রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্মদর্শন
১৯১৪ সালের ৮ জুলাই ব্রিটিশ কবি রবার্ট সেইমর ব্রিজকে রবীন্দ্রনাথ লেখেন, “আমার ধর্মই আমার জীবন—এটা আমার বয়সের সাথে সাথে বেড়ে উঠছে—বাইরে থেকে কখনোই এটা আমার গায়ে লেখা হয়নি”। (My religion is my life—it is growing with my growth—it has never been grafted on me from outside.)। পরবর্তীতে তিনি ‘দ্য রিলিজিয়ান অব ম্যান’-এ লিখছেন, “এটা স্পষ্ট যে আমার ধর্ম একজন কবির ধর্ম এবং কোন গোঁড়া ধার্মিক লোকের মতন নয় এবং কোন ধর্মতাত্ত্বিকের মতোও না। আমার গানের অনুপ্রেরণার মতো অদেখা এবং নাম না জানা পথ ধরে আমার কাছে এসেছে। আমার ধর্মীয় জীবন আমার কাব্যিক জীবনের মতো একই রহস্যময় পথ অনুসরণ করেছে। কোন না কোনভাবে তারা একে অপরের সাথে মেলবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। যদিও তাদের এই মেলবন্ধন অনুষ্ঠানের সময় ছিল দীর্ঘ, তবুও তা আমার কাছে ছিল অতি সংগোপনে”। (For it is evident that my religion is a poet’s religion, and neither that of an orthodox man of piety nor that of a theologian. Its touch comes to me through the unseen and trackless channel as does the inspiration of my songs. My religious life has followed the same mysterious line of growth as has my poetical life. Somehow they are wedded to each other and, though their betrothal had a long period of ceremony, it was kept secret from me)। এ প্রসঙ্গে গবেষক বীরেন্দ্রকুমার ঘোষ ‘ধর্মপথিক রবীন্দ্রনাথ’-এ লিখছেন “রবীন্দ্রনাথের ধর্মজীবন ও ধর্মদর্শনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে উপনিষদের আদর্শে এক অনির্বচনীয় অখণ্ড আনন্দময় সত্তার মধ্যেই মানবজীবনকে প্রতিষ্ঠিত করা। তাঁর উপন্যাসগুলোতেও এই ভাব দেখা যায়। এ কথা আগেই বলা হয়েছে যে সংসার ত্যাগ করে যে বৈরাগ্য, রবীন্দ্রনাথের কাছে কখনোই তা অনুমোদন পায়নি। কিন্ত এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, রবীন্দ্রনাথ ত্যাগকে অস্বীকার করেননি। ভোগসর্বস্ব জীবনের প্রতিও যেমন তিনি চরম অবজ্ঞা প্রকাশ করেছেন সর্বস্ব ত্যাগের তথাকথিত মহিমাকেও তেমনি তিনি কোথাও গৌরব দেননি। সংযমের ভিত্তিতে ভোগ ও ত্যাগের বিস্ময়কর সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই রবীন্দ্র দর্শনের প্রধান রূপটি ফুটে উঠেছে”। (বুকল্যান্ড, কলকাতা, ১৯৬১ পৃ-১৫৫)।
রবীন্দ্রনাথের ধর্মদর্শন তিনটি স্বতন্ত্র ধারার মধ্য দিয়ে সমন্বিত হয়েছেঃ বেঙ্গল রেনেসাঁ, মধ্যযুগীয় সমন্বয়ী বৈষ্ণববাদ ও অনেকটা সূফীবাদ, আর বাংলার বাউল সম্প্রদায়ের লৌকিক জীবনধারা। অবশ্য এ বাদে পাশ্চাত্যের ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদও তাঁকে সাংঘাতিকভাবে আন্দোলিত করে। রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয় উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি। ভারতবর্ষ এ সময় পার করে মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগে উত্তরণের বৈপ্লবিক পর্ব। বিশ্বাস, কুসংস্কার আর ধর্মীয় একচ্ছত্র অধিকারের বিপরীতে ভারতবর্ষের জ্ঞানোত্তরণের পর্বে রবীন্দ্রনাথের জন্ম। এসময় ছিল ভারতবর্ষে রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামল। ১৯৭৬ সালে ইউনিভার্সিটি অব মিসিগ্যানে তারকানাথ ও মেরি কিটিং মেমোরিয়াল বক্তৃতায় নীরদ চৌধুরী বলেন, ভারতবর্ষে আলোকিত মানুষের জন্ম হয়েছিল রানী ভিক্টোরিয়ার শাসনামলে। তার কথায়, “কেন নয়? রানী ভিক্টোরিয়া হলেন সেই শাসক যার সময়ে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কেশব