মায়াবতী: পর্ব ১৭
কথাসাহিত্যিক মোহিত কামালের মায়াবতী বাংলা সাহিত্যে দ্বিতীয় মনোবৈজ্ঞানিক উপন্যাস। সাহিত্যের শব্দবিন্যাসে তিনি ব্যবহার করেছেন মনস্তত্ত্ব, সমাজের আড়ালের চিত্র। মা প্রত্যক্ষ করেছেন, মেয়েরা নানাভাবে উৎপীড়ন ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়, সহজে মুগ্ধ হয়ে অবিশ্বাস্য পাতানো ফাঁদে পা দেয়। মায়ের একান্ত চাওয়া মেয়ে ক্যারিয়ার গড়ে তুলুক। বিধিনিষেধ আরোপ করেন মা। মেয়ে তখন মনে করে, মা স্বাধীনতা দিতে চায় না, বিশ্বাস করে না তাকে। মায়ের অবস্থানে মা ভাবছেন তিনি ঠিক। মেয়ের অবস্থানে মেয়ে ভাবছে, সে ঠিক। মায়ের ‘ঠিক’ এবং মেয়ের ‘ঠিক’র মাঝে সংঘাত বাধে। সংঘাত থেকে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়, ভুল করে বসে মেয়ে রিয়া। পালিয়ে যায় ঘর থেকে। এই ‘ভুল’ই হচ্ছে উপন্যাসের মূলধারা, মূলস্রোত। মায়াবতী পড়ে চিন্তনের বুননে ইতিবাচক গিঁট দেয়ার কৌশল শেখার আলোয় পাঠক-মন আলোকিত হবে। জানা যাবে টিনএজ সমস্যা মোকাবিলার কৌশল। জাগো নিউজের পাঠকের জন্য ধারাবাহিক প্রকাশিত হচ্ছে সাড়া জাগানো উপন্যাসটি—
ষোলো.
আজ সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় থাকবে রিয়া। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কলেজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ও। বসে আছে ড্রেসিং টেবিলের সামনে। গলায় ঝুলিয়েছে বেত আর বাঁশের তৈরি মণিপুরি সেট।
হঠাৎ মনে হলো ভালো সাজ নেওয়া দরকার। মণিপুরি সেট খুলে রাখল ও। উজ্জ্বল ফরসা মুখের ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফাউন্ডেশনের কথা ভাবতে লাগল।
বাথরুমে ঢুকে ক্লিনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিয়ে ডটডট দিয়ে মুখে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নিলো। আঙুলের কোমল ছোঁয়ায় ডলে-ঘষে মসৃণ করে মিশিয়ে দিলো ফাউন্ডেশন। মুখজুড়ে এখন লেপটে আছে ফাউন্ডেশনের কোমল পরশ।
এক ফাঁকে নিজের ঘরে স্টেরিয়ো সেট অন করে রুমের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিলো। রবীন্দ্রসংগীতের কোমল ছোঁয়ায় মনের ক্যানভাসেও লাগিয়ে নিতে লাগল গোপন ফাউন্ডেশন।
মনের ফাউন্ডেশন স্থায়ী। মোছা যায় না। ছাপ পড়লে ছাপ বসে যায়। ওঠানো যায় না। মুখের দৃশ্যমান ফাউন্ডেশন মোছা যায়। মুখে পানি স্প্রে করল রিয়া। স্প্রের পর নরম টাওয়াল দিয়ে চেপে চেপে মুছে নিলো মুখের ফাউন্ডেশন।
রিয়ার চোখ অন্যরকম সুন্দর। সুন্দর চোখে সাজ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবু সাজতে থাকে। গুনগুন করে গাইতে লাগল গান, ‘চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে...’ গানের সঙ্গে সঙ্গে গুনগুন করে ওঠে মন। গুনগুন মনে ডান হাতে তুলে নিলো ব্রাশ। ভ্রু ব্রাশ করে হাইলাইটস করতে থাকে ও।
এ সময় দরজায় টোকা টের পায় রিয়া। স্টেরিয়ো সেট অফ করে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। টোকা শুনে বুঝতে পেরেছে এটি বাপির টোকা। দরজা খুলে সামনে দাঁড়াল ও।
ইমরুল চৌধুরি একবার মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন। অসাধারণ রূপবতী মেয়ের জন্য বুকের মধ্যে গোপন মায়া। মায়ার সংসারে সব দেখা যায় না। সব ফুরিয়ে যায় না। প্রতিদিন বুকে জমতে থাকে গোপন মায়ার ঢেউ। ছোট ছোট ঢেউ তৈরি করে মায়ার সাগর। মৃত্যু পর্যন্ত এই সাগরে সাঁতরে বেড়ায় মানুষ। কেউ সাঁতরাতে না পেরে ডুবে যায়। কেউ সফল হয়, গোপনে গোপনে সফল মায়ার চাষ করে জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়। জানেন তিনি।
বাপি, কিছু বলবে?
