মোরশেদুল ইসলামের তিনটি কবিতা
নদীর নাম ধরলা
পানি নেই মাছও নেই ধুধু বালুচর;
ধান, পেঁয়াজ, ডালের ক্ষেত তিন মাস
বাকিটা সময় ভাঙে পানি কূল-বাস;
দু’একটা বকের দেখা বহুক্ষণ পর,
চিলেরা উপরে ওড়ে, মাছের খবর
নাই, তাই ঘুরতে থাকে, থাকে উপবাস;
গালে হাত দিয়ে থাকা জেলেদের শ্বাস-
প্রশ্বাস শুকিয়ে যায় বালুর উপর!
নদীর নাম ধরলা। যেখানে জীবন
ফুল হয়ে ফুটেছিল, একদা শহর
বিশাল জন্মেছে পাশে, বজরার বহর
ছিল, আজ কী বিরান! তবু যে ফলন
দেখা যায়, নদী নয় যেন শস্যক্ষেত
উজানের জলে তাও খায় ফি বছর!
০২.
এ কেমন দোস্ত!
চাঁদের আলোর মতো আলোকিত এই অন্ধকার,
নিঝুম গরম বনে অন্ধ বাদুড়ই বাদশাহ হয়ে
কাঁপিয়ে যায় মসনদ–পাখিরা নিশ্চুপ ঘুমে–ভয়ে
কিংবা কেউ ক্ষমতার লিপ্সায় ভোগে মিছে বারবার
ঠিক মানুষের মতো! ডাক শুনি দু’একটা ফিঙার–
দু’একটা হুতোম প্যাঁচা–সতর্ক করে–গোপন রয়ে
যায় কাঁঠালের ডালে, সব সতর্কতা যায় বয়ে
পানির মতন–নদী যায় শুকিয়ে–মৃত আবার।
সেই বনে মনে মনে আম কাঁঠালের ব্যাকুলতা
সূর্যের মুখের জন্য; তারা ভাবে আলোর বন্যায়
ডুবে যাবে এ ফারাও–মুসা হবে তাদের সহায়
কিন্তু সব বৃথা যায়–আসে দাঁড়কাকের লোলুপতা!
আঁধারে কেউ কারো না, দোস্ত খুঁজি দিনের বেলায়
দোস্তের গায়ের রঙে কোকিলরাও কাকদের হারায়।
০৩.
ফুলের নীরবতা
জন্মেছে জানলার পাশে স্নিগ্ধ বেলি ফুল
মানুষ দেয় না দৃষ্টি, কত অলি আসে
মধু নেয় মুখ ভরে, ঘ্রাণ ভালোবাসে
বাতাস দোলায় তারে তবুও মশগুল
তবু ফুলের যৌবন হয় কি উন্মূল?
এক অলির প্রস্থানে অন্য অলি হাসে
তাই দেখে আমি হাসি–আচ্ছন্ন সুবাসে
বুলবুলটাও হেসে যায়, মনে ব্যথা-শূল!
যৌবন মধুপে খায়, খুশবু খায় হাওয়া
রূপ দেখে মগ্ন আমি, আফসোসে উতলা
মন ভরে চোখ নয়–যায় না তো বলা–
বউ কথা কও–যেন–শুধু দুঃখ গাওয়া!
কথা না বলেই ফুল কত কিছু বলে
মানুষ বধির তাই–বার্তা যায় জলে!
এসইউ/এএসএম