চন্দ্র সেন, বাল গঙ্গাধর তিলক, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী, সি ভি রমন, জহরলাল নেহেরু অথবা সুভাষ চন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন”। (“My Way of Being Pro-British”, From the Archives of a Centenarian, Mitra and Ghosh, Kolkata, p. 136)। সত্যি সত্যি রবীন্দ্রনাথের জন্ম এমন সময়ে যখন হিন্দু সমাজে স্বামী মারা গেলে স্ত্রীকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হতো। এই বীভৎস প্রথা যেটা ‘সতিদাহ’ প্রথা নামে প্রচলিত ছিল সেটা ভারতীয় সমাজের জন্য ছিল অত্যন্ত কলঙ্কের আর সাংঘাতিক লজ্জার। সামাজিক এই অনাচারের যুগে আবির্ভূত হন বিপ্লবী রামমোহন রায়। হিন্দু সমাজের সংস্কারের জন্য তিনি পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গঠন করেন বাহ্ম সমাজ তদুপরি বাহ্মধর্ম। রবীন্দ্রনাথ তাই রামমোহন সম্পর্কে লিখছেন, “রামমোহন রায় যে সময়ে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, আমাদের জাতীয় ইতিহাসে সে এক অতি অগৌরবের অধ্যায়। দেশের চারিদিকে তখন কুসসংস্কার, ধ্বংসপ্রবণতা ও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করিতেছিল। যুক্তিহীনতা সত্য ও প্রেমের আলো আচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছিল। আমি ভাবিয়া বিস্মিত হইয়া যাই যে, ভারতের ইতিহাসের এই সর্বাপেক্ষা অবনতির কালে কী করিয়া রাজা রাম মোহনের মতো এমন একজন অসাধারণ মানুষের অভ্যুদয় হইয়াছিল।” (রাম মোহন রায়, ১৭ খণ্ড, ৯৬৭)। উপনিষদিক ধর্মদর্শনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা বাহ্মধর্মের অনুসারী হয়ে ওঠেন রবীন্দ্রনাথের পরিবার। পিতা মহর্ষির জ্ঞান ছিল আকাশচুম্বী, তিনি এই সামাজিক বিপ্লবে যুক্ত করেছিলেন নিজেকে। যে ধর্মের সাথে আনন্দের তথা প্রাণের যোগ ছিল না সেই ধর্মকে তিনি সংস্কার করতে চাইলেন। যে ধর্ম আচারের বেড়াজালে নিজের প্রাণটাকে হারিয়ে ফেলে সেই আনুষ্ঠানিকতা পরিহার করে ছুটলেন উপনিষদের অদ্বৈতবাদে। তাই তো তাঁরা বললেন, “তেষামেবৈষ ব্রহ্মলোকে/ যেষাংতপো ব্রহ্মচর্যং/ যেষু সত্যং প্রতিষ্ঠিতম”। অর্থ দাঁড়ায়, “যে ব্রহ্মলোক, অর্থাৎ যে ব্রহ্মলোক সর্বত্রই রহিয়াছে, ইহা তাঁহাদেরই, তপস্যা যাঁহাদের, ব্রহ্মচর্য যাঁহাদের, সত্য যাঁহাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত”। (ধর্ম, ৭৪)।
দ্বিতীয়ত, পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি ভারতের মিস্টিক কবি কবির দাশ, নানক এঁদের অসাম্প্রদায়িক চেতনা রবীন্দ্রমানসপটে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছিল। তিনি বারবার এঁদের কাছে তাঁর ঋণ স্বীকার করেন, কীভাবে তাঁরা ভারতবর্ষকে অনালোক থেকে আলোকের পথ দেখিয়েছিলেন, বিক্ষিপ্ত থেকে একের পথ দেখিয়েছিলেন, ভেদবুদ্ধির উপরে উঠে সমন্বয়ের কথা প্রচার করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ কবিরের প্রায় একশ কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। মানুষের মাঝেই ঈশ্বরের স্পর্শ পেয়েছিলেন কবির। মানুষের মাঝেই এই বিশ্বজগতের সব লুকিয়ে আছে। ইংরেজিতে অনূদিত একটা কবিতা এমন—
O servant, where doest thou seek me?
LO! I am beside thee
I am neither in temple nor in mosque
I am neither in Kaaba nor in Kailash
Neither am I in rites and ceremonies
Nor in Yoga and renunciation
রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলিতে ১১ সংখ্যক কবিতায় লিখলেন,
ভজন পূজন সাধন আরাধনা
সমস্ত থাক পড়ে
রুদ্ধ দ্বারে দেয়ালের কোণে
কেন আছিস ওরে!
অন্ধকারে লুকিয়ে আপন মনে
কাহারে তুই পুজিস সঙ্গোপনে?