তুমি কি কোথাও যাবে?
হ্যাঁ। মামণি তো জানে। ড্রাইভারকে বলে রেখেছি।
ও! ঠিক আছে। তো কোথায় যাচ্ছ?
আমাদের কলেজের একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে। অনুষ্ঠান পরিচালনায় থাকব আমি। একটু আগেই যেতে হবে।
ঠিক আছে। আমার একটা প্রোগ্রাম ছিল। সেটা বাতিল করে দিলাম।
না, বাপি। তোমার প্রোগ্রাম বাতিল কোরো না।
বাতিল না করলে তুমি যাবে কীভাবে?
কুসুমের গাড়ি নিয়ে যাব। তুমি যাও। আমাদের নিয়ে ভেবো না।
আচ্ছা।
ওরা ক্লোজ ফ্রেন্ড। ওদের জুটি মুগ্ধ করে তাকে। কুসুমকেও নিজের মেয়ের মতো মনে হয়। কুসুমের গাড়িতে যাওয়ার ব্যাপারে কোনোরকম দোমনা নেই নিজের মনে। তবু ইমরুল চৌধুরি জানতে চাইলেন, ওদের গাড়ির কথা বলে রেখেছ।
না। বলিনি। কুসুম তো জানে, আমার সঙ্গে যাবে। এজন্য বলা হয়নি।
তাহলে কথা বলে নাও। কুসুমকে ফোন করে জেনে নাও ওদের গাড়ি পাওয়া যাবে কি না?
আচ্ছা, তুমি অপেক্ষা করো।
রিয়া কুসুমকে ফোন করে। কথা শেষ করে ফিলে এলো বাবার সামনে। তিনি ফিরে এসেছিলেন বসার ঘরে।
বাপি, কুসুমদের গাড়ি বাইরে। অন্য গাড়িতে চলে যাও। আমি আমাদের গাড়ি নিয়ে যাব। প্রোগ্রাম বাতিল কোরো না।
ইমরুল চৌধুরি ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন।
তিনি জানেন, মেয়ে অনুষ্ঠানে যাবে। এই সুযোগে মেয়ের সঙ্গে একটু আলাপ করে নিলেন।
মেয়েরা এখন নিজের জগৎ নিয়েই ব্যস্ত। নিজেদের দ্বন্দ্ব-সংঘাত, মান-অভিমান নিয়েই ব্যস্ত থাকে। বাবা-মায়ের জন্য আলাদা সময় দেওয়ার সুযোগ পায় না, মনোযোগ পায় না খুঁজে। জানেন ইমরুল চৌধুরি। এজন্য মাঝে মাঝে রিয়ার খোঁজে আসেন তিনি ওর ঘরে।
বাপিকে বিদায় দিয়ে দরজা লক করে দিলো রিয়া। আবার এলো ড্রেসিং টেবিলের সামনে।
এবার আইশ্যাডো লাগাতে থাকে। প্রথমে হালকা করে লাগায়। পরে গাঢ় করে নেয়। চোখের পাপড়িতে মাশকারা লাগানোর পর চোখের পাতায় লাইনার টোন বসিয়ে দেয়। পেনসিল দিয়ে আইব্রো ইচ্ছামতো চিকন করে নেয়। চোখের নিচে কাজল দিয়ে নিচটা ঝেরে দেয়। লাইনার দিয়ে ঠোঁট এঁকে লিপস্টিকটাও লাগিয়ে নেয় রিয়া। কানে পরে নেয় রুপার দুল। সাদা দুলটার আকৃতি অনেকটা পানপাতার মতো ছড়ানো। পানপাতার বোঁটাটা কানে সেট করা। আর নিচের দিকে একটা চকচকে স্টোন বসানো, ঝুলে আছে কাঁধ পর্যন্ত। মণিপুরি সেটের বদলে এখন সে গলায় ঝুলিয়ে নিলো রুপার গর্জিয়াস সেট।
হঠাৎ দরজায় টোকা। দ্রুত টোকা। রিয়া বুঝতে পারল কুসুম এসেছে।
দরজা খুলে দেখে কুসুম না, এসেছে বাঁধন। বাঁধনের সঙ্গে যূথী। ওরাও যাবে অনুষ্ঠানে।
যূথী মুগ্ধচোখে তাকিয়ে থাকে রিয়ার দিকে। গোপন চোখের চাউনিতে কথা হয়ে যায় দুজনার মাঝে। এ কথা টের পেল না বাঁধন। রিয়ার একান্ত আপন জগতের একজন এখন যূথী। যূথীর আপন ঘরে ঠাঁই করে নিয়েছে রিয়া। এই গোপন খবর কেউ জানে না আর।
কোনো কথা না বলে যূথী চুপচাপ খাটে গিয়ে বসল।
বাঁধনের উল্লাস বরাবরের মতো একই রকম। আন্টি কোথায়? বলতে বলতে রিয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল।
বাঁধনকে পেয়ে রাহেলা চৌধুরি খুশিতে নড়ে ওঠেন। সহজাত মায়ের মন নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরেন। আলতো আটকে যায় বাঁধন।
রিয়া সাজ শেষ করেছে। সাদা-কালো শাড়ি পরেছে। সাদা শাড়ির ওপর পাতার ছাপ বসানো। মাঝে মাঝে গোলাকার কালো বৃত্তের সারি।
যূথী বলল, আপা অপূর্ব লাগছে তোমাকে।
থ্যাঙ্কস ফর কমপ্লিমেন্ট।
তোমার গালে একটা চুমু দিতে ইচ্ছা করছে।
রিয়া হেসে বলল, দিতে, না পেতে ইচ্ছা হচ্ছে?
যূথী হো-হো করে হেসে ওঠে। হাসতে হাসতে বলে, দরজা লক করবে?
কেন?
মজার একটা কথা বলতে চাই, মনে পড়ে গেছে।
মজার কথা দরজা লক না-করে বলা যায় না?
না। যায় না। কারণ কথাটা একান্ত গোপন। গোপন কথা বলতে হলে গোপনীয়তা বজায় রাখতে হয়। পরিবেশটাও হতে হয় গোপন।
রিয়া একবার গোপন কথা শুনেছে। বুঝেছে গোপন কথা কত গোপন হতে পারে। দ্রুত দরজা লক করে সামনে এসে দাঁড়াল। কৌতূহলী হয়ে ওঠে ওর মন।
আপা, আমি দেখতে কেমন?
সুইট। মায়াবতী। রূপসী।
ঠিক বলেছ। যখন নাইনে পড়ি, কয়েকটা মেয়ে আমাকে দেখলেই গাল টিপে দিত।
তা তো দিতেই পারে। দুষ্টুমি করতে পারে না?
না। বিষয়টা মোটেই দুষ্টুমির পর্যায়ে ছিল না।
কী পর্যায়ে ছিল?
একজন সুযোগ খুঁজত। একা পেতে চাইত। চান্স পেলেই ধরে জোর করে ঠোঁটে চুমু খেত।
দু-একজন এমন ব্যতিক্রম হতে পারে। রিয়া আশ্বস্ত করার চেষ্টা করে।
এটা কি স্বাভাবিক? মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে চুমু খাবে কেন?
রিয়া যথাযথ জবাব দিতে পারল না। বোঝাতে চেষ্টা করে, হয়তো মেয়েটা তোমাকে ভালোবাসত।
না। এটা কেবল একজনের ব্যাপার না। আরও দু-তিনটি মেয়ে আমার সঙ্গে এমন আচরণ করত। একবার তো স্কুল ছুটির পরে দুজন আমাকে ধাওয়া করল। ছুটে গিয়ে আমি ক্লাসরুমে ঢুকে যাই। বেঞ্চির তলে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করি। আরেক বান্ধবী এসে উদ্ধার করে আমাকে।
রিয়া মেয়েদের এ ধরনের আচরণের ব্যাখ্যা দিতে পারল না। তবে বুঝতে পারল ওটা স্বাভাবিক না, অস্বাভাবিক আচরণ। ফ্রেন্ডের জন্য ফ্রেন্ডের ভালোবাসা থাকতে পারে। তাই বলে ঠোঁটে চুমু খাওয়া?
যূথীর অভিজ্ঞতার কাছে নিজেকে অনেক খাটো মনে হয়। আরও জানার জন্য মন ব্যাকুল হয়। যূথীকে একটু উসকে দিলো সে। ইচ্ছাকৃত না। জানার কৌতূহল থেকেই ভেতর থেকে প্রশ্ন উঠে আসে।
কেবল কি ঠোঁটে চুমু খেতে চায় ওরা?
আরে না। তোমাকে বলতে দ্বিধা নাই। একদিন দুই বান্ধবী আসে আমার বাসায়। বাসায় মামণি ছিল না। আমার ঘরে ঢোকে ওরা। হালকা ড্রেস পরনে ছিল। ওরা দুজনই দরজা বন্ধ করে দেয়। আমাকে চুমুতে চুমুতে ভাসিয়ে দেয়। ঠোঁটে। বুকে। পুরো দেহে।
যূথীর বর্ণনা শুনে শিহরিত হয় রিয়া। জানার আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।
জোর করে এমন করল?
থেমে যায় যূথী। নিজেকে খুঁজে দেখার চেষ্টা করে। যথাযথভাবে যাচাই করে বলল, না। পুরোপুরি জোর করেছে বলা যাবে না। প্রথম আক্রমণে জোর ছিল। পরে আমিও বোধ হয় অংশগ্রহণ করেছি, প্রশ্রয় দিয়েছি ওদের আচরণ। আমিও বোধ হয় একসময় বিষয়টা এনজয় করেছি।
রিয়া থেমে গেল। আর কোনো কথা বাড়ানোর সুযোগ পেল না। চোখের ইশারায় বলল, বাকি কথা পরে শুনব।
দরজায় আঘাত পড়ছে। বাঁধন ধাক্কা দিচ্ছে।
রিয়া উঠে দরজা খুলে দেয়।
কিরে? দরজা লাগিয়েছিস কেন? প্রশ্নটি করতে গিয়েই থেমে গেল বাঁধন। দেখল রিয়া শাড়ি পরেছে। সেজেছে।
সাজ নেওয়ার সময়, শাড়ি পরার সময় সবাই দরজা লাগাতেই পারে।
সরল মন সরলভাবে দেখেছে বিষয়টা।
বাঁধন বলল, কুসুমকে ডাক।
রিয়া বলল, তুই উপরে যা। ডেকে নিয়ে আয়। খুশি হবে তোকে পেয়ে।
বাঁধন আর দাঁড়াল না। কুসুমের বাসায় ছুট দিলো।
রিয়া আবার ফিরে এলো যূথীর সামনে। যূথীর দিকে মনোযোগ দিয়ে ভালো করে ওকে দেখে নিলো। মুগ্ধতা বাড়ে ওর। কোনো প্রশ্ন না করে তাকিয়ে থাকে।
যূথীর ফ্যাশনে অন্য সংস্কৃতির ছোঁয়া। রঙিন প্রিন্টেড লং স্কার্টের সঙ্গে স্টোন স্টাডেড সাদা টপস। অসাধারণ অ্যাট্রাকটিভ সেক্সি লুক।
যূথী প্রশ্ন করে, কী দেখছ আপা?
রিয়া বলল, এটা তো আমাদের দেশের ফ্যাশন না, না?
হ্যাঁ। এটা সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় মিডলইস্ট ফ্যাশনের জনপ্রিয় কালেকশন।
কোথায় পেলে?
যূথী হেসে বলল, গিফটেড বাই মাই বয়ফ্রেন্ড।
মামা?
হ্যাঁ। উনি সিঙ্গাপুর হয়ে আসার সময় এয়ারপোর্ট থেকে কিনেছেন?
সিঙ্গাপুরে মিডলইস্ট ফ্যাশন-সামগ্রী পাওয়া যায়?
খুব যায়। মামাই বলেছিলেন।
রিয়া বলল, তুমি তো গতকাল নন্দন থেকে প্রচুর বিউটি প্রোডাক্টস কিনেছ। মামা গিফ্ট করে না?
করে। চট্টগ্রামের বাসায় রেখে এসেছি ভুলে। পুরো বিউটি-বক্স আলাদা করা ছিল। ব্যাগে ঢোকাতে মনে ছিল না।
আচ্ছা। আচ্ছা। বলেই রিয়া আবার খাটে বসে। তো ওই দুই বান্ধবীর কথা বলো। ওরা আর জ্বালায় না।
জ্বালায়। ওদের দুজনের মধ্যে অদ্ভুত ইন্টিমেসি। আবার দুজন একসঙ্গে আমাকে আদর করতে চায়। বিষয়টাও অদ্ভুত, না আপা?
রিয়া কোনো উত্তর দিতে পারে না। যূথীর সঙ্গে কেবল সায় দেয়।
যূথী প্রসঙ্গ পালটায়। শুধু কি ওরা আপা? ছোটবেলায় এক হুজুরের কাছে পড়তাম। বয়স্ক হুজুর। দাড়িওয়ালা। আমাকে খুব আদর করেন, বেশি সময় দেন। প্রথমে বুঝতে পারিনি। আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দিতেন। বাড়ন্ত বয়স আমার তখন। ভালো লাগত উনার ছোঁয়ায়। একসময় সেই ছোঁয়াতেও দেখি অন্যরকম কাজ। এখন ভাবতে গেলে শিউরে উঠি। ঘেন্নায় গুলিয়ে ওঠে শরীর। খারাপ হয়ে যায় মন।
বলো কী! রিয়া চমকে ওঠে।
সত্যি বলছি আপা। এজন্য আমি ভড়কে যাই। মাঝে মাঝে মনে হলে ভাবি আমি দেখতে কেমন? কী আছে আমার দেহে? কেন সবাই আমার সঙ্গে এমন আচরণ করে? কী দোষ আমার, আপা? প্রশ্ন করতে করতে স্বর চেপে যায়।
তোমার দোষ না। যারা কুৎসিত তারা সবার সঙ্গে কুৎসিত আচরণ করে। অনেক উঠতিবয়সি মেয়ে এদের কারণে ভোগে। ওদের আচরণের জন্য তুমি মোটেই দায়ী নও। অন্যের বাজে, নোংরা আচরণের কারণে কেন নিজেকে দায়ী ভাববে? কেন নিজেকে দোষী ভাববে?
রিয়ার কথায় আবার তেজ ফিরে পায় যূথী। ধরা গলায় আবার ফিরে আসে সতেজ কথা।
ঠিকই বলেছ আপা। অন্যের দোষের বোঝা আমরা কেন বহন করব? অন্যের দোষের বোঝা ছুড়ে ফেলে দেবো নর্দমায়। নিজেকে ভারমুক্ত রাখব। ঠিকই বলেছ আপা। ধন্যবাদ তোমাকে।
কুসুমকলি ও বাঁধন ফিরে এসেছে। সবাই একসঙ্গে নিচে নেমে এলো। বাঁধনের গাড়িতেই যাবে কলেজে। টয়োটা ক্যামরিতে উঠে বসেছে ওরা, গাড়ি ছুটতে থাকে বেইলি রোডের দিকে।
চলবে...
এসইউ/এএসএম