খান মুহাম্মদ রুমেলের গুচ্ছ কবিতা
বৃক্ষকথা
বৃক্ষেরও কি মগজ আছে?
সে কি ভাবে প্রিয়র কথা!
মন কাঁদে কি তার—
প্রিয় কোনো পাতার জন্য?
বৃক্ষ যে জড়িয়ে ধরে পাশের ডাল—
সেই কি তার প্রকাশ ভালোবাসার?
বৃক্ষ ঝরায় নানান রস, কষ কতো
এই কি তার চোখের জল না পাওয়ার?
বাতাস পেয়ে দোলে সে যে বেসামাল
সেই কি তার উদ্দাম উল্লাস কাল?
বৃক্ষ কি তৃষ্ণা পোষে প্রিয় কোনো বৃক্ষের জন্য?
বৃক্ষেরও কি কষ্ট হয়, আমার যেমন তোমার জন্য?
শেকড় ছেঁড়ার কষ্ট সয়ে বাঁচে সে কেমন করে!
****
কবিত্বের যাতনা
কবি প্রকৃতি ভালোবাসে, বাসে ভালো আরও
ফুল-ফল নদী-জল খোলা আকাশ মেঘকালো কেশ কারো!
সেই সাথে ভালোবাসে কবি দেহ
এতে পাপ নেই, নেই কদর্য বাসনার মোহ।
শরীর তো মন্দির নয়, থাকবে পবিত্র রাখার দায়
সৃষ্টির মাদকতায় কবি শরীরে শরীর চায়।
কবি মনে বাস করে অকর্ষিত আলোক রেখা
খোঁজে সে জীবনের মানে অদেখা কালিতে লেখা।
কবিকে বাঁচিয়ে রাখে জয়ের বাসনা
বারবার ফিরে আসে, কোনো কিছুই শেষ না।
কবির ছোঁয়ায় পুষ্পিত হয় জল
কবি ভালোবাসে ঘাসফুল শতদল!
কবি যেদিন প্রবেশ করে ভেতরে তোমার সমূল
বাতাসে বাতাসে ফোঁটে লক্ষ ফুল!
কবিতা চায় ঘুরে-ফিরে উপেক্ষার যাতনা!
****
আমার বন্ধু অনিমেষ
সাঁঝ বাতিটা জ্বলে উঠলেই গোধূলিবেলায়
তাকাস আকাশের দিকে হৃদয়ের সব ক’টি জানালা খুলে
লালচে রঙের চাঁদের দেখা পেলে বলিস তাকে—
আমি ভালো নেই!
অচিকিৎস্য রকম পাগল হয়ে যাওয়ার আগে
আমার বন্ধু অনিমেষ বলেছিল এক সন্ধ্যায়!
এরপর কেটে গেলো কত গোধূলি সাঁঝের বেলা
লালচে কিংবা রূপালি কোনো চাঁদ দেখা হয়নি আর।
অনিমেষের স্মৃতিবহ বৃক্ষটাও আজ উধাও।
সব ছেড়েছুড়ে এসে নগরে হলো নোঙর
পেছনে রইলো পড়ে, ছায়াতরু অনিমেষ সবই
রিলে রেসের ঘোড়া হারালো পথ আগাগোড়া!
এই সন্ধ্যায় লালচে চাঁদের নিচে পেয়েও তোমায়—
ছেড়ে দিতে হলো নিতান্ত আলগোছে অকারণ।
অনিমেষ নাকি ছায়াতরুর অভিশাপে—
তোমাকে হারাই বারেবার?
****
আমরা যখন জাগি
আমরা নিদহীন চোখে খুঁজি আলো
বিনাশহীন যাত্রায় ক্লিষ্ট থাকি বিরামহীন।
সামর্থের সবটুকু দিয়ে লড়ে যাই—
ক্লেদাক্ত পঙ্কিল তাড়ানোর সোনালি আশায়!
মেধার তীক্ষ্ণতায় যোগ করি রোমকূপের ঘাম।
শুধু একটু আলো জ্বালাবার আশায়।
দিনের শেষভাগে এসে তুলে নেয় কেউ
আমাদের সীমাহীন মমতার ফসল
আমাদের লালিত শ্রমের ঘামের অধিকার!
তবুও আমরা লড়ে যাই নির্বিবাদ
ঘাম ঝরানো শ্রম ভালোবাসি বলেই।
একদিন ঠিকই বলবো শিরা টানটান
কণ্ঠনালীর তীব্রতায় ছোঁবো আকাশ
ফালাফালা হবে সকল সুবিধাবাদী বাহাস!
মেহনতির অমিত তেজ সইবে তো!
তৈরি হোন দেহে মনে, আমরা আসছি...
স্বপ্নের পাখি মরে না, এটাই ইতিহাস।
এসইউ/এএসএম