এম এ রহমানের চারটি কবিতা
বসন্তের শেষ পদচিহ্ন
আমি স্রোতের সিঁড়ি বেয়ে বুনো ভাঁটফুল চোখে
বসন্তের শেষ পদচিহ্নে চেয়ে থাকি
সময় এখনো রাস্তা পার হয়নি
অথচ একখণ্ড দলছুট মেঘে বিচ্ছেদ বিষন্ণতা।
চৈতালি উত্তাপে আম্রমুকুল ঝরার স্লোগানে
কচি পাতায় বাতাসের নূপুর পষ্ট—কর্ণকুহরে বাজে
বোশেখ টর্নেডো চোখে যদি ঝরে শিলা বৃষ্টি
সুন্দরের বনে হরিণের হৃদ হয় ধ্বংসস্তূপের ভাগাড়
তবে কতগুলো বসন্ত পরে—প্রকৃতির শরীরে
আবার ফুটবে-বুনো ভাঁটফুলের দল?
নাকি, ঋতুচক্রের গহ্বরে হারাবে বসন্ত!
হৃদয়ের মর্মরে অশ্রু ঝরাবে শুধু—শীত আর বর্ষা।
****
প্রিয় চারুলতা
সময়ের ফ্রেমে তুমি আবদ্ধ হৃদয়ের ভেতর
দেহঘড়ির স্পন্দনে—চলো তুমি যেন নিরন্তর
অথচ মনে আমার তোমাকে হারানোর স্লোগান
শুকনো পাতারা ঝরে, মর্মরে বাজে বিরহী গান।
আমি চাতকের মতো মেঘেদের পিছে পিছে ছুটি
যাযাবর দেশান্তরি, পাই অবহেলা অনাবৃষ্টি
আহত রাতেরা জানে কতটা দীর্ঘশ্বাস চাবুকে
হৃদয়ে বেদনা জমে, ঝরনা ঝরে পাহাড়ের বুকে
কতটা উপেক্ষা পেলে বিবেকের প্রতিচ্ছবি ভাসে
হৃদয়ের আয়নায়, ক্ষত লুকে রাখে অনায়াসে!
তবু হৃদয় জমিনে তুমিময় ভালোবাসা বুনি
আর ব্যথিত বাতাসে-তোমার বসন্ত গান শুনি
হয়তোবা তুমি আর—জানবে না প্রিয় চারুলতা
বুকের জমিনে তুমি—শুধু তুমি—বাকিটা শূন্যতা।
****
আজ মন খারাপের মেঘেরা নেই
হৃদয়ের নাচঘরে আচানক তরুণ বাতাস
চৈত্রের দুপুরে বসন্তের ভাঁটফুলে দোল খায়
মেঠোপথে বুনো জলে যেন সোনালি সকাল
আকাশগঙ্গায় উড়ে যায় একঝাঁক বলাকা
জীবনের শস্যক্ষেত, ফুল, ভ্রমরের গুঞ্জরন
পারিজাত প্রকৃতির ঠোঁটে যেন সবুজতা সুখ
কোলাহল ভেঙে ভেঙে নেমে এলো নৈঃশব্দ্য
শান্তি; শেষ কবে নুন মাখা পাহাড়ের বুক চিড়ে
শীতল ঝরনার স্রোত বয়ে গেছে মনে নেই।
এখন শরতের আকাশ আর শুভ্র কাশফুল
আজ মন খারাপের মেঘেরা নেই—কোথাও
আজ মন খারাপের মেঘেরা নেই—কোথাও।
****
ভাবনার জানালায়
যুবতী রাতের চোখে ফুটে ওঠে বিষাদের ভাষা
হেঁটে যাই নাগরিক ল্যাম্পপোস্টের আলো বিছানো পথে
সোডিয়ামের আলোয় নিজেকে অচেনা মনে হয়
বোধের জোনাক পোকা-মিটমিট জ্বলে রাস্তার পাশেই
হেঁটে যাচ্ছি আরও দূরে-রাতের নির্জন শহরের দিকে
রাস্তার দু’পাশে উজ্জল বিপণীবিতানের নেমপ্লেট পড়ে পড়ে
দীর্ঘশ্বাসে জমা হয় অপ্রাপ্তির স্বপ্ন পোড়া কালো ধোঁয়া
ফোঁটা ফোঁটা হতাশার ঘামে ভিজে—হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত
চৈতালি উত্তাপে আজ মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থেকে
অঝোরে নামলো বৃষ্টি, যুবতী রাতের দেহে ভাসে
সোঁদা মাটির ভেজানো ঘ্রাণ—মনে পড়ে শৈশবের দিন।
মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু—সে নিজেই
মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু—সে নিজেই
সময়ের শূন্য থলি ভরে ভরে যদি হয় শূন্য
তবে কেন-হৃদয়ের মাটি পুড়ে পুড়ে অট্টালিকা গড়া!
সবুজের বন কেটে কেটে অট্টালিকার ঠোঁটে রাখি
বনসাই হাসি—মাঝে মাঝে বসে বসে ভাবি!
এসইউ/এএসএম