নয়ন মেলে দেখ দেখি আজ চেয়ে
দেবতা নাই ঘরে।
তিনি গেছেন যেথায় মাটি ভেঙে
করছে চাষা চাষ,—
পাথর ভেঙে কাটছে যেথায় পথ,
খাটবে বারো মাস।
...
মুক্তি? ওরে মুক্তি কোথায় পাবি
মুক্তি কোথায় আছে—
আপনি তিনি সৃষ্টি বাঁধন পরে
বাঁধা সবার কাছে।
এ যেন জীবনেরই সংগীত, এ যেন সৃষ্টি আর স্রষ্টার মাঝে অভিন্ন মেলবন্ধনের এক অপরূপ দলিল। তৃতীয়ত, বাংলার গ্রামীণ জনপদের সাধারণ মানুষদের আধাত্মবোধ নিয়ে যে বাউল সম্প্রদায় ঘুরে বেড়াতো তাদের সেই সহজিয়া বোধ বা লৌকিক চিন্তা রবীন্দ্রনাথকে আকৃষ্ট করে তরুণ বয়সেই। কারণ তাদের দর্শনের সাথে রবীন্দ্রনাথের “মনের মানুষ” বা “জীবন দেবতা” যে খুব কাছাকাছি! ১৮৯০ কিম্বা ’৯১ সালে রবীন্দ্রনাথ পারিবারিক জমিদারির সুবাদে পূর্ববাংলার শিলাইদহে আসেন। তবে তার আগে ২২ বছর বয়েসে তার হাতে আসে একটা ‘বাউল গাথা’ নামে ছোট্ট একখানা চটি বই, যার মধ্য দিয়ে তিনি পরিচিত হন এর মর্মবাণীর সাথে। বাংলা ১৩৩৪ বঙ্গাব্দে তিনি “বাউল-গান” এ লিখেছেন, “আমার লেখা যাঁরা পড়েছেন তাঁরা জানেন বাউল পদাবলীর প্রতি আমার অনুরাগ আমি অনেক লেখায় প্রকাশ করেছি। শিলাইদহে যখন ছিলাম, বাউল দলের সঙ্গে আমার সর্বদাই দেখাসাক্ষাৎ ও আলাপ আলোচনা হত। আমার অনেক গানই আমি বাউলের সুরে গ্রহণ করেছি এবং অনেক গানে অন্য রাগরাগিণীর সঙ্গে আমার জ্ঞাত বা অজ্ঞাত-সারে বাউল সুরের মিলন ঘটেছে”। (১৬ খণ্ড, ৫৩৯)। তাই তো বাউল সুরের যখন এই গান তিনি শুনলেন তাঁর প্রাণ উদ্বেলিত হয়ে উঠলো।
কোথায় পাবো তারে
আমার মনের মানুষ যে রে!
হারায়ে সেই মানুষে তার উদ্দেশ্যে
দেশ বিদেশে বেড়ায় ঘুরে।
বাউল সম্প্রদায় সামাজিকভাবে অবহেলিত হলেও তাঁদের গভীর জীবনবোধ বাংলার শান্ত জীবনকে আরও শাণিত করে, এ সময় তিনি বৌদ্ধধর্মের সহজ জীবনাচারের সাথে এবং বাউলদের সহজ আধ্যাত্মিক সাধনার সাথেও পরিচিত হন। প্রেমের একাগ্র সাধনে সেই পরম পুরুষকে চেনার এক সহজ বোধ তৈরি হয়েছে বাউলতত্ত্বের মধ্য দিয়ে। রবীন্দ্রনাথ Creative Unity-র মধ্যে লিখছেন এমনই বাউলের মনে কথাঃ
Make way, O bud, make way,
Burst open thy heart and make way
The opening spirit has over taken thee,
Canst thou remain a bud any longer?
