শরতের আলোচিত কিছু বই
ঋতুচক্রে শরৎকাল গুরুত্বপূর্ণ। সাহিত্যেও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। অন্য ঋতুর মতো শরৎকালও সাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে। বাংলা গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক ও গানে শরতের উল্লেখ থাকলেও শরৎকেন্দ্রিক একক সাহিত্য খুঁজে পাওয়া মুশকিল। অন্তত আমার চোখে পড়েনি। তাই বিশ্ব সাহিত্যে চোখ বোলাতে হলো। অনেক খুঁজে কিছু বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেল। চলুন সেখান থেকেই জেনে নিই শরতের কয়েকটি বই সম্পর্কে—
অটাম: ম্যান বুকার প্রাইজ ফাইনালিস্ট আলি স্মিথের মৌসুমী সিরিজের প্রথম উপন্যাস ‘অটাম’। বইটি ২০১৭ সালের ০৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয়। এতে বার্ধক্য, সময় এবং ভালোবাসা নিয়ে অবিস্মরণীয় গল্প আছে। এর গল্পটি লেখকের নিজের। বইটি ওয়াশিংটন পোস্টের একটি উল্লেখযোগ্য বই। এছাড়া দ্য নিউইয়র্ক টাইমস থেকে বছরের সেরা দশটি বইয়ের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। দুই বন্ধু ড্যানিয়েল ও এলিজাবেথের ভালোবাসা তুলে ধরা হয়েছে এতে। এখানে প্রেম-বিরহ, আশা-নিরাশার আখ্যান রচিত হয়েছে।
অটাম লাইট: পিকো আইয়ারের একটি আত্মজৈবনিক উপন্যাস ‘অটাম লাইট’। বইটি ২০২০ সালের ২৪ মার্চ প্রকাশ করেছে ভিনটেজ পাবলিকেশন। শ্বশুর-শাশুড়ির আকস্মিক মৃত্যুর পর পিকো আইয়ার বাড়িতে ফিরে আসেন। তার দৈনন্দিন আচার-অনুষ্ঠানের চিত্রগুলো ফুটিয়ে তোলেন। উঠে আসে ডাকঘরে যাওয়া, প্রতি সন্ধ্যায় পিং-পংয়ের উগ্র খেলায় লিপ্ত হওয়া।
আইয়ার আমাদের এমন একটি জাপান দেখান, যা আমরা আগে কদাচিৎ দেখেছি। তিনি পরিবর্তনশীলতার প্রতিফলন ঘটান। সম্পর্ক স্থাপন, পিতা-মাতার সম্মান, শিশুর যত্নকে আইয়ার ও তার স্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন। সবকিছু টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করেছেন। যেমন ম্যাপল পাতা ঘুরতে শুরু করে, যেখানে শরৎ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কিছুই গ্রহণ করা উচিত নয়।
গুডবাই সামার, হ্যালো অটাম: কেনার্ড পাকের একটি শিশুতোষ বই ‘গুডবাই সামার, হ্যালো অটাম’। কিন্ডারগার্টেন বা প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত বইটি। এছাড়া অন্য পাঠকের জন্যও বইটি উপভোগ্য হতে পারে। ‘বিদায় গ্রীষ্ম, হ্যালো শরৎ’ ঋতু পরিবর্তন সম্পর্কে একটি চমৎকারভাবে চিত্রিত বই।
রেড লিফ, ইয়েলো লিফ: ‘লাল পাতা, হলুদ পাতা’ হচ্ছে লয়েস এহলার্টের একটি বই। বইটি তরুণ পাঠকদের জন্য খুবই আকর্ষণীয়। কারণ শরতে পাতা ঝরে কেন? গাছের জীবনচক্র কেমন? লাল পাতা, হলুদ পাতা তরুণ পাঠকদের তাদের চারপাশের প্রাকৃতিক জগৎ সম্পর্কে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে।
দ্য টিয়ার্স অব অটাম: আমেরিকান লেখক চার্লস ম্যাককারির দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য টিয়ার্স অব অটাম’ ১৯৭৪ সালে প্রকাশ হয়। বইটি যদিও প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির মৃত্যু ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে লেখা। উপন্যাসটি বিশ্বের বেস্টসেলার বইয়ের একটি। এটি ‘পল ক্রিস্টোফার সিরিজের’ দ্বিতীয় উপন্যাস। উপন্যাসের বিষয়টি জটিল হলেও নামকরণে রয়েছে শুভ্রতার প্রতীক শরৎকাল।
এসবের পাশাপাশি শরৎ নিয়ে কবিতার বইয়েরও সন্ধান পাওয়া যায়। চাইনিজ কবি দু ফু ‘অটাম মেডিটেশন’ নামে সিরিজ কবিতা লিখেছেন। তাতে পর্বত-অন্ধকার-আকাশ-অশ্রু-পাথর আর সন্ধ্যার মিশেলে গড়ে তুলেছেন ভাবনার এক বিরল আবহ।
অপরদিকে জাপানি কথাশিল্পী কাফু নাগাইয়ের ‘অটাম উইন্ড অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’ গল্প-সংকলনটি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে পৌঁছে গেছে। এতে বিভিন্ন লেখকের ১৪টি গল্প আছে। প্রবীণ-নবীন জাপানি কথাশিল্পীদের শরৎ-ভাবনার সংগ্রহ হিসেবে মন্দ নয় বইটি।
তথ্যসূত্র
১. গুডরিডস
২. অ্যামাজন
এসইউ/এমএস