এম এ রহমানের তিনটি কবিতা
মেঘবালিকা
আমি তোমার তুমিকে কোনদিন কি পেরেছি ছুঁতে?
কোনদিন কি পেরেছি ছুঁতে মেঘবালিকা!
অথচ ছুঁয়েছ তুমি আমার তুমিকে কতবার
হৃদয়ের পথে হেঁটে দেখেছ আমার বালুচর
সমুদ্রের নীল জল, আমার কাশের শুভ্র ফুল।
আকাশটা দেখে বলেছিলে শরতের মতো নির্মল
অথচ পেলে না খুঁজে তুমি, তোমার তুমিকে আমার ভেতর?
পঁচা শামুকে তোমার পা কাটলো বলে তুমি
রক্তের ভেতর পেলে আমার সমস্ত সমূহের পাপ।
মেঘবালিকা তোমার সাদা সাদা ও পালকের ভেতর
রোদ্দুরের রোদ নিয়ে তুমি কোথায় হারালে?
কী ভীষণ পাথরের সাথে বন্ধুত্ব আমার দেখে যাও!
কী ভীষণ বেদনার কোলে মাথা রেখে ঘুম আসে তুমিহীনা!
মেঘকন্যা ফিরে এসো, বৃষ্টি হয়ে ছুঁয়ে যাও আরেকটিবার
বৃষ্টি বানে ভেসে যাক আমার নীল বেদনা
আরেকটি বার ছুঁয়ে দাও, পাথর বুকে ফুটুক ফুল
তোমার ঘরে না দাও, চিলেকোঠায় হোক ঠাঁই
এতটুকু শুধু চাই, এতটুকু চাই।
****
কিছু দুঃখ করি চাষাবাদ
বুক পকেটে জমানো কিছু কাগজের ভালোবাসা
এবার না হয় পুড়ি, সত্যের আগুনে করি ভস্ম
থাকে থাক কিছু খুচরো পয়সা-চান্দি ভালোবাসা।
কিছু দুঃখ করি চাষাবাদ, পুড়ে যাওয়া ভস্ম সে ছাইয়ে
মেঘের পাজর ভেঙে সেচ দেব না হয় বৃষ্টির জলে
তবু কিছু দুঃখ করি চাষাবাদ, হৃদয়ের স্থলে
হৃদয়ের জলভাগে থাক অভিমান, হোক সে প্রবাহমান।
অভিমানের সমুদ্রে ভেসে উঠুক বিরাণভূমি—যন্ত্রণার চর
একাকিত্বের একটা বিশাল পাহাড় থাক বিরাণভূমির বুকে
তবু ছলনার নীল আকাশটা না থাক, না থাক
না থাক খঞ্জর হাতে কোনো লাল গোলাপ, কোনো ফুল।
****
কিছুই দেখা হয়নি
মনে পড়ে সেদিন বৈশাখী ঝড়ের কথা,
দিনের আলো ঢেকে গিয়েছিল তিমির চাঁদরে
সেদিন আমার চোখে তোমায় প্রথম দেখা।
প’রে আরও কত ঝড় হলো, কতো বৃষ্টির ঝাপটা।
তোমাতে আমি আমাতে তুমি গড়ে তুললাম,
গড়ে তুললাম আমাদের ‘আমরা’।
সে আমরায় তুমি ছিলে আমি ছিলাম, আর
আমাদের নীলাকাশ, নীলাকাশে চাঁদ, নক্ষত্র।
সবুজের মাঠও ছিল, সে মাঠে নদী ছিল,
ঝরণা ছিল, পাহাড় ছিল, পাখির কোলাহল ছিল।
সেসব আজ সুদূর অতীত, অতীতের সাদা বক।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রুপালি চাঁদের বৃষ্টিতে
ভেজা কথা ছিল,
সাগর দেখার কথা ছিল, পাহাড় দেখার কথা ছিল।
অথচ এখন অবধি কিছুই দেখা হয়নি।
যে দিনটায় চাঁদটা শনির উপগ্রহে পরিণত হলো
বাঁশবাগানে আর জোনাকিরা জ্বলে না
কান পেতে শোন সেখানটায় এখন
পিশাচের চিৎকার শোনা যায়।
আচ্ছা, তুমি আমার মতো একটা তুমি হবে
ভোরের একটা সকাল হবে
ক্লান্ত দুপুরের পর বিকেল হবে।
এসইউ/জেআইএম