তাসমিয়া তহুরার চারটি কবিতা
অস্তিত্ব সংকট
পাতাঝরার পৃথিবীতে নির্মলতা যেন ঘুমের আয়ু।
নিঃশেষ হয়েও বেঁচে থাকে, সগৌরবে গজায়। সূর্য ডুব দেয়, আঁধারে তলায় পৃথিবী।
নিস্তব্ধতা আসে।
হৃদয়ের বেলকনিতে জেগে ওঠে সূর্যস্নাত সকাল।
বিত্ত-বৈভবের বেড়াকলে এভাবেই কেটে যায় কিছু বসন্তবিলাস।
অশ্লীলতার চাদরে মোড়ানো বিবেকে যৌবন কেবলি ধ্বংস জলোচ্ছ্বাস।
তন্দ্রালয়ে সুখ নেই, মানুষে নেই মানবিকতা।
পাগলের প্রলাপ আজ বিচার চাওয়ার অধিকার!
প্যাকেটভর্তি সনদে অভিশাপের দুর্গন্ধ!
আমার অস্তিত্বে ভেজাল উড়ে পাতাঝরার মতো।
বাতাসে কানাকানি করে কিছু সংকটাপন্ন শব্দ।
আমি শুনতে পাই কিছু আত্মচিৎকারের বয়ান।
****
শর্তহীন প্রেম
ইচ্ছে করে অসীম নীলাকাশে বৈকালিক মেঘের মতো উড়ি;
মেহগনিঘেরা পুকুরপাড়ে জিড়িয়ে নিই ক্লান্তির ছাপ ঢেকে।
ধরে নিই এ জীবন তোমার জন্য ধার করা।
আমি অত্যধিক স্বপ্ন আঁকি তোমার চোখ নীলিমায়।
যদি তুমি ডাক দাও, ফিরবো পশ্চাতে।
এ আমার শর্তহীন প্রেম।
****
দিব্যি বেঁচে আছি
এভাবেও বেঁচে থাকতে হয়!
অস্তিত্বের বেলকনি ভেঙে মাথায় পড়লেও উঁহু শব্দটা উচ্চারণ করতে মানা!
যার মায়ায়, মহত্বে বেড়ে ওঠা।
যে ছিল নিকষ কালো অমাবস্যার ক্লান্তিহীন জোনাক জ্বলা আলোর পিদিম।
কষ্টের পাহাড় পিঠে চেপে যে ছিল কি না আমাদের অভয়াশ্রমের পথ।
শত আবদার-আয়েশের বাস্তবিক আবাসভূমি।
আমার আত্মায়, আমার অবয়বে যার ছিল নিরঙ্কুশ রেখাপাত, সে চলে গেছে সংসার স্বপ্নে।
সে চলে যাওয়ার সাথে আমাদের দোতারার সুরে ছেদ হয়েছে বৈকি তবুও বেঁচে আছি;
বেঁচে থাকতে হয় বলে।
ঘুমালে জাগতে হয় পৃথিবীর আলো দেখার প্রলয়োল্লাসে।
কত দিবস-রজনী চলে যায়, শুধু আমার পাড়ি দেওয়া হয় না পৃথিবীর পথ।
ভেবেছিলাম তাকে ছাড়া বেঁচে থাকাটা নিরর্থক; নির্ঘাত মনোকষ্টে মারা যাবো।
এই ভাবুন--
আমি এখনো দিব্যি বেঁচে আছি।
বড় হতে হতে হারিয়েছে বটবৃক্ষ বাবা, অভিযোগের কাতারের বন্ধুত্ব।
বিকট হারে বেড়েছে কাক-শকুনরূপী মানুষের আনাগোনা।
মনের অগোচরেও অনেকে হারায়, পর হয়।
শুধু প্রকাশিত হয় না আমার হারিয়ে যাওয়া বা বিদায়বেলার বিজ্ঞপ্তি।
কেউ খোঁজে না নদীগর্ভে বিলীন হওয়া একসময়ের কূলের খবর।
মনের দু’কূল ছাপিয়ে শুধু থেকে যায় মধ্যরাতের নিস্তব্ধ একাকিত্ব!
****
ভালোবাসা
আমার অবলুপ্ত ভালোবাসা ফিরিয়ে দাও।
নগ্ন প্রকৃতির আকাশ ভরা তারায় পৌঁছে যাক মুক্ত কবিতা।
ছড়িয়ে দাও আমার মনের অন্তস্থলে তোমার সবটুকু ভালোবাসা।
ভালোবাসার বিশুদ্ধতার ছন্দে
নির্মোহ জলরাশিকেও জানিয়ে দাও
যেখানে নেই কোনো হানাহানি, এমনকি কোন যন্ত্রণার অঙ্কুর।
সবুজে ঘেরা মাটির পৃথিবী যেমনটা নিতান্তই আমার ঠিক তেমনি করে
আমিও যে তোমার, জানিয়ে দিও।
ভালোবাসার নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে ইতিহাসে আখেরি চিহ্ন এঁকে যেও,
শুধু আমায় ভালোবেসে।
এ আমার করুণ মিনতি!
তোমার আমার মাঝখানে সমস্ত বিশ্বাস-অবিশ্বাসের গরল মন্থন করে
ভালোবাসার অকৃত্রিমতায় ছুঁয়ে দিও বিধাতার শ্রেষ্ঠ উপহার।
এসইউ/এএসএম