টেম্পু পাশা : নাইট শিফট- পর্ব ০৬
ডাক্টটেপ দিয়ে শক্ত করে এরিকার মুখ বন্ধ করে দেওয়ার পর পাশা পুনরায় তার ট্রাক চালানো শুরু করে। বাঙালি হালাল মিটসে পৌঁছতে আর বেশি দেরি নয়। পাশা মনে মনে এরিকাকে নিয়ে দিনের বেলায় জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে আর ট্রাক চালিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ পেছন থেকে একটি গাড়ি তার ট্রাককে ধাক্কা দেয়। পাশার মেজাজ গরম হয়ে যায়। পাশা তার ট্রাকটিকে রাস্তার এক পাশে পার্ক করে ট্রাক থেকে বেরিয়ে আসে। পাশা দেখতে পায় একজন বয়স্ক ভদ্রলোকের গাড়ির সামনের অংশে বেশ ক্ষতি হয়েছে। পাশা তার ট্রাকের পেছনে তাকায়। বড় ট্রাক বলে পাশার ট্রাকের পেছনে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। বয়স্ক ভদ্রলোকটিও তার গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। ‘আই অ্যাম সো সরি ইয়াং ম্যান। ইট ওয়াজ মাই ফল্ট। আই ডিড নট সি ইউর ট্রাক।’ ভদ্রলোকটি শান্ত গলায় বলল। পাশার রাগ কিন্তু কমেনি। কারণ এখন পুলিশকে ফোন দিতে হবে। পুলিশ এসে এই দুর্ঘটনার তদন্ত করে রিপোর্ট নেবে। এদিকে পাশার ট্রাকের ভেতরে এরিকা আছে। পুলিশ তদন্ত করতে এলে বিরাট সমস্যায় পড়ে যাবে সে। অন্যদিকে পাশার ডেলিভারি দিতে দেরি হয়ে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে পাশা বেশ বিরক্ত বোধ করছে।
‘ইউ নিড টু ওয়াচ কেয়ারফুলি হোয়েন ড্রাইভিং।’ পাশা রাগান্বিত হয়ে ভদ্রলোককে বলল। ‘বিকজ অব ইউ নাউ আই অ্যাম লেইট টু ডু মাই ডেলিভারি।’ পাশা বলল। ‘ও মাই ব্যাড মিস্টার। বাট লুক দেয়ার ইজ নো ডেমেজ টু ইউর ট্রাক বাট মাই কার ইজ ডেমেজড অ্যান্ড ইটস মাই ফল্ট। সো আই অ্যাম উইলিং টু মেক এ ডিল উইথ ইউ।’ ভদ্রলোকটি পাশাকে বুঝিয়ে বলল। ‘আই অ্যাম লিসেনিং।’ পাশা বলল। ‘আই উইল গিভ ইউ ফাইভ হান্ড্রেড ডলার ফর ইউর ট্রাবল অ্যান্ড উই ক্যান অ্যাভোয়েড কলিং পুলিশ।’ শান্তভাবে ভদ্রলোকটি পাশাকে বলল। পাশা ভদ্রলোকটির কথা শুনে খুশি হয়। ভদ্রলোকটি পাশার সমস্যার জন্য পাঁচশ’ ডলার দেবে বলছে। উপরন্তু সে পুলিশকে ফোন দেবে না। পাশা সাথে সাথে ভদ্রোলোকের কথায় রাজী হয়ে যায়। ‘ওকে, আই অ্যাগ্রি উইথ ইউ, ডিল।’ পাশা বলল। ভদ্রলোকটি পাশাকে পাঁচশ’ ডলার দেয়। অনেক বার তার সমস্যার জন্য দুঃখিত বলে পাশার কাছ থেকে বিদায় নেয়।
পাশা সেখান থেকে চলে যায়। এরপর একে একে চারটি দোকানে মাংসের ডেলিভারি দেওয়া শেষ করে। তখন প্রায় বেলা বারোটা বাজে। সকাল থেকে আজ প্রচুর রৌদ্র ছিল কিন্তু এখন আকাশ মেঘে ঢাকা। যে কোন মুহূর্তে বৃষ্টি আসতে পারে। ডেলিভারি দেওয়া শেষ করে পাশা তার ক্যাব যেখানে পার্ক করেছে সে স্থানের উদ্দেশে রওনা দেয়। সকালের ওই অনাবাসিক এলাকায় পাশা আবার পৌঁছে যায়। বৃষ্টি পড়া শুরু হয়ে যায়। কোনমতে ট্রাকটি পার্ক করে পাশা ট্রাকের পেছনের দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকে। বৃষ্টির পানিতে পাশা কিছুটা ভিজে যায়। চারটি দোকানে ডেলিভারি দেওয়ার কারণে এখন ট্রাকের ভেতর অনেক খালি জায়গা। পাশা ট্রাকের ভেতর মাংসের টেবিলটি খালি করে। এরপর একটি কাপড়ের টুকরা দিয়ে ভালোভাবে টেবিলটি মুছে নেয়। টেবিলটি মুছে নেওয়ার পর এরিকাকে ট্রাকের মেঝে থেকে তুলে এনে টেবিলের উপর রাখে। পাশা এরিকার শরীর থেকে কিছু রশি খুলে টেবিলের সাথে পুনরায় বেঁধে রাখে, যাতে এরিকা কোনভাবে টেবিলের উপর থেকে মেঝেতে না পড়ে যায়।
পাশা কয়েকটি খালি বাক্স এক সাথে করে তার উপর বসে। আর বারবার এরিকার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকায়। পাশার সেলিনার কথা মনে পড়ে যায়। মাঝে মাঝে পাশা এরিকার মুখে হাত দিয়ে যেন কি দেখে। অন্যদিকে, এরিকার চোখের জল নিয়মিত পড়তে থাকে। পাশা কিছুক্ষণ পর একটি ধারালো ছুরি হাতে নেয়। ধারালো ছুরিটি হাতে নিয়ে পাশা এরিকার পুরো শরীরের উপরে একবার বুলিয়ে নেয়।
পানিবিহীন একটি মাছ যেমন মাটির উপরে লাফায়; তেমনি এরিকা টেবিলের উপরে অনেক ছোটাছুটি করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার হাত, পা ও মুখ বাঁধা থাকায় কিছু করতে পারছে না। পাশা ধারালো ছুরিটি দিয়ে জোরে এরিকার বুকের মধ্যখানে আঘাত করে। এরপর ক্ষতস্থানটি ধারালো ছুরি দিয়ে বড় করার চেষ্টা করে। যাতে কলিজা, ফুসফুস এবং লিভার নিতে সুবিধা হয়।
পাশা এবার তার দুই হাত এরিকার বুকের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে কলিজা, ফুসফুস এবং লিভার বের করে আনে। এরপর সেগুলোকে সযত্নে টেবিলের উপর রাখে। ধীরে ধীরে এরিকা মারা যায়। এরিকার মৃত্যু স্বচক্ষে দেখে পাশা নিজেকে অনেক শক্তিশালী ঈশ্বর ভাবে। সে বড় তৃপ্তি পায়। পাশা এরিকার কলিজা, ফুসফুস এবং লিভারকে ছোট ছোট করে কেটে নেয়। যাতে তার স্ত্রী তিন্নী বুঝতে না পারে যে, এগুলো মানুষের মাংস। এরপর পুরোনো কাপড়ের টুকরা দিয়ে পাশা এরিকার সব রক্ত মুছে নেয়। এরিকার গলার চেইন এবং কানের দুল স্মৃতি হিসেবে রাখার জন্য খুলে তার পকেটে সযত্নে ভরে।
তখন দুপুর দুইটা বাজে। পাশাকে বাড়ি যেতে হবে।
বাড়িতে গিয়ে পাশা মাংসের থলেটি তিন্নীর হাতে তুলে দেয়।
তিন্নী কিন্তু একেবারে মাংস খেতে পছন্দ করে না। ছোটবেলা থেকেই তিন্নী প্রাণিদের ভীষণ ভালোবাসে। তাই তিন্নী তার সারা জীবনে মাংস বা ডিমও খায়নি। কিন্তু সে ইচ্ছার বিরুদ্ধে পাশার জন্য প্রতিদিনই মাংস রান্না করে। সে অনেক সুস্বাদু করে মাংস রান্না করতে পারে। তিন্নী মাংস রান্না শেষ করার পর পাশা খাবার টেবিলে খেতে বসে। পাশা মনে মনে ভাবে, আসলেই আমি এমন মাংস জীবনে খাইনি। তখন তার জীবনে প্রথমবার সেলিনার মাংস দুর্ঘটনাক্রমে মরুভূমিতে খাওয়ার কথা মনে পড়ে। সে খাওয়া কিভাবে পাশাকে আজ মানুষখেকো বানালো, সে কথা তখন তার মনে পড়ে যায়।
পাশা তিন্নীর দিকে বারবার তাকায় আর মুচকি হাসি দেয়। এতদিন পাশা কেমন নির্জীব ছিল কিন্তু আজ পাশাকে প্রাণবন্ত লাগছে। তিন্নী সেটা খেয়াল করে। ‘আজ তোমার কী হলো? তোমাকে আজ অনেক প্রাণবন্ত লাগছে। কোন সুখবর আছে?’ তিন্নী বলল। ‘না, তোমার জন্য গলার চেইন আর কানের দুল পন শপ থেকে কিনে নিয়েছি কিন্তু কিভাবে তোমাকে দেব সেটা ভাবছি।’ পাশা ইতঃস্তত হয়ে বলল। ‘কই দেখি, আমার জন্য কেমন গলার চেইন আর কানের দুল কিনলে।’ তিন্নী বলল। এরপর পাশা তার পকেট থেকে এরিকার গলা ও কানের থেকে নেওয়া চেইন ও দুলগুলো তিন্নীকে দেয়। তিন্নী চেইন ও দুলগুলো দেখে একটা হাসি দেয়। ‘কি, তোমার পচ্ছন্দ হয়েছে?’ পাশা বলল। ‘হুম।’ হাসিতে তিন্নী বলল। ‘আমাকে এগুলো পরিয়ে দেবে না।’ তিন্নী লজ্জার সুরে পাশাকে জিজ্ঞেস করে। এরপর পাশা তিন্নীকে এরিকার গলার চেইন এবং কানের দুলগুলো পরিয়ে দেয়। ‘বাহ, তোমাকে চেইন ও দুলগুলোয় বড্ড মানাচ্ছে।’ পাশা বলল। ‘সত্যিই?’ তিন্নী বলল। ‘মাঝে মাঝে এরকম দুই একটা উপহার যদি আনতে তাহলে তো আমার খুশির সীমা থাকতো না।’ তিন্নী মজা করে বলল। ‘ঠিক আছে। এখন থেকে আনার চেষ্টা করব।’ পাশা তিন্নীর দিকে তাকিয়ে বলল।
‘আমার ঘুম পাচ্ছে। একটু ঘুমাতে হবে।’ বলে পাশা ঘুমাতে চলে গেল। বিকেলে একটু না ঘুমিয়ে পাশা থাকতে পারে না। তাছাড়া পাশাকে সারারাত ক্যাব চালাতে হয়। তাই বেশি ঘুমানোর সময় পায় না। ঘণ্টা দুয়েক ঘুমিয়ে পাশা তার ক্যাব নিয়ে বেরিয়ে গেল। ম্যানহাটনে পাশা প্রায় সারারাত মনের সুখে ক্যাব চালায়। ক্যাব চালিয়ে আজ রাতের আয়ও খুব ভালো হয়েছে। এখন ভোর চারটা বাজে। পাশা ভাবল সকাল ছয়টা পর্যন্ত ক্যাব না চালিয়ে এখনই কাজ সমাপ্ত করে কুইন্সে চলে যাবে। কারণ তার ট্রাকে এখনো এরিকার শরীরের বাকি অংশ আছে। কিন্তু এরিকার শরীরের বাকি অংশকে কোথায় ফেলবে বা কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। কোন উপায় ঠিক না করেই পাশা আজ অনেক আগেই ম্যানহাটন ছেড়ে কুইন্সে চলে যায়। তারপর পাশা তার ক্যাবটি তার ট্রাকের পেছনে পার্ক করে রাখে।
ট্রাকের ভেতরে বসে পাশা ভাবতে শুরু করে। কিভাবে এরিকার এত বড় শরীরকে সে ফেলে দেবে। নিউইয়র্ক শহরে লক্ষ লক্ষ মানুষের বাস। এদের সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে এত বড় লাশ ফেলে দেওয়া অসম্ভবই। নিউইয়র্কে অব্যবহৃত এমন কোন জায়গাও নেই, যেখানে গিয়ে এরিকার লাশটি ফেলে দেবে। আবার লাশ কোথাও ফেলে দিলে পরে পুলিশের নজরে এলে লাশের তদন্ত হবে। নিউইয়র্কের পুলিশ পৃথিবীর সেরা। তাদের হাত থেকে কোন অপরাধীর পরিত্রাণ নেই, সেটা পাশা ভালোভাবে জানে। লাশটা ফেলে দেওয়া যাবে না। এতে ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে পাশা একদিন পুলিশের হাতে ধরা পড়তে পারে। তাই ভাবল, ‘নিউইয়র্কের আশেপাশে অনেক নদী। নদীতে ফেলে দিলে কেমন হয়?’ প্রথমত, নদীতে দিনের বেলা লাশ ফেলে দেওয়া যাবে না। মানুষ দেখে ফেলবে। দ্বিতীয়ত, রাতের বেলায় নিউইয়র্ক পুলিশের অনেক ছোট জাহাজ নদীতে টহল দেয়। তৃতীয়ত, রাতের বেলা যদি লাশটি নদীতে ফেলে দেয়, এমন কোন গ্যারান্টি নেই যে লাশটি একদিন নদীর কিনারে আসবে না।
পাশা আবার ভাবে, ‘যদি এরিকার লাশটি খণ্ড খণ্ড করে নদীতে পাথর দিয়ে ফেলে দেই।’ কিন্তু কোন কারণে যদি মাংসের টুকরা থলেগুলো নদীর কিনারায় আসে? তখন কি হবে? নিউইয়র্কের নদীতে ডুবুরিদের মাঝে মাঝে ট্রেইনিং হয়ে থাকে। তারা যদি লাশের সন্ধান পায়। অথবা জোয়ারে ভেসে বা মাছের মাধ্যমে যদি লাশের থলে নদীর কিনারায় আসে। তাহলে তো সর্বনাশ হয়ে যাবে। পুলিশ তদন্ত করলে পাশা ধরা পড়ে যাবে। তাই পাশা ভাবল, ‘লাশ যেন কোনভাবে পুলিশের হাতে না পৌঁছে তার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু কি করা যায়।’ পাশার মাথায় যেন আর কোন বুদ্ধি আসছে না। ‘আচ্ছা লাশকে মাটিতে গর্ত করে পুতে রাখলে কেমন হয়?’ পাশা ভাবল। প্রথমত, নিউইয়র্ক শহরে অব্যবহৃত জায়গা খুব কম। যদিও ভাগ্যের জোরে দু’একটা জায়গা পাওয়া যায়। গর্ত করার সময় কেউ দেখে ফেলবে না এমন কোন গ্যারান্টি নেই। তাছাড়া নিউইয়র্ক শহর সিসিটিভি ক্যামেরায় ভরপুর। দ্বিতীয়ত, এরিকার লাশটিই শেষ লাশ নয়। ভবিষ্যতে আরও এরিকার লাশ নিয়ে সে কি করবে। একদিন দুইদিন হয়তো পাশা পার পেয়ে যাবে কিন্তু নিউইয়র্কে লাশ মাটিতে পুতে রাখা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
তার মানে হচ্ছে, পাশাকে নিউইয়র্কের বাইরে গিয়ে লাশের একটি ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু এত দূর ড্রাইভিং করে লাশ ফেলে দেওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ। যদি পুলিশ তাকে রাস্তায় কোন কারণে থামায়, তাহলে পাশা তাৎক্ষণিকভাবে ধরা পড়ে যাবে। তাছাড়া পাশা তো নিউইয়র্কের বাইরে তোমন কোন জায়গা চেনে না। কথায় আছে না, অচেনা জায়গা আর জঙ্গল সমান। অচেনা জায়গায় লাশ ফেলতে গেলে অনেক সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে।
পাশার হঠাৎ একটি বুদ্ধি মাথায় আসে। ‘আচ্ছা, এরিকার শরীর কেটে কেটে টুকরো করে অন্য মাংসের সাথে মিশিয়ে দিলে কেমন হয়।’ পাশা বড় মাংসের টুকরার সাথে ছোট ছোট প্যাকেটে মাংসের ডেলিভারিও দেয়। এই ভেবে পাশা এরিকার পায়ের পেশির একটা বড় অংশ কেটে ছোট টুকরা করে। এরপর তার কাছে থাকা ছোট মাংসের টুকরার প্যাকেট খুলে এরিকার পায়ের মাংসের টুকরা মিশিয়ে দেখে। পাশা দেখে অবাক যে, এরিকার মাংসের টুকরাগুলো হুবহু মিশে যায়। কোনটা মানুষের মাংস আর কোনটা গরুর বা খাসির মাংস একেবারে বোঝা যায় না। পাশা ভাবল, ‘তাহলে এখন থেকে মানুষের মাংস কেটে এভাবে গরুর মাংস বা খাসির মাংসের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। কেউ বুঝতে পারবে না। অবশেষে একটি উপায় পাওয়া গেল।’
আরেকটি সমস্যায় পড়ে পাশা। এরিকার মাংস হয়তো অন্য মাংসের সাথে মিশিয়ে বিক্রি করে দেবে কিন্তু এরিকার হাড্ডি, মাথা, হাত ও পায়ের আঙুল দিয়ে সে কি করবে? এগুলো মাংসের সাথে মিশিয়ে দিলে পাশা ধরা খেয়ে যাবে। পাশার আবার মাথায় হাত। কিন্তু মনে মনে সে ভাবল, ‘এরিকার হাড্ডি, মাথা, হাত ও পায়ের আঙুল তো বেশি হবে না। প্রয়োজনে সে এগুলো তার বাড়ির পেছনে একটা জায়গায় পুতে রাখবে। কিন্তু মাঝে মাঝে পাশার স্ত্রী বাড়ির পেছনে সবজি ও ফুলের বাগান করে। এতে পাশা একদিন না একদিন তার কাছে ধরা খেয়ে যাবে।
পাশা যে কোনভাবে ধরা পড়তে রাজী নয়। পাশার দৃষ্টিতে তখন তার ট্রাকের ভেতরে থাকা ইলেক্ট্রিক মিট গ্রাইন্ডারটি চোখে পড়ে। ইলেক্ট্রিক মিট গ্রাইন্ডারটির মাধম্যে সাধারণত মাংসকে একেবার চূর্ণ-বিচূর্ণ করে সসেজ এবং বার্গারের জন্য মাংস ভর্তা করে পুলি বানানো হয়। পাশা তখন ভাবল, ‘এরিকার হাড্ডি, মাথা, হাত ও পায়ের আঙুলগুলো ইলেক্ট্রিক মিট গ্রাইন্ডারের মাধ্যমে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে একটি থলেতে ভরে নদীতে মিশিয়ে দেবে। তাহলে আর কোন সমস্যা হবে না।’ যেই ভাবা সেই কাজ। পাশা এরিকার শরীরের মাংস টুকরা টুকরা করে ছোট মাংসের সাথে মিশিয়ে দেয়। এরপর ইলেক্ট্রিক মিট গ্রাইন্ডারের মাধম্যে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে একটি থলেতে আপাতত রেখে দেয়।
সকাল প্রায় সাতটা বাজে। পাশাকে বাড়ি যেতে হবে। পাশার খুব ঘুম পাচ্ছে। সকালে একটু ঘুমিয়ে নিয়ে পাশাকে আবার আজকে মাংসের ডেলিভারি দিতে হবে। পাশা বাড়িতে যায়। বাড়িতে গিয়ে দেখে তিন্নী সোফাতে সকাল সকাল রাগ করে বসে আছে। ‘কী হয়েছে? তোমার মন কি খারাপ?’ পাশা বলল। তিন্নী কিছুক্ষণ কিছু না বলে এরপর বলল, ‘তুমি কাল রাত্রে একবারও ফোন দাওনি। এতই ব্যস্ত ছিলে বুঝি?’ পাশা তার নিজের ভুল বুঝতে পারে। এরিকার কথা চিন্তা করতে করতে তিন্নীকে গত রাতে একবারও ফোন দেয়নি। ‘সরি আমার ভুল হয়ে গেছে তিন্নী। গত রাত্রে অনেক ব্যস্ত ছিলাম। আর এরকম কখনো হবে না। কথা দিলাম।’ বলে পাশা তার শয়নকক্ষে প্রবেশ করে।
ঘণ্টা চারেক ঘুমিয়ে পাশা আবার বেরিয়ে পড়ে। আজকে পাশাকে অনেকগুলো ডেলিভারি দিতে হবে। পাশা তার গাড়িকে নিয়ে ট্রাকের স্থানে যায়। গাড়িটি পার্ক করে পাশা তার ট্রাকটি নিয়ে ডেলিভারির উদ্দেশে রওনা হয়। একে একে পাশা সব ডেলিভারি শেষ করে। পাশার ট্রাক এখন একদম খালি। পাশা তার ট্রাকটি নিয়ে ওই অনাবাসিক এলাকায় যায়। ট্রাকটিকে ভালোভাবে পার্ক করে পাশা পেছনের দরজা দিয়ে ট্রাকের ভেতরে ঢোকে। পাশা তার ট্রাককে খালি দেখে একটু অবাক হয়। আবার মনে মনে স্বস্তিবোধ করে। পাশার চোখ ইলেক্ট্রিক মিট গ্রাইন্ডারের মাধ্যম মাংস চূর্ণ-বিচূর্ণ করে রাখা থলেটির দিকে যায়। পাশা থলেটি হাতে নিয়ে তার গাড়ির দিকে যায়। গাড়ির ভেতর থলেটি রাখে। ট্রাক ভালোভাবে বন্ধ করে তার গাড়ি চালু করে।
পাশা এবার ফ্লাসিং বে নদীর কিনারে যাবে থলেতে থাকা চূর্ণ-বিচূর্ণ মাংসের টুকরাগুলো নদীতে মিশিয়ে দিতে। নদীর কাছে একটি রাস্তায় পাশা তার গাড়িটি পার্ক করে। এরপর থলেটি নিয়ে নদীর কিনারে যায়। থলের মুখটি খুলে পাশা চূর্ণ-বিচূর্ণ মাংসের টুকরাগুলো নদীতে মিশিয়ে দেয়।
চলবে...
এসইউ/জেআইএম