ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

ধর্মদর্শন ও বিস্ময়ের বিজ্ঞান: ভাববাদ ও বস্তুবাদের ব্যাখ্যা

সাহিত্য ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২:৫৯ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

রাশেদ রেহমান

বহুমাত্রিক লেখক, সম্পাদক, কবি ও কলামিস্ট শহিদুল ইসলাম নিরবের ব্যতিক্রমধর্মী সৃষ্টি ‘ধর্মদর্শন ও বিস্ময়ের বিজ্ঞান’ বইটি। লেখক সদ্য জাগ্রত চেতনা শুধু সত্য আদর্শের প্রচার এবং বাস্তবতার নিখুঁত শিল্পায়নেই সীমাবদ্ধ নয় বরং অগ্রগামী বিজ্ঞানের আলোকে ধর্ম, দর্শন এবং মানবতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অন্তরে অনুভব করতে চেয়েছেন পরম স্রষ্টা এবং সৃষ্টিকে। স্রষ্টা এবং সৃষ্টিকে গভীর উপলব্ধির মাধ্যমে সত্যানুসন্ধানের মৌলিক আগ্রহের শৈল্পিক প্রকাশই ‘ধর্মদর্শন ও বিস্ময়ের বিজ্ঞান’।

লেখক বইটির শুরুতেই অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে নিয়ে লেখা কঠিন বিষয়’। তবে পরবর্তীতে বিজ্ঞানময় বর্ণনা এবং ধর্মের প্রতিষ্ঠিত সত্যের অভূতপূর্ব সম্মিলনে স্রষ্টার অস্তিত্বকে উপলব্ধির সাহসী পদক্ষেপ দেখিয়েছেন তিনি। নিজেকে জানা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ? নিজেকে জানার আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে কি?

সত্যানুসন্ধানী মানুষ মাত্রই জানেন নিজেকে জানার প্রচেষ্টা ছাড়া স্রষ্টা এবং সত্যের অনুসন্ধানের প্রচেষ্টা অত্যন্ত বোকামি। তাই তো লেখক মহান সাধক মনসুর হাল্লাজ, লালন সাঁইজি, সক্রেটিস প্রমুখের প্রতিষ্ঠিত দর্শনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনের আলোকে বস্তুবাদী বিজ্ঞানীদের নিরেট তত্ত্বের চেতনায় গেয়েছেন নিজেকে জানার গান। এ গান যেন স্রষ্টা এবং সমগ্র সৃষ্টির অভিন্ন সত্তার প্রতিষ্ঠিত প্রমাণপত্র।

মানব ইন্দ্রিয়ের সীমাবদ্ধতা সত্য এবং বাস্তব অস্তিত্বকে উপলব্ধির পথে অন্তরায় হতে পারেনি। কেননা মানুষের জ্ঞানস্পৃহা এবং অধ্যবসায়ের ক্ষমতা প্রচণ্ড। প্রকৃতির নীরব ভাষাকে উপলব্ধির অব্যর্থ হাতিয়ার গণিতশাস্ত্র। গণিতশাস্ত্রের সঞ্জীবনায় পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন শাস্ত্র, জীব বিজ্ঞানের আলোকে মানুষের সীমাবদ্ধ চেতনা প্রকৃতি অবাস্তব অস্তিত্বকে বোঝার দুরন্ত সাহস দেখিয়েছে।

লেখকের গাণিতিক ব্যাখ্যাসমৃদ্ধ সুসংহত বিবৃতির এ সাহসিকতার বাইরে নয়। মহাবিশ্বের উদ্ভব এবং পরিণতির অনন্ত জিজ্ঞাসা, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরমাণু থেকে সুদূর নক্ষত্র সর্বত্র বিরাজমান সুশৃঙ্খলতার অবলোকন লেখকের অনুসন্ধানী মনকে কিছুটা হলেও তৃপ্ত করেছে।

আত্মার অস্তিত্ব বিজ্ঞানের কোনো প্রতিষ্ঠিত সত্য নয়। কারণ হয়তো বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। তবে অনুভবের গভীরে গমন এবং দর্শনের তাত্ত্বিক চেতনা আত্মার অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারেনি।

লেখকের বর্ণনায় আশরাফুল মাখলুকাত মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব, মহান স্রষ্টা কর্তৃক মানুষকে প্রতিনিধি নির্বাচন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ মোহাম্মদের (সা.) চিরন্তন আদর্শের আলোকে মানবধর্মের বিজয় বর্ণিত হয়েছে। সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠায় ইসলামের অকুণ্ঠ সমর্থন লেখকের অন্যতম অনুপ্রেরণা।

লেখক স্পষ্টতই বিভেদের বিপক্ষে। বিভেদ স্রষ্টার বিধান নয়। লেখকের বলিষ্ঠ অভিমত, পুঁজিবাদীরা পুঁজিবাদের অভিশাপেই নিশ্চিহ্ন হবে। লেখক এক বিশ্বসরকারের আগমনে বিশ্বাসী, যিনি সাম্যবাদের বলিষ্ঠ প্রতীক। এ সাম্যবাদ সব সত্যকে ধারণ করবে, সব শুদ্ধ চেতনায় মানবচেতনাকে করবে সমৃদ্ধ। এ সাম্যবাদের বিশ্বজনীন প্রতিষ্ঠা মানবসমাজে ত্বরান্বিত করবে শান্তি, স্রষ্টা এবং সৃষ্টির পবিত্র মিলনে বিশ্বসংসারের সব অন্ধকার দূর হবে–লেখকের এটাই প্রত্যাশা।

যে কোনো বয়সের পাঠক যে কোনো সময় তার চিন্তার জগতকে সমৃদ্ধ করতে ডুব দিতে পারেন লেখক শহিদুল ইসলাম নিরবের ‘ধর্মদর্শন ও বিস্ময়ের বিজ্ঞান’ বইটিতে।

এসইউ/এমএস

আরও পড়ুন