মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোচিত উপন্যাস
বাংলা সৃজনশীল সাহিত্যের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক উপন্যাস লেখা হয়েছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে অসংখ্য উপন্যাস সমৃদ্ধ করেছে বাংলা সাহিত্যকে। বর্তমান প্রজন্মের লেখকরাও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস লিখতে এগিয়ে এসেছেন। তবে প্রবীণ কয়েকজন লেখকের আলোচিত উপন্যাস এখনো পাঠককে মুগ্ধ করে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস রচনায় শওকত ওসমানের (১৯১৭-৯৮) অবদান অবিস্মরণীয়। তাঁর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাসের সংখ্যা চারটি। উপন্যাসগুলো হচ্ছে—‘জাহান্নম হইতে বিদায়’ (১৯৭১), ‘নেকড়ে অরণ্য’ (১৯৭৩), ‘দুই সৈনিক’ (১৯৭২), ‘জলাঙ্গী’ (১৯৭৩)।
এ ছাড়া সমসাময়িক আবু বকর সিদ্দিকের ‘একাত্তরের হৃদয় ভষ্ম’ (১৯৭১), রশীদ করীমের ‘আমার যত গ্লানি’ (১৯৭৩), আনোয়ার পাশার ‘রাইফেল রোটি আওরাত’ (১৯৭৩), রশীদ হায়দারের ‘খাঁচায়’ (১৯৭৫), শওকত আলীর ‘যাত্রা’ (১৯৭৬) উল্লেখযোগ্য।
পাশাপাশি আবু জাফর শামসুদ্দীনের ‘দেয়াল’ (১৯৮৫), রশীদ হায়দারের ‘অন্ধ কথামালা’ (১৯৮২), রাবেয়া খাতুনের ‘ফেরারী মুখ’ (১৯৭৪) ও ‘মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী’, আমজাদ হোসেনের ‘অবেলায় অসময়’ (১৯৭৫) ও ‘উত্তরকাল’ (২০০৮), মাহমুদুল হকের ‘জীবন আমার বোন’ (১৯৭৬), আহমদ ছফার ‘ওঙ্কার’(১৯৮৫) ও ‘অলাতচক্র’, সেলিনা হোসেনের ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ (১৯৭৬) পাঠক হৃদয়ে দাগ কেটেছে।
তার কিছুকাল পরে সৈয়দ শামসুল হক উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরবর্তী সময় পরম্পরাকে অবলোকন করেছেন। তাঁর ‘নীল দংশন’ (১৯৮১), ‘নিষিদ্ধ লোবান’ (১৯৮১), ‘দ্বিতীয় দিনের কাহিনী’ (১৯৮৪), ‘অন্তর্গত’ (১৯৮৪), ‘এক যুবকের ছায়াপথ’ (১৯৮৭) আলোচিত হয়েছে।
একই সময়ে মিরজা আবদুল হাইয়ের ‘ফিরে চলো’ (১৯৮১), হারুন হাবীবের ‘প্রিয়যোদ্ধা প্রিয়তম’ (১৯৮২), শামসুর রাহমানের ‘অদ্ভুত আঁধার এক’ (১৯৮৫), ইউসুফ শরীফের ‘স্বপ্নের চারুলতা’ (১৯৮২), ‘প্রমোদে ঢালিয়া দিনু মন’ (১৯৮৩) ও ‘পরম মাটি’ (১৯৮৯), আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’ (১৯৯৬), রিজিয়া রহমানের ‘রক্তের অক্ষরে’, আল মাহমুদের ‘উপমহাদেশ’ (১৯৯৪) বাংলা সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
তবে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ সবচেয়ে বেশি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস উপহার দিয়েছেন আমাদের। তার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস সাতটি। তাঁর ‘শ্যামল ছায়া’ (১৯৭৩), ‘সৌরভ’ (১৯৮৪), ‘১৯৭১’ (১৯৯৩), ‘জোছনা ও জননীর গল্প’ (২০০৪), ‘অনীল বাগচীর একদিন’, ‘দেয়াল’, ‘আগুনের পরশমণি’ (১৯৮৬) বিভিন্নভাবে পাঠককে আকৃষ্ট করেছে।
এ ছাড়াও মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ (১৯৯৪), ‘আকাশ বাড়িয়ে দাও’, ‘কাচ সমুদ্র’ ও ‘ক্যাম্প’, আনিসুল হকের ‘মা’ (২০০৩), ‘চিয়ারি বা বুদু ওরাঁও কেন দেশত্যাগ করেছিল’ (২০০০), ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’ (২০০১) ও ‘জননী সাহসিনী ১৯৭১’ (২০১০) দীর্ঘকাল পঠিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
এসইউ/জেআইএম