নীল নির্বাসন: অসাধারণ গল্প সংকলন
শহিদুল ইসলাম নিরব
‘নীল নির্বাসন’ লেখক প্লাবন রায়ের ছোটগল্পের সংকলন। যেখানে উপস্থিত হয়েছে সামাজিক, রোমান্টিক, বিচ্ছেদময় গল্পগুলো। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, উত্থান-পতন নিয়েই মানুষের জীবন। তেমনই কিছু জীবনের গল্প লিখেছেন লেখক। কিছু সাধারণ মানুষের জীবনের রূপান্তর নিয়েই গল্পগুলো। মানুষের জীবন যেন অনেকটাই দিবা-রাত্রির মতো। কখনো আলোকোজ্জ্বল, কখনো অন্ধকারাচ্ছন্ন। জীবনে রাত নেমে এলে করুণাধারার ভীষণ প্রয়োজন। কিছু মানুষ নিজের অজান্তেই করুণাধারার সন্ধানে জীবন পার করে দেন, মৃত্যুবরণ করেন এক জনমের আফসোস নিয়ে।
বইটি সাজানো হয়েছে ছয়টি গল্পের সমন্বয়ে। সেখান থেকেই ‘রূপান্তর’ ও ‘প্রস্থান’ গল্পের সারসংক্ষেপ বর্ণনা করছি– রূপান্তর গল্পে মেয়েটি যখন সব ছেড়ে শুধু ভালোবাসার টানে নিম্নবিত্ত একজন ব্যাচেলর ছেলের কাছে চলে আসে, তখন ছেলেটি নিজেই মেয়েটির থেকে হারিয়ে যেতে চায়। ছেলেটি মনে করে, ‘হারিয়ে যাওয়ার জন্য দূরে কোথাও যেতে হয় না। শুধু যোগাযোগটা বন্ধ করে দিলেই হয়। চেনা মানুষের ভিড়েই অচেনা হয়ে দিব্যি থাকা যায়’। একজন উচ্চবিত্ত ঘরের মেয়ে হয়েও কীভাবে নিম্নবিত্তের একজন ছেলের সঙ্গে সংসার বাঁধে এবং অপরিচিত বাস্তবতার সঙ্গে পরিচিত হয়। হার না মেনে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার নামই যে ভালোবাসা, তারই প্রকাশ পেয়েছে এ গল্পে।
প্রস্থান গল্পে মাতৃহীন অসুস্থ বাবাকে নিয়ে যে ছেলের ছোট্ট সংসার এবং সব জেনেও যে মেয়েটি হাসিমুখে প্রেমিকা থেকে বউ হয়ে ঘরে আসতে পারে। কে জানতো সেই মেয়েটিই একদিন খুব সহজে চলে যাবে? আসলে ‘প্রচণ্ড রকম অসহায় কণ্ঠে, ‘থেকে যাও প্লিজ’ বলার পরেও যে চলে যেতে চায়, তাকে চলে যেতে দেওয়াটাই হয়তো ভালো।’ কালো সানগ্লাসে রোদের সাথে কান্না আটকে যে মেয়েটিকে ফেরানো যায় না, সে মেয়েটি কি সত্যি করে কাউকে ভালোবাসতে পারে? হয়তো পারে না।
একটি ছেলে যখন মিথ্যা অপবাদের বোঝা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, তখন তার পাশে কেউ আসে না। ছেলেটি তখন একের পর এক সিগারেট পুরিয়ে নিজের নিঃসঙ্গতা দূর করার বৃথা চেষ্টা করে। নিঃসঙ্গতা দূর করার বৃথা চেষ্টার ফাঁকে যখন কেউ তার অসুস্থ বাবাকে দেখতে গিয়ে বুঝে ফেলে বাবাও ফুরিয়ে গেছে। তখন সে মানুষটির কোনো স্বার্থ থাকে না। মিথ্যা অপবাদ গ্রহণ করে নেয় মাথা নিচু করে। অপরাধ ছাড়াই শাস্তি পেতে হয়। অথচ তখনও সেই ছেড়ে যাওয়া মানুষটি বুকের মধ্যে ছোটাছুটি করে।
পৃথিবীতে কেউ না থাকা মানুষটি একসময় লাশবাহী গাড়ির ড্রাইভার হয়, নেশা করে। ছেড়ে যাওয়া মানুষটাকে মনে পড়ে গেলে একসময় মৃত মানুষ বলে ওঠে, ‘ভাইসাব দীপা ভালো আছে। আমার কথা বিশ্বাস করতে পারেন। মৃতরা কখনো মিথ্যা বলে না, তাদের মিথ্যা বলার নিয়ম নাই’।
আসলে গল্প বললে ভুল হবে। আমাদের চারপাশে প্রতিনিয়ত এমন কিছু ঘটেই চলেছে। যার কেউ নেই, স্রষ্টা হয়তো তার জন্য কাউকেই রাখেন না, যা-ও দু’একজন থাকে, তাদেরকেও কেড়ে নেন।
নীল নির্বাসন বইটিতে জীবনের গল্প বলা হয়েছে। আমাদের আশেপাশে বাস করা ভিন্ন ভিন্ন ধাচের মানুষের ভিন্ন কিছু গল্প তুলে ধরেছেন লেখক প্লাবন রায়। এর মাঝে আছে জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়ে কাছে থাকার গল্প, আবার হেরে গিয়ে বিচ্ছেদের গল্প, এক বাবার জীবনের সুন্দর স্নিগ্ধ ফুল তার মেয়ের লড়াইয়ের গল্প, আছে ফিরে আসার গল্প।
বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০২১ সালের অমর একুশে বইমেলায় বেহুলাবাংলা প্রকাশনী থেকে। বইটি সংগ্রহ করা যাবে রকমারি ডটকম ও প্রকাশনীর ফেসবুক পেজ থেকে।
এসইউ/এমএস