আবু আফজাল সালেহের চারটি কবিতা
আমি কিছু কি হারিয়েছি
আমি কি কিছু হারিয়েছি?
মনে হয় পাঁজর খুলে গেছে
বাতব্যথার মতো কুন-কুন করে শুধু।
কী যে যন্ত্রণা—
শুধু মন্ত্রণা;
দৃষ্টিশক্তিও ক্ষয়ে গেছে—
স্বচ্ছ নীল আকাশটাও কালোমেঘে ঢাকা যেন
শুভ্রমেঘবালিকারাও ক্ষ্যাপাটে মনে হয়!
আমার ঘ্রাণশক্তিটিও মরে গেছে—
হাসনাহেনার সুবাসকে টক বলে মনে হয়।
আমি কিছু কি হারিয়েছি?
সমুদ্রের গর্জন, পাখির কলরব অথবা যৌবনের ডাক
শুনতেই পাচ্ছি না যে!
তাহলে আমি কি বধিরও হয়ে গেলাম!
****
সকরুণ বাংলাদেশ
ভাদরের তপ্ত দুপুর, চলনবিলের কাছাকাছি
রেললাইনের দুধারে পানি আর পানি
কাছেই একটা মহিষ শুধু মাথা উঁচু করে
সমস্ত দেহ পানিতে ডুবিয়ে
একটা গঙ্গাফড়িং মাথাটি
পরিষ্কার করছে সরু হুল দিয়ে—
তার চলন্ত আবছা পাখায় সোনালি রৌদ্রছায়া
সবুজ পানির টলমল;
কয়েকটি মাছরাঙার ওড়াউড়ি
স্বচ্ছ নীল আকাশ ভেদ করে কয়েকটি চিল, কিছু শকুন।
মহিষের মুখ যেন মখমলে কিন্তু
সকরুণ বাংলাদেশ।
****
বোধ জাগানোর এখনই সময়
বিষ নেই আমাদের কণ্ঠে
ঝাঁজ নেই আমাদের দেহে
স্বাদ নেই আমাদের জিভে।
বিবেক নেই আমাদের প্রাণে
ঐকতান নেই আমাদের গানে।
বিষ চাই
স্বাদ চাই
ঝাঁজ চাই
বোধ চাই— এক দেহে, এক প্রাণে।
যায় চলে যায়— সময়-অসময়
বোধ জাগানোর এখনই সময়।
****
জলকন্যার আঁকা-আঁকি
জলকন্যা জলরেখায় পথ আঁকে।
বৃষ্টির সুর বাজায়
বৃষ্টিঝড়ও আঁকে।
উতাল হাওয়ার স্রোত বাঁধে
শালিক-দোয়েলের স্নান আঁকে।
আঁকা মুছে ফেলে বারবার
জলকন্যা আঁকে আবার।
মোছামুছি আঁকা-আঁকিতে চলে বহুপথ।
এসইউ/এএ/পিআর