ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

এম এ রহমানের পাঁচটি কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক | প্রকাশিত: ০২:৩৫ পিএম, ২৩ জুলাই ২০২২

আমি নিখোঁজ সংবাদে

একটা সময় ছিলো—
যখন ভোরের বেলা কাঁচারোদে আমি হাঁটতাম
দেখতাম—প্রকৃতির আড়মোড়া দিয়ে জেগে ওঠা
শুনতাম—প্রকৃতির ঠোঁটে ফুটে ওঠা মিষ্টি ভাষা।
জীবন উল্লাসে মাতা—পৃথিবীর সব রং, গন্ধ
সব সুর, নিরবতা—হৃদয় ক্যানভাসে ফুটে উঠত
নিজেকে খুঁজে পেতাম, দেখতাম অবয়ব তার
আমিত্ব দর্পণে অপরূপ প্রশান্তির প্রতিবিম্ব ভাসে।

দুপুরের পোড়া রোদে পুড়ে যায় পৃথিরীর রং
বাতাসের নিঃশ্বাসে উড়ে—পুড়ে যাওয়ার গন্ধ
উড়ন্ত পাখির কণ্ঠে ভেসে আসে কোরাস সংগীত
আমিত্বের নির্জনতা ভাঙে বাঁচাও বাঁচাও চিৎকারে।

আয়ুপথে হেঁটে হেঁটে কতদূর এসেছি জানি না
নিজেকে ভেঙেছি ছিটিয়ে দিয়েছি চারিদিকে
সম্পর্কের মুঠোভর্তি হাতে—রাস্তা, ঘাটে, পথে ও প্রান্তরে
আমিত্বের ভাঙা দর্পণে আজও নিজেকে দেখা যায়
তবে নিজেকে চেনা যায় না—শত টুকরার প্রতিবিম্বে!

****

সমুদ্রের পথে

অফিসের পর আমার তেমন কাজই থাকে না
তখন পড়তে বসি—তোমাকে মুখস্থ করি
বারান্দায় বৈকালিক আয়েশী চায়ের কাপে
কিচেনের ভাত সিদ্ধ জলের তৃষ্ণায়
বেডরুমে নিয়মিত তোমার পৃষ্ঠাগুলো উল্টে দেখি
তারপর তোমার নিঃশব্দ চোখের গভীরে ডুবে যাই
তোমার শ্রাবণ মেঘে আমার শব্দরা বৃষ্টি হয়
দোচালা টিনের ঘরে আমরা তাদের নৃত্য দেখি
বুকপকেটের ভাঁজে তোমার শব্দকে নিয়ে বের হই
অফিসের ফাঁকে ফাঁকে মুখস্থ করার চেষ্টা করি
কবিতা লেখার চেষ্টা করি—কিন্তু তারা গান হয়
হৃদয় গভীরে বয়ে চলে নদী—মন মাঝি গান গায়
অফিসের পর বাসায় ফিরি—বুকপকেটে জমাই শব্দ
মন মাঝি হাল ধরে, গান গায়—বয়ে চলে সমুদ্রের পথে।

****

নস্টালজিক মন

কেউ বেঁধে রাখেনি কখনো
কেউ নির্বাসন দেয়নি আমায়
তবু আমি বন্দি, নির্বাসিত এক প্রাণ।
নস্টালজিক মন ফিরতে চায়—
গ্রামের বাড়িতে ব্রহ্মপুত্রের ঢেউখেলা সমীরণে
নারুদার পুকুরের টঙ্গে, স্কুলমাঠে বৈকালিক দুর্বাদলে
লেপ্টে যেতে চাই গোধুলির আকাশে।
কতদিন আম্মার হাতের চিংড়ি ভুনা আর
হাঁসের মাংস গলা দিয়ে হেঁটে হেঁটে জঠরে যায়নি
কতদিন বুকভরা সোঁদা মাটির গন্ধ নেয়নি
কতদিন আব্বার শাসনের দরজা ভেঙে
পাখির মতো দলবেঁধে ব্রহ্মপুত্রে সাঁতার কাটেনি।

নস্টালজিক মন ফিরতে চায়
এ শহরের জমানো চৈতালি উত্তাপ
ব্রহ্মপুত্রের শীতল জলে ডুবাতে চায়
বটবৃক্ষতলে মাতৃছায়া পেতে পেতে ঘুমাতে চায়।

কেউ বেঁধে রাখেনি কখনো
কেউ নির্বাসন দেয়নি আমায়
তবু আমি বন্দি, নির্বাসিত এক প্রাণ।

****

বেগুনি ফুল

এতদিন শীতনিদ্রায় ছিলাম
অলসতার শরীরের ভেতর
তার ফুসফুসের ভেতর, নির্জীব চেতনা
উদ্দেশ্যহীন বেঁচে থাকার বিলাসিতা
হঠাৎ হুরকা বানে পাহাড়ি ঢলের স্রোত
কচুরিপানার মতো ভেসে ভেসে বুঝেছি জীবন
আটকা পড়েছি স্রোতহীন পরিত্যক্ত
জমির কিনারে, বাস্তবতার সূর্যের তাপে
শ্যাওলা জমানো জমিন এখন খাঁ-খাঁ বিরানভূমি।
তবুও স্বপ্নের পালকে ঢেকে রাখি নিজেকে
আসন্ন হেমন্তের শিশিরে ভিজে ভিজে
শীতের কুয়াশার চাঁদর ছিঁড়ে ছিঁড়ে
ফোটাবো বেগুনি ফুল।

****

স্বপ্নদ্বীপ

যে নদীকে আমি সমুদ্রের নোনা জলে মিশতে দেখেছি
সেটি আমার বুকেই থাকে
সমুদ্রের নোনা জলে যে কালের নৌকা ভেসে গেল
যে নৌকা আমার প্রেম, শৈশব-কৈশোর নিয়ে গেল
যে নৌকা পড়ন্ত বেলায় আমার তুমিকে নিয়ে গেল
সন্ধ্যার প্রদীপ জ্বেলে—সেই নৌকা আর ফিরবে না-জানি!

আমার হৃদয় আজ—এক দূরতম নির্জন দ্বীপ
উঁচু-নিচু পাহাড় বেষ্টিত এক গিরিখাদ, বন
সমুদ্রের উথাল-পাতাল ঢেউ, পাহাড়ের পায়ে লীন হয়
কোন এক দূরতম চরে, আজ শৈশব-কৈশোর আর তুমি।

তুমি যদি পাখি হও, কখনো উড়তে ইচ্ছে করে
একটু উষ্ণতা নিয়ে এসো, পাখায় রোদ্দুর মেখে
আমি তোমাকে আমার দীর্ঘশ্বাসের সাজানো বন
রূপান্তরিত শিলার বিশাল বিশাল পাহাড় দেখাবো।

তুমি শুধু একটু উষ্ণতা তোমার পাখায় নিয়ে এসো।
আমার সমস্ত সমুদ্রের জলে তোমার আকাশে রংধনু আঁকবো
আমার পাহাড় কেটে সমতলে তোমার স্বপ্ন বুনবো
শুধু তুমি, আমি, আর আমাদের স্বপ্নের সে দ্বীপ।

এসইউ/এএসএম

আরও পড়ুন