আজ একলা থাকার দিন
তেত্রিশ বছর কাটলেও যখন কেউ কথা রাখে না; তখন তো একলাই থাকতে হয়। শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যায় না কেউ। একলা থাকার এই সময়টাকে তাই যাতনাময় মনে হতে পারে। ভাবনা-যাতনার এই সময় যেন কাটতেই চায় না। উতলা মন খোঁজে ভালোবাসা। কবি তাই তো বলেন—
‘সখী, ভাবনা কাহারে বলে। সখী, যাতনা কাহারে বলে।
তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’—
সখী, ভালোবাসা কারে কয়! সে কি কেবলই যাতনাময়।’
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
মূলত যাতনার শেষ নেই। ভালোবাসা খোঁজা বা সঙ্গীর দেখা পাওয়াও সাধনার ব্যাপার। ঠিক ‘তন্ন তন্ন করে একশ আটটি নীলপদ্ম’ খোঁজার মতো। এমনকি কেউ একজন আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন, এমন ভাবনার জন্যও একলা থাকার মানে বুঝতে হয়। একাকিত্ব কাটাতে নিজেকেই বলতে হয়—
‘তুই কি আমার দুঃখ হবি?
এই আমি এক উড়নচণ্ডী আউলা বাউল
রুখো চুলে পথের ধুলো
চোখের নীচে কালো ছায়া।
সেইখানে তুই রাত বিরেতে স্পর্শ দিবি।
তুই কি আমার দুঃখ হবি?’
(আনিসুল হক)
মাঝে মাঝে বিস্ময় জাগে, মানুষ কেন একা? ঠিক তার জন্মের মতো। ঠিক তার মৃত্যুর মতো। কেন নিঃসঙ্গ বসে অশ্রুপাত করে। একটু স্পর্শের জন্য উতলা হয় মন। কেন ‘কেউ কথা রাখে না’। কেন কেউ বলে না, ‘তোমার চোখ এত লাল কেন’
কিংবা ‘তুই কি আমার দুঃখ হবি?’ হয়তো বলে, কিন্তু আমরা শুনতে পাই না বা বুঝতে পারি না।
আবার মাঝে মাঝে মনে হয়, চারপাশে এত মানুষ; তবুও মানুষ কেন নিঃসঙ্গ? ভেতরে ভেতরে কেন একাকিত্ব বোধ করে? তাহলে কি একাকিত্ব বা নিঃসঙ্গতা আপেক্ষিক? এত কোলাহলের মাঝেও নিজেকে একলা ভাবার জন্য গোপন যাতনা জরুরি? হয়তো তা-ই। অন্তঃকরণে বৈরাগ্যের বাঁশি বেজে উঠলে কোনো কোলাহলই তাকে স্পর্শ করে না। করতে পারে না।
তাই একাকিত্ব দূর করতে গিয়ে ভুল মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন না। তার চেয়ে বরং ভালো, অপেক্ষা করুন। কবি যেমন তার বন্ধু কিংবা শত্রুর জন্য অপেক্ষা করেছেন—
‘আমি বন্ধু, পরিচিত-জন, এমনকি—শত্রুর জন্যেও
অপেক্ষায় থেকেছি,
বন্ধুর মধুর হাসি আর শত্রুর ছুরির জন্যে
অপেক্ষায় থেকেছি—’
(রফিক আজাদ)
ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার চেয়ে একলা থাকাই মঙ্গল নয় কি? ভুল করে ফুল যদি খসে পড়ে, তবে তা পায়ে পিষে নেওয়ার আগে একটু ভাবুন। জীবনকে বিষিয়ে তুলবেন না। আনন্দময় করে তুলুন। বন্ধু, পরিজন, সঙ্গী বেষ্টিত জীবন কাটান। বেদনাকে সঙ্গী না বানিয়ে ভরসা রাখুন মানুষের কাঁধে। জীবন ভরে উঠবে আনন্দে।
মনে রাখা জরুরি, আজ বিশ্ব সিঙ্গেল ডে। ১৯৯০ সালে চীনের নানজিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দিবসটি উদযাপন শুরু হয়। সেই থেকে চীনে ‘১১-১১’ তারিখটি সিঙ্গেলস ডে হিসেবে পালন হয়ে আসছে। ওই সময়টায় নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের মিংকাওউঝু ছাত্রাবাসের চার ছাত্র আলোচনা করেছিলেন, কীভাবে তারা একা থাকার একঘেয়েমি দূর করতে পারেন।
তাই আসুন, আমরা একলা থাকার একঘেয়েমি দূর করি। কেউ অন্তত বলুক ‘তোমার চোখ এত লাল কেন’? দুঃখের দিনে একটু স্পর্শ হয়ে পাশে থাকুক। প্রিয়জনেরা কথা রাখুক। দূর হোক সব ভাবনা, মুছে যাক যত যাতনার দাগ।
সাহায্য:
১. রবীন্দ্রসংগীত
২. সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’
৩. নির্মলেন্দু গুণের ‘তোমার চোখ এত লাল কেন’
৪. রফিক আজাদের ‘প্রতীক্ষা’
৫. আনিসুল হকের ‘তুই কি আমার দুঃখ হবি?’
এসইউ/এমএস