ভিডিও EN
  1. Home/
  2. সাহিত্য

টেম্পু পাশা : নাইট শিফট- পর্ব ১৫

ড. রাজুব ভৌমিক | প্রকাশিত: ০৫:১৫ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

পাশা মাংস ডেলিভারি শেষ করে দুপুরে বাড়িতে যায়। পাশা ঠিক করে আজ রাতে সে ক্যাব চালাবে না। আজ সে একটু বিশ্রাম নেবে। পরদিন সকালে পাশা তার স্ত্রী তিন্নীকে নিয়ে ডাক্তারের অফিসে যায়। তিন্নী এখন প্রায় পাঁচ মাসের গর্ভবতী। তাই নিয়মিত চেক-আপ করার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। পাশা সবসময় তিন্নীর সাথে ডাক্তারের অফিসে যায়। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। অনেকক্ষণ তারা ডাক্তারের অফিসে অপেক্ষা করার পর ডাক্তার তিন্নীকে তার পরীক্ষা রুমে যাওয়ার জন্য বলল। পাশা তিন্নীর সঙ্গে ডাক্তারের পরীক্ষা রুমে প্রবেশ করে। পাশা পরীক্ষা রুমের ভেতর একটি চেয়ার নিয়ে বসে। তিন্নী পরীক্ষা রুমের বেডের ওপর শুয়ে আছে। ডাক্তার তিন্নীকে তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন করে। এরপর ডাক্তার তিন্নীর আল্ট্রা সাউন্ড পরীক্ষা করার পর পাশাকে বলল, ‘কনগ্রাচুলেশন, ইউ আর গোয়িং টু বি এ ফাদার অব এ ডটার।’ পাশা মেয়ে সন্তানের পিতা হতে চলছে তা ডাক্তারের কাছে শুনে সে যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। পাশা তিন্নীকে বলে, ‘তিন্নী, আজ আমি অত্যন্ত খুশি। কত যে খুশি তা আমি তোমাকে বোঝাতে পারব না।’ তিন্নী পাশার কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসে। ডাক্তারের সব পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর পাশা তিন্নীকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

এদিকে পাশা নিয়মিত জন জে কলেজে অপরাধবিদ্য সম্পর্কে পড়াশোনা করছে। সেখানে সে অপরাধীদের আচার-আচরণ, ফরেনসিক বিদ্যা, ক্রাইম সিনের তদন্ত, পুলিশের নিয়ম-কানুন ইত্যাদি শিখছে। দিনে দিনে পাশা অপরাধ সম্পর্কে বিস্তারিত শিখছে এবং বুঝছে। ক্লাসে পাশার সবসময় গভীর মনোযোগ এবং শেখার আগ্রহ দেখে অধ্যাপকরা পাশাকে অনেক পছন্দ করে। সে সবসময় ক্লাসে সময়মতো ঢুকে অধ্যাপকের সব প্রশ্নের উত্তর দেয় এবং ক্লাসের সব প্রজেক্ট নিয়মিত ভালোভাবে শেষ করে। এখন পর্যন্ত পাশা সব ক্লাসে এ গ্রেড পেয়েছে। ক্লাসে পাশার অনেক পুলিশ অফিসার, এফবিআই এজেন্ট এবং সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টের সাথে পরিচয় হয়। তাদের কাছ থেকেও পাশা নিয়মিত শেখার চেষ্টা করে। সবাই পাশাকে অনেক পছন্দ করে। যেহেতু পাশা ক্লাসে অনেক ভালো করছে। তাই অনেক ছাত্র-ছাত্রী আবার পাশার কাছ থেকে পড়াশোনার ব্যাপারে পরামর্শ বা সাহায্য নিতে আসে।

