ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

প্রতীচ্যের চোখে রবীন্দ্রনাথ: শেষ পর্ব

সিদ্ধার্থ শংকর জোয়ার্দ্দার | প্রকাশিত: ০১:৪৯ পিএম, ১১ মে ২০২২

১৯১২ সালের ডিসেম্বরের প্রথমদিকে শিকাগোর পোয়েট্রি ম্যাগাজিনে রবীন্দ্রনাথের কবিতা ছাপা হয়। সেখানে উল্লেখ করা হয় তাঁকে বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে। আশ্চর্যের ব্যাপার পোয়েট্রির সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, ‘এটা আত্মকেন্দ্রিক আমেরিকা অবশেষে বুঝতে পেরেছে যেটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ কয়েকদিন পর কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ সম্পাদককে কয়েকটা কপি পাঠানোর অনুরোধ জানান। পত্রিকার সম্পাদক হ্যারিয়েট মনরউ কবিকে শিকাগোতে নিমন্ত্রণ গ্রহণের আবেদন জানায়। প্রথমদিকে শিকাগোতে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁর একটু জড়তা ছিল। কিন্তু মিসেস মনরউর উষ্ণ আহ্বান উপেক্ষা করতে না পেরে জানুয়ারি মাসে শিকাগোতে পৌঁছান। সাথে পুত্র রথীন্দ্রনাথ ও পুত্রবধূ প্রতিমা দেবী। সেখানে তারা জানুয়ারি মাসের ১৯ তারিখ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত অবস্থান করেন। মিসেস মনরউর আতিথ্য তাদের বিমোহিত করে। কবির সাথে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল আজীবন। ২৪ জানুয়ারি তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘The Ideals of Ancient Civilization in India’ শিরোনামে একটি ভাষণ দেন, যেটা পরে তাঁর সাধনা গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়।

শিকাগো থেকে তিনি আরেক আমন্ত্রণে রোসেস্টারে ‘কংগ্রেস অব রিলিজিয়াস লিবারালস’ সম্মেলনে বক্তৃতার উদ্দেশ্যে যান। ফেব্রুয়ারি মাসে কবি প্রথমে যান নিউইয়র্ক, তারপর বোস্টনে। ১৯১৩ সালের ১৭ এপ্রিল ইংল্যান্ডে ফিরে আসার আগে তিনি আরও বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করেন। ইংল্যান্ডে ফিরে তিনি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি মিসেস মুডিকে চিঠি লেখেন তাঁর সাথে দেখা করার জন্য। তিনি জুনের মাঝামাঝি সময় সেখানে অবস্থান করেন। ১৯১৩ সালের সেপ্টেম্বরের ১৪ তারিখ রবীন্দ্রনাথ ভারতে ফিরে আসেন।

এটা ঠিক প্রাচ্যেও রবীন্দ্রনাথের সমালোচকের অভাব ছিল না। অতি নিকটজনেরাও তাঁকে বিদ্ধ করেছে। ১৯৩৭ সালে ইংরেজ সাহিত্যিক হেনরি গ্রাহাম গ্রিন বলেছিলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতাকে ইয়েটস ছাড়া আর কেউ বেশি গুরুত্ব দেয়।’ এ সম্পর্কে অমর্ত্য সেনের একটি পর্যবেক্ষণ উল্লেখ না করলেই নয়। অমর্ত্য সেন লিখছেন, ‘রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির বিশাল ব্যাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে তার যে ভাবমূর্তি গড়ে তোলা হয়েছে, তার সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক হচ্ছে তার সংকীর্ণতা। তাঁকে ‘প্রাচ্যের এক মহান রহস্যবাদীর (মিস্টিক)’ কল্পিত ভাবমূর্তিতে দেখা হয়। কেউ কেউ তাঁর সমাদর করেন, কেউ বা তাঁকে অপছন্দ করেন এবং আরও অনেকে আছেন যাঁদের কাছে তিনি একঘেয়ে ও ক্লান্তিকর। এই রবীন্দ্রনাথ বহুলাংশে পাশ্চাত্যের নিজেরই সৃষ্টি প্রাচ্য থেকে, বিশেষত ভারত থেকে বার্তা অনুসন্ধানের সেই ঐতিহ্যের অন্তর্গত যা হেগেলের ভাষায়, ইউরোপীয়দের কল্পনাতে হাজার হাজার বছর ধরে ধাবমান।’

রবীন্দ্রনাথের বেশভূষা ও চলনের গতি দেখে অনেকেই তাঁকে একজন প্রাচ্যের রহস্যবাদী পুরুষ মনে করেতেন। হাল আমলে পশ্চিম দেশে অনেক ভারতীয় যোগী পুরুষ যেভাবে নিজেদের বিস্তার করেছেন অনেকে রবীন্দ্রনাথকে সেই কাঠিতে মাপতে চেয়েছেন। ১৯৬৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়া জাপানের প্রথম সাহিত্যিক ইয়াসুনারি কাওয়াবাতা রবীন্দ্রনাথকে বর্ণনা দিচ্ছেন এভাবে, ‘তাঁর কপালের দু’পাশ দিয়ে সাদা চুলের গোছা আলতোভাবে নেমে এসেছে, কপালের ঠিক নিচে দু’পাশে যে চুলের গুচ্ছ সেও দু’গাছি দাড়ির মতো নেমে এসে গালের দাড়ির সঙ্গে মিশে এক হয়ে গেছে। ফলে, সেই বালক বয়েসে, তাঁকে দেখে আমার মনে হয়েছে তিনি যেন কোন প্রাচ্য দেশীয় জাদুকর।’ তবে উল্টো যে কতো সত্যি সেটা বোঝা যাবে একটি গল্পে। কার্ল জুকমেয়ার নামে একজন জার্মান নাট্যকর ছিলেন। তার বন্ধু ছিলেন জার্মান সেনাবাহিনীর একজন ডাক্তার। সেই ডাক্তার জুকমেয়ারের কাছে একদিন গল্প করছেন, তিনি যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান সেনাবাহিনীর সাথে কাজ করছিলেন; তখন একজন ভারতীয় সেনা যে কি না তখন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সদস্য, মারাত্মকভাবে আহত হন এবং জার্মান সেনা কর্তৃক আটক হন। খুব বড় একটি ক্ষত হয়ে যায় তার পায়ে। এমন অবস্থায় তার পা কেটে ফেলার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু জার্মান ডাক্তার ইংরেজি জানেন না, ফলে আহত সেনার সাথে ভাষিক যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না কিছুতেই। আহত সেনা বললেন আমি ভারতীয়। ঠিক তখনই ডাক্তার উচ্চস্বরে চেচিয়ে শুধু এ কথাটিই বললেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর!’ তখন ভারতীয় ওই সেনা খুব স্বস্তির সাথে শ্বাস নিলেন, মুখে তার একটি প্রশান্তির ছায়া দেখা গেল।

রবীন্দ্রনাথ নিয়ে পাশ্চাত্যে স্বস্তি-অস্বস্তির কারণ বহুবিধ। অ্যাডাম ক্রিস এক প্রবন্ধে লিখছেন, পাশ্চাত্য মনে যে অস্থিরতা আছে, অসুস্থতা কাজ করে তার একটি যুতসই ওষুধ সম্ভবত রবিঠাকুরের কবিতার ভেতর তারা খুঁজে পেয়েছিলেন। ১৯১০ এর দশক থেকে আজ অবধি এই ধারা পাশ্চাত্যের মানুষ অনুভব করেন। এ কারণেই সেন্ট ফ্রান্সিস বা উইলিয়াম ব্লেকের সাথে তুলনা করে ইয়েটস লিখেছিলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করছি, অর্থ আর রাজনীতিতে আমাদের মাথা যেখানে বুঁদ হয়ে আছে; সেখানে রবিঠাকুর ভারতীয় সভ্যতার ধারাবাহিকতায় সেই আত্ম-অনুসন্ধানে নেমেছেন। নিজেকে সমর্পণ করেছেন বিশ্বাত্মার সাথে।’

রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বিশ্বজনেরা
১৯৩১ সালে রবীন্দ্রনাথের ৭০তম জন্মদিনে বৃহৎ আয়োজনে সারা বিশ্ববাসীর কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করা হয়। খুব সঙ্গত কারণেই সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু আমরা উল্লেখ করতে পারি। ‘দ্য গোল্ডেন বুক অব টেগোর’ নামে ওই গ্রন্থ থেকে কিছু আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বের উদ্ধৃতির ওপর কথা বলা যেতে পারে। কোস্টেস প্যালামাস (১৮৫৯-১৯৪৩) ছিলেন গ্রিসের জাতীয় কবি। তিনি গ্রিসের সাহিত্য জগতে এক অনন্য নাম। রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা করতেন, ভালোবাসতেন এবং তাঁর প্রতি মুগ্ধতাও গড়ে উঠেছিল। তিনি লিখেছেন, ‘একজন বিশ্বখ্যাত কবি রবীন্দ্রনাথ আমাদের অপূর্ব শব্দ চয়নের মধ্য দিয়ে জানিয়ে দেন প্রাকৃতিক সীমানার মধ্যে নির্জনতা ও তার চির-সক্রিয় তপস্বীতা কবির কত বড় জিনিস। কবির গান পাখির গানের মতো। গোলাপি ভোরে যখন প্রাণ জেগে ওঠে; তখন সে কী করে?’ উচ্ছসিত কোস্টেস প্যালামাস আরও উচ্চারণ করেন, ‘আটিকার। আকাশে আমার উপর ঢেলে দেওয়া আলোর ছাউনির নিচে আমি অত্যন্ত বিনীতভাবে তাকে আমার শ্রদ্ধা জানাই; আমার আত্মা, তার শ্রদ্ধেয় হাতের উপর ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার একটি চুম্বন ছাপ দেওয়ার জন্য।’

জেন অ্যাডামস (১৮৬০-১৯৩৫) ছিলেন আমেরিকান লেখক, সমাজ সংস্কারক নারী। জন্মেছিলেন ইলিনয়ের সেডারভিলে। তিনি শিকাগো থেকে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ১৯৩১ সালে লিখেছিলেন অপূর্ব কয়েকটি কথা। ‘সম্ভবত সবচেয়ে মূল্যবান অবদান। যা আমাদের বিভ্রান্তিকর যুগে করা যেতে পারে, তা হলো সমস্ত মানব অভিজ্ঞতার অপরিহার্য একতা এবং বৈধতার প্রকাশ। যাতে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং মানসিক বোঝাপড়া আমাদের বাণিজ্যিক এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার কাছে যেতে পারে।’

হোরেস গুন্ড্রে আলেকজান্ডার (১৮৮৯-১৯৮৯) ছিলেন ব্রিটিশ শান্তিবাদী লেখক ও কোয়েকার। তিনি রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে এক অনির্বচনীয় অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন। লিখেছেন, ‘উডব্রুকের ইতিহাসে এটি একটি স্মরণীয় দিন ছিল, যখন প্রথম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের দেখতে আসেন। উডব্রুক বিশ্বাস করেন যে, এর পদ্ধতি এবং আদর্শ—আজকের বিশ্বের চিন্তা ও জীবনের মহান আন্দোলনের মুক্ত অধ্যয়ন, মানুষের ঐশ্বরিক ভ্রাতৃত্বের বিশ্বাসের মধ্যে নিহিত, এই দৃঢ় বিশ্বাসে যে আমরা সবাই ঈশ্বরের পুত্র, একটি সাধারণ জীবন ভাগ করে নিয়েছি—এই ধর্মীয় বিশ্বাস এবং এই মুক্ত অধ্যয়নের পদ্ধতি আমাদের কাছে শান্তিনিকেতনের শিক্ষাপদ্ধতি এবং আদর্শের বিষয়ে যা দেখেছি এবং শুনেছি তার অনুরূপ বলে মনে হয়।’

এডুইন বেভেন (১৮৭০-১৯৪৩) ছিলেন ব্রিটিশ দার্শনিক ও ঐতিহাসিক। তিনি রবিঠাকুর সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন। নরওয়েজিয়ান নাট্যকর ও ঔপন্যাসিক হুলেন জোহান বোজের। তিনি লেখেন, ‘তিনিই ভারত ইউরোপে একটি নতুন ঐশ্বরিক প্রতীক নিয়ে আসছেন, ক্রুশ নয়, পদ্ম। তার প্রজ্ঞা কোনো বয়স জানে না, এটি ভারতের নদীগুলোর মতো পুরোনো এবং শৈশব থেকেও ছোট, কারণ এটিতে জন্মগত কিছু ঝলকানি রয়েছে, যা আগামীকাল পর্যন্ত প্রকাশিত হবে না। তাঁর কবিতা কোনো বিদ্যালয়ের নয়—বাংলার ফুল রোদ-বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে।’

আমেরিকান দার্শনিক উইল ডুরান্ট রবীন্দ্রনাথকে ‘গুরুদেব’ সম্বোধন করে লেখেন, ‘গুরুদেব, শ্রদ্ধেয় মাস্টার, আমি আপনাকে এই নামে ডাকতে পারি আপনার শিষ্যদের কাছে এত প্রিয়, যারা এর মাধ্যমে তাদের চেতনা প্রকাশ করে যে আপনি কেবল একজন কবি এবং একজন শিক্ষক নন, কিন্তু স্বয়ং ঈশ্বরের কণ্ঠস্বর, আমাদের কাছে আসার জন্য আমরা আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। এত ভয়ংকর সমুদ্র পেরিয়ে, পূর্ব এবং পশ্চিমের মধ্যে বাধাগুলো ভেঙে দিতে সাহায্য করার জন্য, যাতে ভারত যখন আমাদের কাছে যেই আবিষ্কারগুলো নিয়ে আসে, সেগুলো যদি ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় তবে সমস্ত দারিদ্র্যকে ধ্বংস করবে, আমরা তার কাছ থেকে তার সহনশীলতার কিছু শিখতে পারি। প্রজ্ঞা এবং তার আধ্যাত্মিক শান্তি।’

