ইকবাল পারভেজের পাঁচটি কবিতা
আমার যতো উচ্চারণ
ব্যঞ্জনবর্ণ নিজে নিজে উচ্চারিত হতে পারে না
তুমি আমার স্বরবর্ণ
আমি ব্যঞ্জনবর্ণ
আমার যতো উচ্চারণ
তোমায় ঘিরে
তুমি অব্যয়
ও এবং
আমাদের বর্ণমালার জীবন।
****
অন্ধ
পাঠশালার জীবনে
মাস্টার সাব অক্ষর শেখাতেন বোর্ডে
এটা কী ওটা কী
হঠাৎ যদি কোন এক অক্ষরে লাঠি যেতো থেমে
তখন লাঠি চলতো আমাদের পিঠে।
এতোদিন পর অন্য এক মাস্টার
লাঠি দিয়ে বোর্ড দেখিয়ে বললেন
বাম চোখে বলুন, এটা কী?
ডান চোখে বলুন, এটা কী?
আমি অক্ষর চিনি না
তিনি আর লাঠিপেটা করলেন না
বরং লাঠিটিই ধরিয়ে দিলেন হাতে
আমি লাঠি দিয়ে মাটিতে অক্ষর খুঁজি
ডানে খুঁজি, বামে খুঁজি
অক্ষরবিহীন এক অন্ধ আমি।
****
কোলাহল
আমরা যে কয়জন ছুটির দিনে দূরে কোথাও যাই
নাগরিক কোলাহলের বাইরে।
গ্রামের মানুষ কোলাহল বড় ভালোবাসে
তারা কোলাহলের শহরে আসে।
আমরা খুঁজি আলপথে হেঁটে যাওয়া এক কৃষ্ণকলি
আর গ্রামের ছেলেটি খোঁজে শহরের এক রাজকুমারী
শীতের বিকেলে মাঠে খড়কুটা পোড়ায় কৃষক
ধোঁয়া ওড়ে আকাশে
নেমে আসে পাখি
আগুনে ঝলসে যাওয়া পোকামাকড় খোঁজে
আর আমি ঝলসে যাওয়া হৃদয় নিয়ে শহরে ফিরে আসি।
****
রেডিও
রেডিও অন সকাল ছ’টা
কালামে পাক থেকে পাঠ করছেন ক্বারী মোহাম্মদ হাবিবুল্লা
‘এই হারামজাদারা উঠোছ না...
তোগো পড়া নাই লেখা নাই’
আমাদের ঘরে যুগপৎ দুটি রেডিও বাজে দিন-রাত
কোনোটিই বন্ধ হয় না আর
খবর সাতটার
একটি করে রাষ্ট্র উদ্ধার
অন্যটি আমি বান্দার
আমার আছে জনম রেডিও
এর যান্ত্রিক ত্রুটি নাই
অনিবার্য কারণবশত প্রোগ্রাম চেঞ্জ হয় না কখনো
অবশ্য মাঝে মাঝে নিশীথে গান শোনায় অপার
সাহস করে রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন মার্কনি
আর আমরা জগদীশেরা ভয়ে ভয়ে
সেঁটিয়ে গেলাম
প্রকাশ করতে পারলাম না পর্যন্ত
আমাদের ঘরে দুটি রেডিও
বেজে চলেছে যুগ যুগ
আপনি শুনতে না চাইলে বেরিয়ে যান
তারপরও মাথায় বাজবে রেডিও ঝিমঝিম
মার্কনিরও আগে আমাদের ঘরে ঘরে রেডিও ছিল
রেডিও মানে স্ত্রী
অম্ল-মধুর।
****
সমুদ্রবিদ্যা
আমাকে একখণ্ড সমুদ্র এনে দিয়েছো তুমি
আর সমুদ্রের সমান একখণ্ড আকাশ
সমুদ্র সঙ্গমে সাঁতার জানি না
তাই মেঘ হয়ে ভেসে বেড়াই আকাশে
নিচে তাকিয়ে দেখি
কতো ডুবুরি মুক্তা খোঁজে
কতো জেলে ধরে মাছ
কতো জাহাজ করেছে নোঙর
এবার তুমি আমাকে সমুদ্রবিদ্যা শেখাও।
কবি পরিচিতি: জন্ম ১৫ মার্চ ১৯৬৫, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার হাঁসা গ্রামে। লেখালেখি করেন এক দশকের বেশি সময়। স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে লিখছেন নিয়মিত। প্রথম গ্রন্থ ‘নদী পাঠ’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালের অমর একুশে বইমেলায়। বইটি ‘জেলা প্রশাসক চাঁদপুর পাণ্ডুলিপি প্রতিযোগিতা ২০১৮’ পুরস্কারপ্রাপ্ত। ‘আমার যতো উচ্চারণ’ তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ।
এসইউ/এএ/এমএস