্ন থেকে একচুলও বিচ্যুত হলেন না, এমনকি মৃত্যুর বিনিময়েও না। গোটা ষাটের দশকে তাঁর মতো জননন্দিত নেতা, সংগ্রামী নেতা, ত্যাগী নেতা, অকুতভয় নেতা বিশ্বে বিরল। দুনিয়া কাঁপানো এই জননেতাকে তাই মহাকাব্যের নায়কের মর্যাদায় অভিষিক্ত হতে সময় লাগেনি মোটেও।
আন্দোলন থেকে দূরে রাখতে, ধাবমান অশ্বকে প্রতিহত করতে একের পর এক রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা, ষড়যন্ত্র মামলা, বিশেষ আইনে মামলা করে শেখ মুজিবকে থামানোর চেষ্টা, ভীত-সন্ত্রস্ত করার উপচেষ্টা করেছিল পাকিস্তান সরকার। কিন্তু ‘ভয় কী মরণে’ বা ‘আমি মৃত্যুর চেয়ে বড়ো’ বলে ভ্রুকুটি করে নিজেকে ও অপরকে দিয়েছিলেন বরাভয়। সেই আশ্বাস ও বিশ্বাসে জনগণ বারবার তাঁর আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গেছে রক্তের বিনিময়ে, মৃত্যুর বিনিময়ে। ১৯৬৯-এ গণঅভ্যুত্থানের সফলতা, ১৯৭০-এর নির্বাচনে তাঁর দলের নিরঙ্কুশ বিজয় স্বাধীনতার পথকে করে তোলে সুগম বা অসম্বাধ। এই সুযোগেই তিনি ডাক দিলেন স্বাধীনতার, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ (৭ মার্চ, ১৯৭০), আর তিনি হয়ে উঠলেন বাঙালির গ্যারিবল্ডি, আর বাংলার তিমিরবিনাশের প্রতীক।
মানব সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ উপহার স্বাধীনতা। কবি তাই বলেন, ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়’, কেউ বাঁচতে চায় না গাধা-গরু ছাড়া। কিন্তু স্বাধীনতা এত বিশাল এক প্রাপ্য যা চাইলেই মেলে না। এ কেড়ে নিতে হয় যুদ্ধ করে, রক্তগঙ্গা বইয়ে, প্রয়োজনে খাণ্ডবদহন করে। একটি দেশের অন্তত আশিভাগ মানুষের সমর্থন ছাড়া স্বাধীনতা মেলা অসম্ভব। আনন্দের বিষয় শেখ মুজিবের ডাকে বাংলার নব্বই ভাগ মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল বলেই মাত্র নয় মাসের যুদ্ধে আমরা ছিনিয়ে এনেছিলাম স্বাধীনতা নামক সোনার হরিণটিকে, যার প্রায় গোটা কৃতিত্বটাই ছিল শেখ মুজিবের (তখন বঙ্গবন্ধু) ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বের গুণবত্তায়। সে অর্থে তিনি ছিলেন আমাদের হ্যামিলনের বংশীবাদক। তিনি সেই দুধের ফেরিওয়ালা যিনি দূতের মতো বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছিলেন স্বাধীনতার স্বাদ।
পঙ্কে নিমজ্জিত রাশিয়াকে যেমন নবজন্মের উৎকর্ষতা দিয়েছিলেন লেনিন, চীনকে মাও সে তুং, তেমনি তিনি বন্দি শিবিরে থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট বাঙালিকে মুক্ত করে আলোকের ওই ঝরনা ধারায় উৎসারিত করেছিলেন বাংলাদেশকে। তাই স্বাধীনতা ও শেখ মুজিব যেন একই সত্যের এপিঠ ওপিঠ। শেখ মুজিব ও স্বাধীনতা যেন একই বৃন্তে দুটি কুসুম।
আজকে আমরা যদি বাঙালির স্বরূপ সন্ধান করি, বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতার সন্ধান করি, ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল মনশ্চেতনার সন্ধান করি তাহলে যেতে হবে শেখ মুজিবের বিশাল হৃদয়ের কাছে। তিনি না জন্মালে আমাদের গাওয়া হতো না—আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। বলা হতো না বাঙালি বীরের জাতি, ওড়ানো হতো না লাল-সবুজের পতাকা। তিনি বাঙালির কাছে চেগুয়েভারায় আলেন্দের চেয়ে বড়ো বিপ্লবী। তিনি বাঙালির কাছে গ্যারিবল্ডি-গান্ধীর চেয়ে মহান জাতির জনক। তিনি বাঙালির কাছে সব পেয়েছি দেশের উপমা। সর্বঅর্থে তিনিই আমাদের স্বাধীনতার মহাকাব্যের কবি, মুক্তির পারাবত, সৃষ্টি ও নির্মাণের মন্দাকিনী।
লেখক: ভূতপূর্ব অধ্যাপক, কালিগঞ্জ সরকারি কলেজ, কালিগঞ্জ, সাতক্ষীরা।
এসইউ/জেআইএম