রাইসুল এইচ চৌধুরীর দুটি কবিতা
আজ তুমি আসবে বলে
আজ তুমি আসবে বলে
বাতাস খেলা করে বুকের পাঁজরে
শহরে-শহরে, অলিতে-গলিতে
গোলাপের পাঁপড়ি মিছিলে মিছিলে
সাঁওতাল নদী আমার অন্তঃপুরে
তোমার হাত ধরে ভিজবো বলে
বশিয়ার খালের কাকচক্ষু জলে
আজ আমি আছি বসে
বাতায়ন খুলে।
আজ তুমি আসবে বলে
চেয়ে থাকি আমি আদিম শহরে
এলেবেলে অলিগলি, রাস্তা পেরিয়ে
ভালোবাসা জমাই আজ চোখের নোনা জলে
তোমার আঙুল ছুঁয়ে অজানা শহরে
আঁকবো আলপনা প্রিয় অস্তাচলে।
আজ তুমি আসবে বলে,
সাজাই জোৎস্না আমি আঁখি পল্লবে
ইথারে ইথারে জ্বালাই প্রেম দ্বীপশিখা
লিনেটের ডানায় বাজে সন্ধ্যের আভা
তৃষিত নয়ন আজ হলো দিশেহারা
বিকেলের বাতাস তাই ছন্দ তুলে
শিষ দেয় ময়ূরাক্ষী অজানা ভুলে।
আজ তুমি আসবে বলে
বাতাস খেলা করে বুকের পাঁজরে।
****
শ্যামল মেয়ে
শ্যামল মেয়ে, আমি যদি অনুভূতিহীন মাটি হতে পারতাম
দিনের পর দিন বছরের পর বছর
চুপচাপ সহ্য করে যেতাম তোমার পায়ের গর্জন,
সহ্য করে যেতাম পৃথিবীর তাবৎ মানুষের বয়ে চলা আমার উপর দিয়ে
নিষ্ফলা মাটিকে যেমন কেটে ফালা-ফালা করে ফেললেও চুপচাপ থাকে
সকল ঝড়-তুফান উপর দিয়ে বয়ে গেলেও
নীরবে স্থির হয়ে থাকে
শ্যামল মেয়ে, আমি যদি মাটি হতে পারতাম,
তেমন চুপচাপ স্থির হয়ে থাকতাম তোমার দরজায়।
শ্যামল মেয়ে, আমি যদি শীতের গাছ-গাছালি হতে পারতাম;
আমার এ ডালপালা শুকিয়ে, পাতা খসিয়ে
বিরান ভূমি হয়ে যাওয়াটা নির্দ্বিধায় সহ্য করে যেতাম,
আমার কেউ ডাল ভেঙে নিলে টেরও পেতাম না,
টের পেতাম না আমার বুক চিড়ে কেউ নামিদামি দরজা-জানালা বানালেও!
পাতা কুড়িয়ে উনুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে-পুড়িয়ে
নিঃশেষ করলেও উহু শব্দটা পর্যন্ত করতাম না।
শ্যামল মেয়ে, আমি যদি মৃত কুমিরের ন্যায়
পড়ে থাকতে পারতাম জলের উপর যুগ-যুগ ধরে,
কেউ আঘাত করলেও টের পেতাম না
সামান্য সাড়া-শব্দও করতাম না,
নড়াচড়া তো দূরের কথা, স্থির হয়ে থাকতাম
অমবস্যার ঘোর অন্ধকারে কিংবা মিহি চান্নি-পসর রাতে;
কেউ চোখ রাঙালেও চোখে জল আসতো না
মন ভাঙালেও মন ভাঙতো না
শুধু চুপচাপ থাকতাম সদ্য সন্তান নষ্ট হওয়া বিধবার মতো।
কিন্তু
আমি তো অনুভূতিহীন মাটি নই;
শীতের শুকনো ডালপালাও নই,
নই মৃত কুমির,
আমি এক জলজ্যান্ত মানুষ!
তুমি আঘাত দিলে আমি যে কষ্ট পাই,
বুকে কষ্টের পেরেক ঢোকে,
চোখ রাঙালে চোখে জল আসে।
শ্যামল মেয়ে,
প্রতিমুহূর্তে এভাবে আমাকে আর কতবার মারবে তুমি,
কতকাল এ কষ্টের পিরামিড আমাকে বহন করাবে!
শুধু তোমাকে ভালোবাসার অপরাধে।
এসইউ/এমএস