এভাবে কয়েক দিন চলে যায়। আজ শনিবার। পাশা সাধারণত শনিবারে কোন কাজ করে না। সে শনিবারে বিশ্রাম করতে পছন্দ করে। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে সন্ধ্যায় পাশা তার সোফায় বসে টিভি দেখছে। টিভিতে ‘ক্রিমিনাল মাইন্ডস’ নামে একটি টিভি শো চলছে। টিভি শোতে দেখানো হচ্ছে, কিভাবে একজন সিরিয়াল কিলার তার শিকারকে একের পর এক হত্যা করে চলছে কিন্তু পুলিশ তাকে ধরতে পারছে না। এই দেখে পাশার হঠাৎ তার মগজের ক্ষুধা চলে আসে। পাশারও খুন করার ইচ্ছে জন্ম নেয়। কিন্তু সে কিভাবে হত্যা করবে তা বুঝতে পারছে না। পাশা তখন সোফায় বসে বসে ভাবছে। কিছুক্ষণ পর সে তিন্নীকে বলল, ‘তিন্নী আজ ট্যাক্সিটি নিয়ে একটু বের হব। গত কয়েকদিন তেমন ভাড়া পাইনি। দেখি আজ একটু ট্যাক্সি চালিয়ে কিছু ভাড়া আদায় করে নিতে পারি কি-না।’ পাশার কথা শুনে তিন্নীর মন খারাপ হয়ে যায়। ‘তুমি তো সারা সপ্তাহ ধরে কাজ কর। আজ একটু বিশ্রাম করলে কী এমন ক্ষতি হতো।’ তিন্নী বলল। পাশা তিন্নীকে বোঝানোর চেষ্টা করে। এরপর তিন্নী বলল, ‘ঠিক আছে। তোমাকে খাবার দিয়ে দিচ্ছি। রাতের খাবার শেষ করে যাও।’

পাশা রাতের খাবার শেষ করে প্রায় দশটা বাজে বাড়ি থেকে ট্যাক্সি নিয়ে বের হয়। এরপর সে সোজা ম্যানহাটনে চলে যায়। পাশার ট্যাক্সিটি একটি ইয়োলো ক্যাব। আর ইয়োলো ক্যাবের ভাড়া শুধু ম্যানহাটনে পাওয়া যায়। পাশার উদ্দেশ্য ক্যাব চালিয়ে আজ রাতে তার শিকারের সন্ধান করা। নাইট শিফটে সে জন্য পাশা ক্যাব চালাতে পছন্দ করে। পাশা ম্যানহাটনের চারিদিকে তার গাড়ি নিয়ে ঘুরছে। কিন্তু সুযোগমতো পাশা কোন শিকার খুঁজে পাচ্ছে না। রাত তখন প্রায় বারোটা বাজে। পাশা যাত্রীর আশায় তার ক্যাবটি গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল সাবওয়ে স্টেশনের সামনে পার্ক করে রাখে। কিছুক্ষণ পর পাশার ক্যাবে মাতাল অবস্থায় একটি মেয়ে উঠে বসে। ‘হাই, হোয়ার ক্যান আই টেক ইউ টু...’ পাশা মেয়েটিকে বলল। ‘রিচমন্ড ভ্যালি, স্টেটেন আইল্যান্ড।’ মেয়েটি বলল। পরে সে পাশাকে তার বাড়ির ঠিকানাটি দেয়। পাশা মেয়েটির ঠিকানা তার ফোনের গুগল জিপিএসে ঠুকে দেখে এটি একটি ‘ফিউনারেল হোম বা শ্মশান বাড়ি’র ঠিকানা। সাধারণত কেউ মারা গেলে তাকে প্রথমে ফিউনারেল হোমে নেওয়া হয়। সেখানে লাশের গোসলসহ শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এরপর লাশকে পুড়িয়ে লাশের ছাই আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া হয়। কেউ সেই ছাই নিজের ঘরে রাখে আবার কেউ সে ছাই সাগরে ভাসিয়ে দেয়। আবার যারা লাশ পোড়াতে চায় না, তারা সে লাশকে ফিউনারেল হোমের মাধ্যমে অন্যত্র এক নির্দিষ্ট জায়গায় মাটিতে দাফন করে। ‘ইউ সিওর ইউ গেইভ মি দ্য রাইট অ্যাড্রেস? বিকজ মাই ম্যাপ শোজ ইট ইজ এ ফিউনারেল হোম অ্যাড্রেস।’ পাশা মেয়েটিকে তার দেওয়া ঠিকানা সঠিক কি-না জিজ্ঞেস করে। কারণ মেয়েটি মাতালের মতো কথা বলছে। পাশা ভাবল, মেয়েটি মদ খেয়ে একটু মাতাল। তাই সে বোধ হয় অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাকে ভুল ঠিকানা দিয়েছে। ‘নো, আই গেইভ ইউ দ্য রাইট অ্যাড্রেস। অ্যান্ড ইয়েস, আই লিভ ইন দ্য বেজমেন্ট অব দ্যাট ফিউনারেল হোম।’ মেয়েটি পাশাকে বলল, সে ওই ফিউনারেল হোমের বা শ্মশান বাড়ির নিচের তলায় বাস করে।

গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল সাবওয়ে স্টেশন থেকে স্টেটেন আইল্যান্ডের রিচমন্ড ভ্যালিতে যেতে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। পাশা মেয়েটির সাথে কথা বলে জানতে পারে, তার নাম হচ্ছে হেইলি। হেইলি দেখতে সাদা বর্ণের, উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চি, সোনালি রঙের চুল এবং বয়স ২০-২৪ এর মতো। বাঙালি মেয়ে মুন্নিকে খুন করার স্বাদ পেয়ে পাশা শিকারের জন্য এখন তেমন যাচাই-বাছাই করে না। শুধু ২০-৩০ বছরের মেয়ে হলেই পাশার জন্য এখন চলে। পাশা মনে মনে ঠিক করে, সে হেইলিকে আজ রাতে হত্যা করবে। তার আগে পাশা হেইলিকে কিছু প্রশ্ন করবে ঠিক করল। যেহেতু হেইলি মদ খেয়ে মাতাল। তাই পাশা সহজেই তাকে নানা প্রশ্ন করতে পারছে আর হেইলিও পাশার সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে। হেইলির কাছ থেকে পাশা জানতে পারে, সে তার বান্ধবীদের নিয়ে আটটা বাজে ম্যানহাটনে এসেছে তার আরেক বান্ধবী অ্যাশলির ‘ব্যাচেলরেট পার্টি’তে যোগদান করার জন্য। তার বান্ধবী অ্যাশলির বিবাহের দিন পরের মাসে নির্ধারিত হয়েছে। তাই বিয়ের প্রথা অনুযায়ী তারা আজ তার ‘ব্যাচেলরেট পার্টি’ উদযাপন করছে। মেয়েদের ব্যাচেলরেট পার্টি হচ্ছে কনে এবং তার মেয়ে সঙ্গীদের নিয়ে পার্টি করা। মেয়েদের ব্যাচেলরেট পার্টিতে সাধারণত পুরুষরা অংশগ্রহণ করে না।

কথা ছিল আজ রাতে ম্যানহাটনে পার্টি করার পর হেহলির বাড়িতে সারারাত ধরে পার্টি হবে। কিন্তু তার বান্ধবীরা তাকে ছেড়ে অনেক আগেই স্টেটেন আইল্যান্ডে না বলে চলে যায়। অগত্যা হেইলি আরও কিছুক্ষণ ম্যানহাটনে থেকে যায় এবং অনেক মদ্যপান করে। রাত যখন প্রায় বারোটা বাজে, তখন সে ভাবল এবার তাকে তার বাড়িতে যেতে হবে। কারণ সকালে তাদের ফিউনারেল হোমটি তাকে খুলতে হবে। ফিউনারেল হোমের ব্যবসা তার দাদা প্রথম সেখানে শুরু করে। এরপর এটি তাদের পারিবারিক ব্যবসাতে পরিণত হয়। হেইলির বাবা ডেন সাধারণত তাদের ব্যবসা দেখাশোনা করে। ডেন না থাকলে হেইলি মাঝেমধ্যে ফিউনারেল হোমটির দেখাশোনা করে। হেইলির বাবা ও দাদার জন্ম পোল্যান্ডে। গত সপ্তাহে হেইলির বাবা ডেন তার পিতার অসুস্থতার কথা শুনে পোল্যান্ডে দেখতে যায়। আর পুরো ফিউনারেল হোমের দায়িত্ব হেইলির ওপর দিয়ে যায়। ‘হোয়াট অ্যাবাউট ইওর মম?’ পাশা হেইলিকে তার মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। উত্তরে হেইলি বলে, ‘মাই মম ডাইড লং টাইম অ্যাগো। ইটস জাস্ট মি অ্যান্ড মাই ড্যাড।’ হেইলির মা অনেক আগে মারা যায়। তাদের পরিবারে শুধু হেইলি এবং তার বাবা আছে। এটা শুনে পাশা মনে মনে খুশি হয়। কারণ হেইলির বাবা এখন পোল্যান্ডে আছে। তার মানে পুরো বাড়িতে সে একা।