জার্মান সাহিত্যিক এমিল গডশ্লিস বলেন, ‘কবি এবং দার্শনিক যিনি তাঁর জীবনের কাজের মাধ্যমে গভীর এবং মহৎ ভারতীয় দর্শন এবং কবিতাকে বিশ্বের বৃহৎ বৃত্তের কাছে উন্মুক্ত করেছেন, নিম্নস্বাক্ষরকারী, জার্মান এবং ভারতীয় বুদ্ধিজীবী জীবনের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঘনিষ্ঠ সংযোগ সম্পর্কে সচেতন, অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে অভিনন্দন জানাই। আপনার ৭০তম জন্মদিনে। ভগবদ্গীতার মহৎ বাণী অনুসারে আগামী বহু বছর ধরে তাঁর সহকর্মী জগতের সেবায় তাঁর উপকারী কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়ার জন্য সম্মানিত জয়ন্তীকে মঞ্জুর করা হোক। হৃদয়ের কেন্দ্রে নিঃসঙ্গ বসবাস, যেখান থেকে তিনি প্রেমে মহাবিশ্বের দিকে তাকান।’

আন্দ্রে বুটেনেসচন ছিলেন নরওয়ের সাহিত্যিক। তিনি লেখেন, ‘সুইডেনে একটি কুয়াশাচ্ছন্ন বসন্তের প্রাক্কালে আমার কাছে মনে হয়েছিল যেন কুয়াশার মধ্য দিয়ে হঠাৎ কোটি আলোর একটি স্ট্রিং এবং আমি ভাবছিলাম এর অর্থ কী হতে পারে। একই প্রাক্কালে আমি প্রথমবার আপনার নাম উচ্চারণ করতে শুনলাম।’

ইতালির সুবিখ্যাত দার্শনিক বেনিডিটো ক্রোচে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে লিখতে গিতে ‘গদ্য ও কবিতা’ শিরোনামে অতি ছোট একটি নিবন্ধ পাঠান। গদ্য এবং কবিতা: প্রথমটিতে অধ্যয়নের মধ্যে শব্দের চিকিৎসা করা হয় এমনভাবে যে শব্দটির একটি নিছক শব্দ হিসাবে কোনো মূল্য নেই এবং প্রায় চিন্তায় নিজেকে হারিয়ে ফেলে এবং জলের প্রবাহের মতো স্বচ্ছ এবং স্বচ্ছ হয়ে ওঠে যা জল হিসাবেও লক্ষ্য করা যায় না। দ্বিতীয়টিতে শব্দটি প্রথম স্থান ধরে নেয়, কল্পনা এবং গানের মতো আমাদের রং এবং শব্দ দিয়ে পূর্ণ করে। এখানেই চিন্তা এবং অভিনবত্ব, যুক্তিবিদ্যা এবং নান্দনিকতার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।’

ই বি হ্যাভেল ছিলেন অক্সফোর্ডের নামকরা শিল্পবোদ্ধা ও সাহিত্যিক। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন, তাঁর ধারণাও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে সমান। হ্যাভেল রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে লেখেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর বিশিষ্ট আত্মীয় গগনেন্দ্রনাথ এবং অবনীন্দ্রনাথের বন্ধুত্ব উপভোগ করার জন্য এটি আমার বড় সৌভাগ্য হয়েছে, প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর আগে কলকাতায় আমার আগমনের তারিখ থেকে, যখন কবির পিতা মহারথী দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন বিখ্যাত। পরিবারের সম্মানিত প্রধান। তাই এ বছর কবিকে তাঁর সত্তরতম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে বিশ্বব্যাপী শ্রদ্ধা ও প্রশংসার অনুষ্ঠানে যোগদানের অনুমতি দেওয়া আমার কাছে এক অদ্ভুত তৃপ্তি।’

বিশ্বজনের কাছে রবীন্দ্রনাথ প্রায় একশ বছর ধরে আলোচিত হয়ে আসছেন। বহুমাত্রিক এই কবির দর্শন অনেকেই গ্রহণ করেছেন, অনেকেই হয়তো বর্জন করেছেন। এই গ্রহণ-বর্জনের মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে এমন এক মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন যা এককথায় অনন্য। সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানীদের অন্যতম আইনস্টাইন তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অকুণ্ঠ চিত্তে। কারণ রবীন্দ্রনাথও যে ছিলেন একজন বিজ্ঞানের কবি। কারণ বিজ্ঞান যে নিগুঢ় সত্য উন্মোচন করে চলেছে রবীন্দ্রনাথের কাব্যিক সত্যের মধ্য দিয়ে, পেয়েছেন তারই আভাস।

এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন