ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

রাইসুল এইচ চৌধুরীর চারটি কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৯:৫৬ এএম, ১০ জুলাই ২০২২

চোখ খোলো প্রিয়া

অপেক্ষায় আছি বুনো ঘাসের ন্যায়;
হলুদ অবয়ব শুকিয়ে ম্রিয়মান
জলাতঙ্ক রোগীর ন্যায়
পাণ্ডুর অবয়ব প্রতীয়মান
সকল আবেগ যেন ধুয়েমুছে গেছে;
মাতৃত্বহীন মৃত হরিণ শাবকের ন্যায়
দাঁড়িয়ে আছি আমি মহাকাল থেকে;
দেবদারুর সর্পিল দেহের মতো
পলে পলে হয়েছি ক্ষত-বিক্ষত;
আগ্নেয়গিরির খণ্ডিত লাভার ন্যায়
তিলে তিলে গলে গলে পড়ছি; তোমার স্রোতস্বিনী নিষ্প্রভ আঁখির পর
চোখ খোলো প্রিয়া;
চোখ খোলো।

আর কতো অবগাহন করবো বেদনার নোনা জলে!
ক্ষয়িষ্ণু মনের বারান্দা উঁইপোকায় খাচ্ছে দিবানিশি
ভালোবাসা মরে গেছে বজ্রপাতে শুকিয়ে যাওয়া;
তেমাথায় দাঁড়ানো বুড়ো বটগাছের মতো,
অনুভূতির পাঁপড়িগুলো শুকোতে শুকোতে এখন নির্যাসহীন;
পরাগায়নের অনুপযোগী মৃতপ্রায়!
কষ্টের আঘাতে স্ফীত-পরিস্ফীত হয়েছে ধমনীর শাখা-উপশাখা
নিশ্বাস লঘু হতে-হতে হয়েছে ক্ষুদ্র পশুর ন্যায়;
বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি নাবালক শিশুর ন্যায়
এখন আর স্নায়ুতন্ত্রের বন্দরে নোঙর ফেলে না—
অনুভবের সাম্পান;
চোখ খোলো প্রিয়া—
পরাঙ্মুখ ভঙ্গিতে আর কতোকাল দাঁড়িয়ে থাকবো; তোমার চৌকাঠে!
চোখ খোলো।

বিস্তীর্ণ কাঁথার মতো জড়িয়ে রেখেছো তুমি
আগুনের লেলিহান শিখায়
বিশ্বাস পুড়ে পুড়ে হয়েছে এখন সতীর সিঁদুরের মতো লাল টকটকে!
পিঙ্গল বসন এখন রেখা ফেলেছে চোখের রেটিনায়;
বেহিসেবী আঘাতে-আঘাতে গোলাপি চঞ্চু,
বিধ্বস্ত নবজাতকের নাভির ন্যায়
আনাড়ি ভালোবাসা ধুঁকছে গাভিন ধানের মতো;
সকালে-বিকেলে সাঁওতাল রাতের জমকালো ক্যানভাসে,
এবার চোখ খোলো প্রিয়া
চোখ খোলো।

****

আঁখিজল

আজীবন কেঁদেছি যেন
নিজেই কেবল
দু’চোখের জলে শুধু
পুড়েছে কমল
ছলনার স্রোতে বধূ
মিছে মরীচিকা ধূ-ধূ
ঝরেছে বাদল।

হৃদয়ে ঘুণের বাসা
ভেঙেছে মনের আশা
হরিয়ান বিলে আজও
খুঁজেছি যে তোমারে প্রিয়ো
ঝিঙে ফুল দোলে দোলে
মায়াবী চোখের ছলে
এঁকেছে কাজল।

ভাবি বুঝি কাছে পাবো
শিশিরের জলে ছোঁবো
মেঘের মতো আঁখি
কী করে যে মন রাখি
দূর হতে ভেসে আসে
আফ্রোদিতির বেশে
কেশেরও আঁচল।

বন মৃগ কেন এলে!
হৃদয়ের অঞ্চলে
যাপিত জীবনে দ্বিধা
বাড়ালে মনের ক্ষুধা
কালের স্রোতে ভেসে
ঘুরেছি দেশে-বিদেশে
হয়ে যে পাগল।

আজীবন কেঁদেছি যেন
নিজেই কেবল...

****

ভালোবাসা বোঝো না তুমি

বুকের ভেতরে জমানো ভালোবাসা
জ্বলে দাউ-দাউ নিরবধি,
কোনো সাগরের জলেই নেভেনি তা অদ্যাবধি
না পাবার জ্বালায় বেদুঈন প্রেম;
ঘুরেফিরে প্রতিধ্বনিত হয়েছে
সুগুতের টিলায়—
ভাসমান প্রৌঢ় স্পর্শ জমেছে;
কালো মেঘের ন্যায় ললাটের কোণে
ফিরে-ফিরে আসে তোমার সুনিপুণ চোখের দ্যুতি;
বসফরাসের জলের ন্যায় খুমের সাগরে।

ভালোবাসা বোঝো না তুমি মেঘবালিকা!
ঘোড়ার পায়ের শব্দে মিশে যাওয়া আলেপ্পের
অলিগলি-রাজপথে,
দূর থেকে ভেসে আসা
স্পর্শের রিনিঝিনি শব্দে
আমার বুকের পাঁজরে সেঁটে থাকা
প্রেমের আলখাল্লা
দেখতে কি পাও না তুমি রাজকন্যা!

চোখের জলে ভেসে যাওয়া কায়াদের ডেরায়
ভালোবাসা উঁকি দেয় মধ্যরাতে, চোখের বারান্দায়;
ভালোবাসা বোঝো না তুমি সেলজুক রাজকন্যা
তাই, পিষে পিষে বলি দাও
ভেড়ার পালের ন্যায় ধারালো খঞ্জরে
কষ্টের ফেরিওয়ালা হয়ে ঘুরেফিরি এ বোবা রাস্তায়,
অনাদরে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা সাঁওতাল নদীর জলে,
আমার কষ্টের শুক্রাণু নিযুত সাঁতার কেটেও
পায় না কো তোমার দেখা।

ভালোবাসা বোঝো না তুমি মেঘবালিকা
তুমি বোঝো না—

****

একফোটা সুখ

যদি পারো সুখ দিও
একফোটা সুখ!
একফালি চাঁদের ন্যায়
একবিন্দু সর্ষের ন্যায়
ভোরের শেষে
মেঘের শেষে
একবিন্দু জলের ন্যায়
যদি পারো সুখ দিও
একফোটা সুখ।

যদি পারো স্বপ্ন দিও
একপুকুর সুখের স্বপ্ন
একরত্তি সুখের জন্য;
একবেলা আধপেটে
চোখের জলে বুক ভাসিয়ে
বসে আছি এই শহরে
যদি পারো মুছে দিও
বুকের খাতার কষ্টগুলো
শিরার মাঝের বর্জ্যগুলো
ধুয়েমুছে বিরান করো
যদি পারো সুখ দিও
একফোটা সুখ।

দুঃখ-দুঃখ খেলতে খেলতে
আমি বড় ক্লান্ত এখন!
পথের মাঝে পথ হারিয়ে
আমি বড় শ্রান্ত এখন!
যদি পারো সোহাগ দিও
নদীর সাথে জলের যেমন
দীঘির সাথে শরের যেমন
আমায় একটু সোহাগ দিও
এক আজলা জলের ন্যায়
একবিন্দু পলের ন্যায়
আমায় একটু সোহাগ দিও
অবাক করা সোহাগ!

যদি পারো সুখ দিও
একপলক সুখ!
একপশলা বৃষ্টির ন্যায়
একঝলক রোদের ন্যায়
স্নানের শেষে
জলের বানে
অশ্রুঝরা চোখের কোণে
বুকের পাশে
যতন করে
আমায় একটু সুখ দিও
অবাক করা সুখ।

এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন