শায়লা জাবীনের কবিতা: যাযাবর ও ঘুণ
যাযাবর
খুউব ইচ্ছে করে রিক্ত হৃদয়ে বেরিয়ে যাই দূরান্তরে
যাযাবরের জীবন যেমন আজ এখানে কাল তেপান্তর
সুতোর বাঁধন কেটে দিয়ে বিনি সুতোর মায়া উপেক্ষা করে
উদোম পায়ে হেঁটে হেঁটে হাজার নিযুত মাইল পেরিয়ে
অনেক তো হলো, আর কত এইসব দিন-রাত্রি
একঘেয়ে নিরামিষ চাখতে দেখতে বড় অভক্তি
স্রষ্টার নিয়মের বেড়াজাল আপনজনের মায়াজাল
অধিকতর বিশৃঙ্খল সমাজের মানুষ সকল
খালি দলাদলি বিলাপ, গড়াগড়ি, কাঁদা ছোড়াছুড়ি
লাজলজ্জা ভদ্রতার কোনো বালাই নেই কোথাও
শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে, কোথাও কি শুদ্ধ বাতাস আছে?
ধুলোবালি নুড়ি পাথর ছাড়িয়ে, অ্যাসিড বৃষ্টি এড়িয়ে
কদাচিত পথিমধ্যে ঘাসফুলের বিদ্রোহী গলা সরিয়ে
অমাবস্যার আঁধার, বাদুড়ের সজাগ চাহনী বদ্ধ জলাশয়
সাঁতরে পাড়ি দেবো কৈ মাছের প্রাণ
পিছুটান পিছে ফেলে সামনের পথে আগুয়ান
শোনো বাদামি চোখের ছেলে
তোমার অপেক্ষা করছে না আর বাদামি চোখের মেয়ে
শুনে রেখো মন খুলে
বিবাগী অন্তর আর বসে না আড়ংয়ের সংসারে
দায়িত্ব কর্তব্য ভাগ বাটোয়ারা...
শাড়ি গহনা সব নিয়ে যা তোরা
আমার শুধু চিত্রা হরিণ মেঘ বৃষ্টি চাই
কাঠঠোকড়া যুগ যুগ ধরে ঠোকর কেটে গেছে
বুলবুল সাথী হতে চায়, ময়না বেশি বলে মিছে
ঈগল কেন তীক্ষ্ণ নজর মেলে উড়ে উড়ে পালায়
শুকসারি গুড় পাটালি চৈতালি বাতাস
তবুও মন খুঁজে ফেরে দক্ষিণা হাওয়া ছন্নছাড়া
হিমালয় চূড়া, ঝরনার কান্না
না না না কিচ্ছু চাই না...
তোমার হাসি আমার কান্না ফেলে দিলাম রিসাইকেল বিনে
রাম শাম যদু মধু চন্দ্রিমা আর বিদিশার জাদু
ঘন আঁধারে বন-জঙ্গলে ঝাঁকে ঝাঁকে জোনাকি ঠেলে
অশ্বত্থ গাছের বেদীমূলে বসে ধ্যানে মজে যেতে চাই
এনেছি আমার শত জনমের সাধ
ভবঘুরে জীবন চাই
ধ্যানমগ্নতা হেথায় সেথায়
নিরঙ্কুশ স্থবিরতায় মহাকালের নিস্তব্ধতায়
দোহাই লাগে মনে রেখো না কেউ আমায়
হাজার হাজার বছর পরেও আমি যাযাবর জীবন চাই...
****
ঘুণ
জগতের মাঝে এক নিঃশব্দের ঘোর
তোমায় নিয়ে যাবে অন্তরের ভেতর
ঘুণ পোকার মতো কুড়ে কুড়ে খাবে
কারোর কিছুই না আসবে যাবে...
অস্থি মজ্জা রুবী পান্না
দুঃখ বেদনা মরা কান্না
চৌকাঠ ঢোল উঁইয়ের জ্বালায়
আবলুস কাঠ গুড়ো গুড়ো হয়ে লুটায়
চোখে পড়ে দন্তবিকশিত হাসি
দীর্ঘশ্বাসরা পালিয়ে বেঁচে যায়
কেবল প্রেমেই কিছুটা স্বস্তি...
আনন্দ বেদনা কাটাকাটি
দুঃখ-কষ্টের মিশেলে অদ্ভুত প্রাপ্তি
ভালোবাসা যে ফিনিক্স পাখি,
পুড়ে যায় তবুও মরে না
প্রাণ নিয়ে ধরা দেয় না...
ভালোবাসা তো দাবানল নয়
ভীষণ এক মায়া,
প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি আমলে নিলে
মিলবে না তো ছায়া...
প্রবোধবিহীন জীবন
আনন্দে ভাসি যখন তখন
সহ্য করতে বড্ড জ্বালা
অবিরত মুখভার...
দৃষ্টি দূরে কোথাও
ঘুঙুরে ধুলো জমে যায়
তানপুরা অস্পৃশ্য পড়ে রয়
না চাইতেই গলার স্বর ক্ষয়
সকলে আনন্দে গা ভাসায়...
তাই আমি দুঃখ ফেরি করি
সুখগুলোকে আড়াল করে
কেঁদে কেটে মরি
পাছে কেউ সুখ দেখে মোর
হিংসায় ডুবে যায়
তাহলে যে দু’ছটাক সুখও পালিয়ে যাবে হায়।
এসইউ/জেআইএম