চতুর্থত, পশ্চিমের মানবতাবাদকে তিনি দ্বিধাহীন চিত্তে গ্রহণ করেছেন। তিনি ভারততীর্থ কবিতায় যেমনটি লিখছেন, “পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার/ সেথা হতে সবে আনে উপহার/ দেবে আর নেবে যাবে না ফিরে/ এই ভারতের মহামানবের সাগর তীরে”। কাজেই এই বহুবিধ ধারা রবিন্দ্রমানসে প্রতিফলিত হয়েছে স্ফটিক দর্পণের ন্যায়। ভারতবর্ষ বহু বিচিত্রের মাঝে যেন এক অখণ্ড জীবন বোধ। এটা কীভাবে সম্ভব হলো? এটা সম্ভব হয়েছে হাজার বছরের ভারতীয় সমাজে বিচিত্র সংস্কৃতির আন্তঃক্রিয়ার ফলে। এখানে এসেছে শক, হুন, মুসলিম, ওলন্দাজ, ফরাসি, পর্তুগীজ, ইংরেজ, ইত্যাদি মানবজাতি। এই মানব শংকরের ফলে ভারত গ্রহণ করেছে এদের সবচেয়ে ভালো দিক, মানবিক চৈতন্য। রবীন্দ্র মানসে এর প্রভাব ছিল দুর্দান্ত। এসব বিষয়ের পরিপূর্ণ চেতনার অপূর্ব সংমিশ্রণ রবীন্দ্রনাথ নিজে তথা তাঁর পরিবার।
ধর্ম নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ভিন্ন কোন সম্প্রত্যয় গড়ে ওঠেনি। গড়ে না ওঠার কারণ তিনি ছিলেন যতটা ধার্মিক তার থেকেও বেশি কবি; যতটা কবি তার চেয়েও ঢের বেশি মানুষ। তাই মনুষ্যত্বের ধারণার সাথে তাঁর ধর্মীয় চেতনার কোন ফারাক নেই, যেমন নেই কবিত্বের ধারণার সাথে সত্য বা আনন্দের ধারণার অমিল। বলা চলে ধর্ম, সত্য, আনন্দ ও মনুষত্বের ভেতর কোন বিস্তর বিভেদ তিনি খুঁজে পাননি। ১৯২১ সালে বার্লিনে এক ভাষণে কবি বললেন, “স্বাধীনতার যে ধারণাটি ভারতবর্ষে আকাঙ্খিত ছিল, তার ভিত্তি ছিল আধ্যাত্মিক ঐক্যের অনির্বচনীয় দিক—সেটাই ভারতবর্ষের সবচেয়ে গৌরবের বিষয়, যেটা এখনো পর্যন্ত হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিষ্টানের হৃদয়ের মধ্যে গ্রথিত। এটা জোর করে হয়নি, হয়নি ত্যাগের মাধ্যমে বরং হয়েছে সকলের একান্ত সহযোগিতার মধ্য দিয়ে”। (অর্ঘ কে আর ব্যানার্জি, দ্য স্টেস্টসম্যান, কলাকাতা, ৩ আগস্ট, ২০১৮)। বাংলা ১৩০৮ থেকে ১৩১৪ পর্যন্ত বঙ্গদর্শন ও তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথের ১৪টা প্রবন্ধ নিয়ে ১৩১৫ বঙ্গাব্দে ‘ধর্ম’ প্রকাশিত হয়। এসব প্রবন্ধ বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে লেখা যেমন উৎসব, দিন ও রাত্রি, ধর্মের সরল আদর্শ, দুঃখ, নববর্ষ, বর্ষশেষ ইত্যাদি। আশ্চর্যের ব্যাপার এর মধ্যে বইয়ের শিরোনামের ওপর কিছুই লেখা নেই কিন্তু সবকিছুর মধ্যেই একটা বিষয় আছে সেটা ধর্ম। এই ধর্ম প্রথাগত ও আনুষ্ঠানিক কোন ধর্ম না; এই ধর্ম বিভাজিত ধর্ম না, এই ধর্মের মাঝে কোন হানাহানি কলহ নেই, আছে প্রাণের আনন্দ আর সত্য অনুসন্ধানের হৃদয়বৃত্তি; আছে সুন্দর আর অন্তর্গূঢ় আনন্দের এক অসীম ফল্গুধারা। জগতের মাঝে যে আনন্দরস প্রবাহিত হয়ে চলেছে, হৃদয় বীণার তারে সেই রসধ্বনি উপলব্ধির কৌশলই হচ্ছে ধর্ম—‘আনন্দাদ্ধ্যেব খল্বিমানি ভূতানি জায়ন্তে—এই যে যাহা কিছু হইয়াছে ইহা সমস্তই আনন্দ হইতেই জাত’। তাহলে ধর্ম কী? ধর্ম আনন্দাশ্রিত চেতনার স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ, মানুষের অত্যাবশ্যকীয় প্রবৃত্তির অতি সাধারণ ও বাধাহীন বিপুলতার নাম ধর্ম। কবির মতে, ধর্ম একত্রিত করে, মিলিয়ে দেয় সকল খণ্ডিত অংশকে। একত্রিত হওয়ার ভেতর প্রাণের যোগ আছে, এই যোগের ভেতর দিয়ে প্রকাশ পায় নিখিল বিশ্বের সকল বিচ্ছিন্ন অংশ। এ যেন অগণিত নক্ষত্র একত্রিত হয়ে তৈরি করে একটা তারার মালা-গ্যালাক্সি। কবির গানে, “নিখিলে তব কী মহোৎসব! বন্দন করে বিশ্ব/ শ্রীসম্পদভূমাস্পদ নির্ভয়শরণে”।
চলবে...
এসইউ/