পাশা তার ক্যাব চালিয়ে স্টেটেন আইল্যান্ডে পৌঁছে। হেইলির বাড়িতে যেতে আর বেশিক্ষণ লাগবে না। পাশা হেইলিকে আজ খুন করবে ঠিক করেছে। কিন্তু পাশা চিন্তা করছে যে, এখানে সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকে। তাহলে হেইলিদের ফিউনারেল হোমে সিসিটিভি থাকলে তাকে তো খুন করা যাবে না। পাশা ধরা পড়ে যাবে। পাশা ভাবল, সে হেইলিকে জিজ্ঞেস করবে তাদের ফিউনারেল হোমের সিসিটিভির কথা। কিন্তু কিভাবে পাশা জিজ্ঞেস করবে তা ভেবে পাচ্ছে না। হেইলি একটু মাতাল হলেও সে পাশার সব প্রশ্নের ঠিক ঠিক উত্তর দিচ্ছে। পাশা তখন বুদ্ধি করে হেইলিকে বলল, ‘মাই নেইবার হাউস ওয়াজ ব্রোকেন ইনটু, লাকিলি দ্য হেড সিসিটিভি ক্যামেরা অ্যান্ড পুলিশ কট দ্য কালপ্রিট। ইউ গট টু বি ভেরি কেয়ারফুল নাউ ডেজ।’

হেইলি বলল, ‘ইউ আর রাইট পাশা। আওয়ার সিসিটিভি হ্যাজ নট বিন ওয়ার্কিং ফর মান্থস। মাই ড্যাড কিপ ফরগেটিং টু ফিক্স আওয়ার সিসিটিভি ক্যামেরাস। দে আর দেয়ার জাস্ট ফর সোজ।’ গত কয়েক মাস ধরে হেইলিদের সিসিটিভি কাজ করছে না সে পাশাকে বলল। তার বাবা ঠিক করবে করবে ভেবে এখনো তাদের সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোকে ঠিক করেনি। তাদের সিসিটিভি ক্যামেরা শুধু এখন লোক দেখানোর জন্য আছে। হেইলির কাছ থেকে কথাগুলো শুনে পাশা মোটামুটি ঠিক করে ফেলল যে, সে হেইলিকে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত স্ট্রবেরি খাইয়ে অজ্ঞান করে হত্যা করবে। সব ক্যাবের লোকেশন চেক করা যায়। তাই পাশাকে হেইলির বাড়ির সামনে থামাতে হবে। কেননা গ্র্যান্ড সেন্টাল স্টেশনের সামনে ক্যামেরা ছিল। যদি পুলিশ কখনো পাশাকে সন্দেহ করে যে, পাশা হেইলিকে ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে তার ক্যাবে নিয়েছে। তাহলে সে তখন বলতে পারবে যে, সে হেইলিকে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়েছে এবং ট্যাক্সির জিপিএসে তা উল্লেখ থাকবে। যেহেতু হেইলির বাড়ির সামনের সিসিটিভি কাজ করছে না, সেহেতু পুলিশ জানবে না প্রকৃতপক্ষে আদৌ পাশা হেইলিকে তার ক্যাব থেকে বাড়ির সামনে নামিয়েছে কি-না। তাই পাশাকে হেইলির বাড়ির সামনে থামাতে হবে।

হেইলিদের বাড়ির সামনে পৌঁছতে আর বড়জোর পাঁচ মিনিট লাগবে। পাশা তার গাড়ির ভেতরে রাখা স্ট্রবেরির প্যাকেটটি খুলে নেয় এবং খেতে শুরু করে। পাশার গাড়িতে সবসময় দুটি স্ট্রবেরির প্যাকেট থাকে। একটি প্যাকেটের সব স্ট্রবেরি ঘুমের ওষুধে মিশ্রিত এবং আরেকটি প্যাকেটের স্ট্রবেরি ঘুমের ওষুধ ছাড়া। পাশা তখন হেইলিকে একটি স্ট্রবেরি খাবার জন্য বলল, ‘দিজ স্ট্রবেরিজ আর গুড। ডু ইউ ওয়ান্ট টু ট্রাই ওয়ান?’ স্ট্রবেরির কথা শুনে হেইলি রাজী হয়ে যায়, ‘শিওর, আই উইল ট্রাই ওয়ান।’ বলে হেইলি পাশার হাত থেকে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত স্ট্রবেরিটি নেয়। যেহেতু হেইলি একটু মাতাল। তাই সে মুহূর্তের মধ্যে স্ট্রবেরিটি খেতে ভুলে যায় এবং কিছুক্ষণ পর স্ট্রবেরিটি তার হাত থেকে ফসকে গাড়ির মধ্যে পড়ে যায়। পাশা তা দেখেনি। পাশা বারবার পেছনে তাকাচ্ছে কিন্তু হেইলিকে অজ্ঞান মনে হচ্ছে না। হেইলিদের বাড়িটি দূর থেকে দেখা যাচ্ছে। পাশা চিন্তিত হয়ে যায়। পাশা ঠিক করে, সে হেইলিকে তার বাড়ির সামনে একটু থামিয়ে এরপর তাকে নিয়ে চলে যাবে। হেইলি বুঝতে পারবে না যে, পাশা তার বাড়ির সামনে চলে এসেছে। কারণ হেইলি মাতাল হয়ে গাড়িতে বসে আছে।

রাত প্রায় একটা বাজে। পাশা হেইলিদের বাড়ির সামনে তার ক্যাবটি থামায়। পাশা চলে যাবে এমন সময় কেউ একজন রাস্তা থেকে ডাকে, ‘হেই হেইলি! ইউ ফাইনালি হিয়ার।’ ‘হেই অ্যাশলি, হোয়াট ইউ ডুয়িং আউটসাইড সো লেইট।’ হেইলি প্রত্তুত্তরে বলল। হেইলিকে পাশার ক্যাবের জানালা দিয়ে তার এক বান্ধবী দেখে ফেলে। ক্যাবের পেছনের জানালা নিচে নামানো ছিল পাশা সেটা খেয়াল করেনি। পাশা মনে করছে, হেইলি তো মাতাল। তাই পাশা অন্য কোন কিছুর তেমন গুরুত্ব দেয়নি। এখন সে বুঝতে পারছে, সে কী ভুল করেছে এবং মনে মনে পাশা নিজেকে বকছে। পাশাকে বাধ্য হয়ে তার ক্যাব থামিয়ে রাখতে হয়। তার বান্ধবী অ্যাশলি ক্যাবের কাছে আসে আর হেইলির সাথে কথা বলতে থাকে। এদিকে পাশার মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। কারণ হেইলিকে নিয়ে তার সব প্ল্যান ধ্বংস হয়ে যায়। এতক্ষণ ধরে পাশা হেইলিকে নিয়ে যে প্ল্যান করেছে, সেটা পাশার কিছু ভুলের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। পাশা তার মুখ গোমড়া করে ক্যাবে বসে থাকে। হেইলি পাশাকে তার ট্যাক্সি ভাড়া দেয়। এরপর সে ট্যাক্সি থেকে নামে। ‘পাশা, ডু ইউ ওয়ান্ট টু হ্যাঙ আউট উইথ আচ টুনাইট?’ হেইলি ট্যাক্সি থেকে বেরিয়ে পাশাকে তার বাড়িতে তাদের সাথে আড্ডার দেওয়ার জন্য মাতাল স্বরে বলল। ‘অ্যাশলি, দিজ ইজ পাশা। হি ইজ রিয়েলি নাইচ ম্যান। হি ইজ ভেরি কেয়ারিং।’ হেইলি তার বান্ধবী অ্যাশলিকে পাশার সম্পর্কে গুণগান করে। ‘ইয়া, টেল হিম টু পার্টি উইথ আচ দেন।’ অ্যাশলিও হেইলিকে বলে পাশাকে ভেতরে আসার জন্য।

বারবার হেইলি পাশাকে তার বাড়িতে আড্ডার দেওয়ার জন্য বলে। পাশার যাবার ইচ্ছে ছিল না কিন্তু হেইলি অনেক করে বলছে তাই সে বলে, ‘ওকে, লেটস গো ফর লিটল বিট। আই হ্যাভ টু ওয়ার্ক টুনাইট। সো আই উইল নট বি অ্যাবল টু স্টে লংগার।’ পাশা হেইলিকে বলে সে বেশিক্ষণ তাদের সাথে আড্ডা দিতে পারবে না। কারণ তাকে সারারাত কাজ করতে হবে। পাশা হেইলিদের বাড়িতে প্রবেশ করে। হেইলিদের বিশাল একটি বাড়ি। বাড়ির নিচ তলায় বা বেজমেন্টে হেইলিরা থাকে। উপরের দুইতলায় তাদের ফিউনারেল হোমের ব্যবসা চালায়। মানুষের মরদেহের সব শেষকৃত্যের ব্যবস্থা তারা করে। ‘আই হ্যাভ নেভার বিন টু এ ফিউনারেল হোম।’ পাশা হেইলিকে বলে সে কোনদিন ফিউনারেল হোমে প্রবেশ করেনি। হেইলি বলল, ‘ও রিয়েলি, ডু ইউ ওয়ান্ট টু সি? আই উইল গিভ ইউ এ ট্যুর অব মাই হাউস।’ হেইলি পাশাকে বলে, সে দেখতে চাইলে হেইলি তাকে দেখাতে পারে। পাশা বলল, ‘শিওর।’ মাতাল হেইলি পাশাকে তাদের বাড়ির উপরের তলায় নিয়ে যায়। পাশাকে ফিউনারেল হোমের কোথায় কিভাবে মরদেহ গোসল করা হয়, সাজানো হয় এবং কোথায় কিভাবে মরদেহ পোড়ানো হয়, তার বিস্তারিত হেইলি দেখায়। মধ্যম তলাতে মরদেহের জন্য হিমায়িত কক্ষগুলো এবং লাশ নেওয়ার বাক্সগুলো দেখায়। এরপর পাশাকে হেইলি নিচের তলায় নিয়ে যায়। পাশাকে হেইলি মদপানের জন্য অনুরোধ করে কিন্তু পাশার ‘গাড়ি চালাতে হবে’ অজুহাত দেখিয়ে মদপান করে না। হেইলি পাশাকে একটি কোমলপানীয় ভর্তি গ্লাস এনে দেয়। পাশা বসে বসে সেটি পান করতে থাকে।

পাশা হেইলিদের সোফায় গ্লাসটি হাতে নিয়ে বসে আছে। আর বাড়ির ভেতরে এদিক ওদিক সব লক্ষ্য করছে। পাশা দেখে পুরো বাড়িতে কোন পুরুষ নেই। কনের ব্যাচেলরেট পার্টি বলে কথা। কনের ব্যাচেলরেট পার্টিতে পুরুষ থাকে না। আবার পুরুষদের ব্যাচেলরেট পার্টিতে মহিলা থাকে না। তাছাড়া হেইলির বাবা দেশে নেই। বাড়িতে কনে অ্যাশলি এবং হেইলিসহ মোট নয়জন মহিলা আছে। সবার বয়স বিশ থেকে ত্রিশের মধ্যে হবে। যেহেতু সবাই সন্ধ্যা থেকে মদপান করে যাচ্ছে। তাই মোটামুটি সবাই এখন একটু মাতাল হয়ে আছে। পাশা চলে যাবে ঠিক করে, এমন সময় পাশার মাথায় একটি বুদ্ধি আসে। সে ভাবল যদি সবাইকে স্ট্রবেরি খাওয়ানো যায়। তাহলে আজ রাতটি তার জীবনের স্মরণীয় একটি রাত হবে। পাশা তাই আর কোন কিছু চিন্তা না করে বলল, ‘লেডিস, আই হ্যাভ সাম স্ট্রবেরিজ ইন মাই কার। ডু ইউ ওয়ান্ট টু ইট সাম?’ পাশা মহিলাদের উদ্দেশে বলল যে, তারা যদি স্ট্রবেরি খেতে চায় তাহলে পাশার গাড়িতে স্ট্রবেরি আছে। সে নিয়ে আসতে পারবে। সঙ্গে সঙ্গে সবাই একসাথে বলল, ‘ইয়েস প্লিজ, ব্রিং সাম ফর আচ।’ পাশাকে ওরা সবাই স্ট্রবেরি আনতে বলল।

রাত প্রায় দুইটা বাজে। পাশা আর দেরী না করে তার গাড়িতে ফিরে যায়। পাশার গাড়িটি হেইলিদের বাড়ির সামনে পার্ক করা আছে। পাশা গাড়িতে ঢুকে সব স্ট্রবেরিতে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। এরপর সে স্ট্রবেরিগুলো বাড়ির ভেতরে নিয়ে যায়। পাশা একে একে সবাইকে খাবারের জন্য একটি-দুটি করে স্ট্রবেরি দেয়। সবাই একে একে পাশার দেওয়া স্ট্রবেরি খেতে শুরু করে।

চলবে...

এসইউ/জেআইএম

আরও পড়ুন