হে প্রিয়তমা সোমেশ্বরী
সুজন হাজং
সোমেশ্বরী, তোমার ঢেউ খেলানো মায়াবী সৌন্দর্য দেখেছি শৈশবে, কৈশোরে...
এখন যৌবনের উন্মাদনায় দুরন্ত চোখে তোমাকে দেখি... তুমি নিষ্প্রভ, নিষ্পেষিত, নতজানু, ক্ষতবিক্ষত মৃতপ্রায়!
এখন তোমার বুকের উপর দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য ড্রেজার চলে, হাজার হাজার ট্রাক চলে...
প্রতিনিয়ত বালিভর্তি ট্রাকের বিকট শব্দে
যেন বধির হয়ে যাচ্ছে সুসং প্রজন্ম!
বালুখেকোর আগ্রাসনে সাদামাটির দেশ,
ঐতিহ্যবাহী মহাশোল, কালা বাউস, রানী মাছের প্রজনন যেন হুমকির মুখে;
বিলুপ্তির পথে হাজংদের তাঁতশিল্প, লোকগীতি, পালা কীর্তন, কৃষিজ উৎসব।
এখন শিশুর কোমল মস্তিষ্কের ভেতর যেন
শব্দ দূষণ খেলা করে...
ডিজেল চালিত যানের কালো ধোঁয়ায় রক্তাক্ত ফুসফুস, নিশ্বাসে বিষ, নেই পরিকল্পিত সবুজ বনায়ন।
বীরত্বগাঁথা গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য মলিন, রুগ্ন, বিষণ্ন অবয়ব।
এখন সুসং’য়ের পুণ্যভূমিতে ফসলের নৃত্য, একদিন জমিদার প্রথা উচ্ছেদের মহাযজ্ঞে, টংক আন্দোলনের সাক্ষী তুমি।
হে প্রিয়তমা সোমেশ্বরী,
তোমার বুকেও হাজংদের রক্ত প্রবাহমান।
রাশিমণি, শঙ্খমণি, সুরেন্দ্র হাজংদের রক্তে তুমি স্নাত,
তোমার বুকের ভাঙা পাঁজরের শব্দে প্রতিদিন ঘুম ভাঙে, দুঃস্বপ্নের মত দুঃসহ বেদনায় নীল হয়ে যায়...
এখন তোমার বুকে শ্মশানের আগুন জ্বলে, বাতাসে পোড়া মাংসের গন্ধ ছড়ায়;
একটি নদীর মৃত্যু হলে কেউ ভেঙে পড়ে না, কেউ বিলাপ করে না, নদীর দুঃখ কেউ বুঝে না...
এসইউ/জেআইএম