মাহফুজা অনন্যার কবিতা
কঠিন কুয়াশার ভিতর
উভলিঙ্গ-রূপসী প্রেমিকদের ফিসফিসানি আর করতালির আওয়াজে এবার সত্যি সত্যি বয়স বাড়তে শুরু করেছে
বয়স লুকাতে চাইনি কখনো, বলি রেখাও নয়
পোশাক আর হাসির আড়ালে বুকভরা ব্যথা লুকাতে চেয়েছি
কাঁচা টাকার সোহাগ চাইনি, উড়ন্ত যশ-খ্যাতিও নয়
পৃথিবীর সমস্ত বধিরতা থেকে নিজেকে আড়াল করতে চেয়েছি
পৃথিবীর পথে যারা আমাকে বোঝেনি,
অথচ পান করিয়েছে আগ্নেয়-সুরা, বহুপদী বিষের মিশ্রণ
সেই আগ্নেয়-বিষ পরিবেশকেরা বেমালুম নেচে যাচ্ছে বেহায়া খদ্দেরের লেজ ধরে
এসব নাচ-কলা দেখতে দেখতে বিষে জর্জরিত আমার চোখে ধোঁয়াচ্ছন্নতা, বাষ্প আর কুয়াশা ভর করে,
বুঝতে পারি জীবন বায়ু ফুরিয়ে আসছে, তলিয়ে যাচ্ছি কঠিন কুয়াশার ভিতর
হৃদয়ের নৈশব্দে লেখা চিঠি বুকের গভীরে ভাঁজ করে নিয়ে ফিরে যাচ্ছি, ফিরে যাচ্ছি, ফিরে যাচ্ছি…
নবম শ্রেণি
সেট, ধারা, সূচক শেষ করে পীথাগোরাসের উপপাদ্য পড়াতে পড়াতে ঘেমে নেয়ে যেতেন প্রদীপ স্যার…
আমার মাথায় ঢুকে থাকতো কয়েকগজ দূরে থাকা এক রঞ্জনরশ্মি
উচ্চতর গণিতের চেয়ে সে আলো বেশি দুর্বোধ্য ছিল সেসময়
আলোঔজ্জ্বল্যে সত্যি সত্যি সেদিন উচ্চতর গণিতে মনোযোগ দিতে পারিনি, তবু ভালোভাবেই পাস করে গেছি
কিন্তু সেদিনের ছোট্ট হৃদয় স্বপ্ন দেখেছিল অসীমের, প্রতীক্ষা ছিল প্রক্ষিপ্ত রোদের
মহাকাশের চেয়েও জটিল সূর্যের হৃদয়, সে বিষয়ে সবচেয়ে দুর্বল স্টুডেন্ট আমি উত্তীর্ণের অপেক্ষায় প্রতি রাতে এখনো নবম শ্রেণিতে ফিরে যায়, আলো অন্বেষণে পাতা উল্টাই...
কিন্তু নবম শ্রেণির সিলেবাসে সবচেয়ে কঠিন হৃদয়পাঠ হয়ে আছো আজো তুমি আমার কাছে
মিডিলট্রাম, মান নির্ণয়, কিংবা সমাধানের মতো সহজ পাঠ কোনোদিন ছিলে কী তুমি…?
রক্তের কেলাসিত নুন
শুক্রশনি বোঝে না, রবিমঙ্গল বোঝে না
সৌরাজ্য শুধু ফ্লাইং কিস দিতে পারে
কেন চুমুর ধরন এভাবে পাল্টে গেল, ওর না বলা প্রশ্নের কাছে আমি অথর্ব,
কী এক নির্বিঘ্ন জ্বরে পুড়ে যাচ্ছি দিনের পর দিন
মুমূর্ষু হয়ে পড়ছি আমিও ওর চুমুর অভাবে
সৌরাজ্য পৃথিবীর একমাত্র মানুষ যে নিয়ম মেনে ভালোবাসতে জানে,
ঘুমানোর আগে তিনটি করে চুমু দিতে জানে
সৌরাজ্য সংক্রমণ শব্দের মানে বোঝে না
তবু অপেক্ষা বোঝে, প্রতীক্ষায় ঘুমিয়ে যায়।
সৌরাজ্য ঘুমিয়ে গেলে আমি মুমূর্ষু আত্নার বমি হজম করে তিক্ততার ঢেঁকুর গলাধঃকরণ করি আর ভাবি,
আমার পায়ের কাছের জানালাটি খোলা
অথচ কতদিন বের হতে পারি না!
যদি যেতে পারতাম জানালার ওপাশে অন্যপৃথিবীতে...
ওখানে ঘাস আছে, ফড়িং আছে
মরাপাতা আছে
খসেপড়া তারা আছে
সাপ আছে
টিকটিকি আছে
চামচিকে আছে
বাদুড় ঝুলছে কোনো ইলেকট্রিক তারে...
রাতের প্রহসন আছে ওখানে,
চুক্তিহীন মিলন আছে হয়তো...
রক্তের কেলাসিত নুন আছে
কিন্তু সে নুন পৃথিবীর কিছু মানুষের মুখের মতো এতো কুৎসিত ভয়ংকর তিতা নয়...
এইচআর/জেআইএম